ভবানীপুর বিধানসভা উপনির্বাচন কাটতে না কাটতেই, পশ্চিমবঙ্গে আবার চার চারটে বিধানসভার উপনির্বাচন শুরু হবে। ৩০ শে অক্টোবর, এই চারটে উপ নির্বাচন হতে চলেছে। আর এবারের এই নির্বাচন গুলো কিন্তু কলকাতায় নয়, পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় হচ্ছে।
নির্বাচন কমিশন সবগুলো নির্বাচন একসঙ্গে না করে, ধাপে ধাপে নির্বাচন করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটাকে বলে ফেইজড ম্যানারে করা। কেননা, একসঙ্গে নির্বাচন করলে, করোনা ছড়িয়ে পড়ার ভয় অনেক বেশি থাকে। সেই কারণে নির্বাচন কমিশনার এটাকে ফেইজড ম্যানারে করছেন।
এবারের ২০২১ য়ের এই উপ নির্বাচনের প্রচারে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হচ্ছে, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় হয়ে উঠেছেন নির্বাচনী প্রচারের প্রধান মুখ। আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এবং এব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই যে, তিনিই আজ পশ্চিমবঙ্গে সবচেয়ে বড় ব্রান্ড ইকুইটি।
এখন নির্বাচনী প্রচারে, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় হলেন সবচেয়ে বড় স্টার ক্যাম্পেনার। আর এটা তো আজ থেকে নয়, এ দৃশ্য ২০১৯ য়ের লোকসভা নির্বাচনের সময়ও দেখা গেছে।
সেইসময় প্রচারের ক্ষেত্রে, জেলায় জেলায় তৃণমূলের সংগঠনের ছায়ায়, মমতার পরেই যদি কারোর বাজার দর থাকে তিনি হলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর জেড প্লাস সিকিউরিটি থাকা স্বত্বেও, শুধু ডায়মন্ড হারবার এলাকায় নয়, ২০১৯ থেকে তিনি প্রত্যেকটি জেলায় গিয়ে ভোট প্রচারে নেমেছেন।
এবারে ২০২১’য়ের বিধানসভার নির্বাচনে, মমতার পরেই যিনি দ্বিতীয় ব্যক্তিত্ব এবং স্টার ক্যাম্পেনার হিসেবে সবথেকে বেশি যাঁর ডিমান্ড ছিল তিনি হলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এবারে কিন্তু তিনিও নামতে চলেছেন এই বিধানসভা উপনির্বাচনের প্রচারে। তিনি রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছেন সভা করতে।
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কিন্তু হোম ওয়ার্ক করে যান। তিনি প্রত্যেকটি জায়গার টপোগ্রাফি, ভূগোল-ইতিহাস, সমাজতত্ত্ব নিয়ে পড়াশোনা করেন। সেখানে কী কী বলতে হবে, না বলতে হবে সেগুলো নিয়েও তিনি অনেক ভাবনা-চিন্তা করেন।
নরেন্দ্র মোদী যেভাবে তাঁর প্রচারের রণকৌশল অবলম্বন করেন, এখন তৃণমূল কংগ্রেসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো বটেই, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও অত্যন্ত আধুনিক মানসিকতা নিয়ে নতুনভাবে এই প্রচারের মস্ত বড় রণকৌশল অবলম্বন করেছেন।
শুভেন্দু অধিকারী এখন বিজেপির সবথেকে বড় মুখ হতে চলেছেন। তার কারণ বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব কিন্তু তৃণমূল থেকে আসা অন্যান্য লোকেদের বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে না। আর সেটা কিন্তু শুভেন্দু অধিকারীকে দিচ্ছেন এবং আগামী দিনে পরবর্তী বিধানসভা নির্বাচনে মূল লড়াইটা কিন্তু অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বনাম শুভেন্দু অধিকারী হয়ে উঠতে পারে, যদি না শুভেন্দু অধিকারীকে বিজেপি এর মধ্যে অন্য কোনও পট পরিবর্তন ঘটে বা বিজেপির যদি নতুন কোনও মুখ আসে।
এখনও পর্যন্ত বিজেপি ঠিক করে রেখেছে, শুভেন্দু অধিকারীই হবে তাদের লম্বি রেস কা ঘোড়া। সুতরাং অন্য দল থেকে আসা বা তৃণমূল কংগ্রেস থেকে আসা ব্যক্তিত্বকে বিজেপির এতোটা আপন করে নেওয়ার ঘটনা কিন্তু সচরাচর ঘটে না। সেই কারণে শুভেন্দু অধিকারী খুব আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছেন।
বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের ওপরে যে অত্যাচার হচ্ছে, যে অন্যায় হচ্ছে, সে ব্যাপারে মুখরিত হয়ে শুভেন্দু কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনীতির সমালোচনা করছেন। তিনি বলতে চাইছেন, কেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চুপ করে আছেন?
