• facebook
  • twitter
Monday, 23 December, 2024

বেআব্রু স্বাস্থ্যব্যবস্থা

এক মাসের বেশি সময় ধরে উত্তরবঙ্গে লাগাতার শিশুমৃত্যু ঘটে চলেছে। জ্বর, শ্বাসকষ্ট ও পেটের সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে জলপাইগুড়ি জেলাতে প্রথম শিশুমৃত্যুর ঘটনা ঘটে।

প্রতীকী ছবি (Photo: iStock)

এক মাসের বেশি সময় ধরে উত্তরবঙ্গে লাগাতার শিশুমৃত্যু ঘটে চলেছে। জ্বর, শ্বাসকষ্ট ও পেটের সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে জলপাইগুড়ি জেলাতে প্রথম শিশুমৃত্যুর ঘটনা ঘটে। পরে তা পাহাড়, সমতল, তরাই ও ডুয়ার্সে ছড়িয়ে পড়ে। রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্তারা শুরুতে আবহাওয়ার পরিবর্তনকেই এর জন্য দায়ী করেন।

পরে শিশুমৃত্যুর জন্য তাদের জন্মগত কিছু সমস্যা ও অপুষ্টিকেই কারণ হিসেবে বিশ্লেষণ করে উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ। পরিস্থিতি স্বাভাবিক বলে মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ দাবি করলেও বাস্তব একেবারেই আলাদা।

প্রতিদিনই শিশুদের নিয়ে ভিড় করছেন মা-বাবা অভিভাবকেরা। একই ছবি ধরা পড়েছে উত্তরবঙ্গের অন্যান্য সরকারি হাসপাতালগুলিতে। ইতিমধ্যে স্বাস্থ্য দফতরের একটি বিশেষজ্ঞ দল উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শন করে সন্তোষ প্রকাশ করলেও তাদের বক্তব্যের সঙ্গে বাস্তবের অনেক অমিল ধরা পড়ে যাচ্ছে।

এমনকী, বিষয়টি আড়াল করতে করোনা পর্বের মতোই শিশুমৃত্যু ও সংক্রমণের তথ্য ধামাচাপা দেওয়া হচ্ছে। শারদ উৎসবের সময় ষষ্ঠীর দিন থেকে রবিবার পর্যন্ত মোট ২০ টি শিশুর মৃত্যু হয়। তারপরও জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে কোনো বিবৃতি বা প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

প্রতিদিন সকাল থেকে আতঙ্কিত অভিভাবকদের ভিড় হাসপাতালে, কোলে সস্তান। জ্বরে আক্রান্ত প্রতিটি শিশুরই উপসর্গ শ্বাসকষ্ট। এখনও সংক্রমণের কারণ চিহ্নিত করে উঠতে পারেনি স্বাস্থ্যভবন। ‘অজানা জ্বর’ কথায় আপত্তি জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলে দিয়েছেন ‘ওটা সাধারণ জ্বর’।

যদি তাই হবে, তাহলে সামান্য জ্বর সারানোর পরিকাঠামোও এখনও গড়ে ওঠেনি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালগুলিতে? তথ্য ধামাচাপা দেওয়াটাকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছে প্রশাসন। গত পাঁচ সপ্তাহে শুধুমাত্র উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই শিশুমৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৫৭।

গোটা রাজ্যে এখনও পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৮৭ জন শিশুর। উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন সাধারণ মানুষ।

তাদের দাবি, সিনিয়র বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের ছুটি দেওয়ার পদ্ধতি সম্পর্কে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নেওয়া, শিশুমৃত্যু আটকাতে উপযুক্ত চিকিৎসা পরিকাঠামো তৈরি করা, শিশুমৃত্যুর হার কমাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং জনমানসে সচেতনতা গড়ে তুলতে সামাজিক ও গণমাধ্যমে নিয়মিত বুলেটিন প্রকাশ করতে হবে।

উৎসবের সময় জুড়ে শিশুদের স্বাস্থ্যের প্রতি সরকারের নিস্পৃহ দৃষ্টিভঙ্গি ভেঙে পড়া স্বাস্থ্যব্যবস্থার বেহাল দশাই প্রমাণ করেছে। সরকারি উদাসীনতার এই অপরাধের কোনো অজুহাত হয় না। মুখ্যমন্ত্রীই রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী, অথচ রাজ্যের স্বাস্থ্যব্যবস্থার এই করুণ হাল, উন্নয়নের দাবিকেই ব্যঙ্গ করে চলেছে।