আসলে নরেন্দ্র মোদীও কিন্তু চুপ করেই আছেন। কেননা, যেহেতু ব্যাপারটা অত্যন্ত সংবেদনশীল এবং যেহেতু দুটো সম্প্রদায়ের ভিতরের অভ্যন্তরীণ কলহ সেহেতু এ বিষয়টি নিয়ে খুব ভাবনা-চিন্তা করে দু-পক্ষকে এগোতে হবে বলেই শীর্ষ নেতারা মুখ খুলছেন না। সেখানে শুভেন্দু অধিকারী যদি এ ব্যাপারে খুব বেশি সক্রিয় হন তাতে এটা আবার কাউন্টার প্রোডাক্টিভ হয়ে যাবে না তো? এটাও একটা মস্ত বড় প্রশ্ন।
কেননা, তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে কুণাল ঘোষ কিন্তু ইঙ্গিত দিয়েছেন, এই ঘটনাটা কারা ঘটাচ্ছেন? এই ঘটনায় কাদের রাজনৈতিক লাভ হবে? সুতরাং এরকম ঘটনা সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি করে, এর মধ্যে কি কোনও ষড়যন্ত্র আছে?
এই সমস্ত ইঙ্গিত আজ দেওয়া হচ্ছে নির্বাচনটাকেও লক্ষ্য করে। কেননা, তাঁর মতে বাংলাদেশের এই হত্যাকাণ্ডও কিন্তু নির্বাচনের ভোট প্রচারের বিষয়বস্তু হয়ে উঠতে পারে। আর সেই চেষ্টাটা বিজেপি করছে। কেননা, বিজেপির এখনও মেরুকরণের রাজনীতি করে থাকে।
কাজেই, যেসব জায়গায় ভোট হচ্ছে, বিশেষ করে শান্তিপুরে তার প্রভাব ফেলার যে চেষ্টা চলছে বিজেপির তরফ থেকে সেটা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় মোকাবিলা করার চেষ্টা করছেন।
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মূল লক্ষ্য হচ্ছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দশ বছরের শাসনের সুফল এবং রাজ্য বাসীর নিরাপত্তা এবং উন্নয়ন নিয়ে। এখন এটাই দেখার, এই নির্বাচনী প্রচার গুলো শুরু হলে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কী কী বিষয় গুলো নিয়ে সমনে এগিয়ে আসেন এবং বিজেপি কিভাবে তার মোকাবিলা করে?
পুজো মিটতেই চার বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচনের প্রচারে ঝাঁপাচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস। আগামী ২৩ অক্টোবর থেকে উপনির্বাচনের প্রচার শুরু করছেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
২৩ তারিখ উত্তর থেকে দক্ষিণ জোড়া সভা দিয়ে প্রচার শুরু করবেন তিনি। সেদিন উত্তরের খড়দহের পাশাপাশি দক্ষিণের গোসাবায় সভা করার কথা রয়েছে অভিষেকের। ২৫ তারিখ দিনহাটায় প্রচার করবেন তিনি। ২৬ অক্টোবর শান্তিপুরে একাধিক জনসভা করার কথা রয়েছে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। সব মিলিয়ে উপনির্বাচনের প্রচারে ঝড় তোলার কাজটা কার্যত ২৩ অক্টেবর থেকেই শুরু করে দেবেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক।
দুর্গাপুজো শেষ। কালীপুজোর আগেই বাংলায় ফের বাজবে ভোটের বাদ্যি। আর সেই ভোট প্রচারে এবার ঝাঁপাতে চলেছে তৃণমূল কংগ্রেস। আগামী ৩০ অক্টোবর বাংলার চার কেন্দ্রে উপনির্বাচন। বিধানসভা নির্বাচনে বিপুল সাফল্যের পর গত মাসে প্রথম পর্বের উপনির্বাচনে ৩-০ ফলাফলে জিতেছে তৃণমূল কংগ্রেস।
এবারেও ৪-০ করতে আসরে নামছে তৃণমূল কংগ্রেস। সেই লক্ষ্যেই এবার প্রচারের ঝাঁঝ বাড়াতে চলেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আর এই প্রচারে দলের শীর্ষ নেতারাও যাবেন বলেই দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে।
জানা গিয়েছে, আগামী ২৩ অক্টোবর থেকে ওই চার কেন্দ্রের উপনির্বাচনের প্রচার শুরু করতে চলেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। তৃণমূল কংগ্রেসের তরফ থেকে তারকা প্রচারকদের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই উত্তরবঙ্গের দিনহাটায় প্রচারে নেমে পড়েছেন রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম।
সদ্য বিধানসভা নিবার্চনে দিনহাটায় হেরেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। এবার সেই আসন ছিনিয়ে নিতে আত্মবিশ্বাসী গোটা দল। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রচারের পর দিনহাটার ছবিটা বদলাতে শুরু করবে বলেই বিশ্বাস দলীয় কর্মীদের। এর আগে, ভবানীপুর উপনির্বাচনেও দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জেতাতে প্রচারে নেমেছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
ভবানীপুরে রেকর্ড ভোটে জেতেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার দিনহাটা, শান্তিপুর, খড়দহ ও গোসাবাও ছিনিয়ে নিতে আসরে নামতে চলেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।