• facebook
  • twitter
Saturday, 23 November, 2024

আশ্বিনের শারদসন্ধ্যায় দিল্লি চলোর ডাক দিলেন মমতা

'জাগো বাংলা’র উৎসব সংখ্যা প্রকাশে এসে ইন্দ্রনীল সেন,নচিকেতা চক্রবর্তী,বাবুল সুপ্রিয়র সঙ্গে গলা মিলিয়ে ‘জাগো দুর্গা’ গান গেয়ে শক্তির আরাধনা মুখ্যমন্ত্রীর।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়. (Photo:SNS)

বুধবার দলীয় মুখপত্র ‘জাগো বাংলা’র উৎসব সংখ্যার প্রকাশে এসে ইন্দ্রনীল সেন , নচিকেতা চক্রবর্তী, বাবুল সুপ্রিয়র সঙ্গে গলা মিলিয়ে ‘জাগো দুর্গা’ গান গেয়ে শক্তির আরাধনা সারলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই অনুষ্ঠানেই তিনি লখিমপুর প্রসঙ্গ টেনে এনে কেন্দ্রকে আক্রমণও করেছেন।

এদিন জাগো বাংলার যে উৎসব সংখ্যাটি প্রকাশিত হয়েছে, তার সূচনা নিবন্ধেই মমতা ‘দিল্লি চলো’র ডাক দিয়েছেন। সব মিলিয়ে উৎসবে এদিন উৎসবের মঞ্চেই কেন্দ্রবিরোধী সুর ভাজলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। লখিমপুর কাণ্ডে উত্তাল রাজা রাজনীতি।

মঙ্গলবারই নিহত কৃষকদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছেন তৃণমূল সাংসদেরা। প্রশাসনের বাধা পেরিয়ে, ঘুরপথে পরিচয় গোপন করে কোনওরকমে কৃষকদের কাছে পৌঁছতে পেরেছেন দোলা সেন, কাকলি ঘোষ দস্তিদার, প্রতিমা মণ্ডল প্রমুখ তৃণমূল সাংসদরা।

বুধবার নজরুল মঞ্চে দলীয় মুখপত্র ‘জাগো বাংলার শারদ সংখ্যা প্রকাশ অনুষ্ঠানে নেত্রী জানালেন, এখনও পর্যন্ত বিরোধীদের মধ্যে তৃণমূলই একমাত্র দল যারা নিহত কৃষকদের বাড়িয়ে পৌঁছতে পেরেছেন। এটা একটা বড় ব্যাপার।

আশ্বিনের শারদসন্ধ্যায় মহালয়ার দিনে প্রকাশিত জাগো বাংলা’র শারদ সংখ্যার প্রথম প্রবন্ধেই দিল্লি চলোর ডাক দিয়েছেন মমতা সেখানে লিখেছেন, দেশকে বাঁচানোই এখন একমাত্র চ্যালেঞ্জ। সেই প্রবন্ধের ছত্রে ছত্রে উঠে এসেছে, বিজেপিকে উৎখাত করতে তৃণমূলের লড়াইয়ের কাহিনি।

সিপিএম-এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কথাও রয়েছে সেই প্রবন্ধে। নেত্রী লিখেছেন বিজেপিকে রুখতে সবদলকে একসঙ্গে লড়াই করতে হবে। সেখানে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে মমতা উল্লেখ করেছেন, কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে জোটের মঞ্চের কথা তিনি ভাবছেন না পদের জন্যও তিনি লালায়িত নন।

কিন্তু একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, বাস্তব চিত্র হল কংগ্রেস কেন্দ্রের বিজেপিকে করতে দু’টি লোকসভা নির্বাচনেই ব্যর্থ হয়েছে। তাই মমতার আবেদন, কর্মসূচির ভিত্তিতে, নীতির ভিত্তিতে সব বিজেপি বিরোধী দলগুলির একজোট হওয়া।

রেলমন্ত্রী হিসেবে মমতা নিজের কাজ রেলব্যবস্থাকে কতটা বদলে দিয়েছে তারও উল্লেখ রয়েছে প্রবন্ধে। একুশের ভোটে সর্বশক্তি দিয়ে বিজেপিকে বাংলায় রুখে দেওয়া তৃণমূলই যে এই মুহূর্তে দেশে বিজেপির বিরুদ্ধে মূল শক্তি বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেকথার ইঙ্গিত রয়েছে এই প্রবন্ধে।

এদিন মা দুর্গার শক্তি আবাহনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মঞ্চে গেয়েছেন জাগো দুর্গা ,জাগো দশপ্রহরণধারিণী, অভয়া শক্তি বলপ্রদায়িনী…। এই গানটিকে কার্যত মমতার স্কেলে, তার সঙ্গে গলা মিলিয়েছেন ইন্দ্রনীল সেন, নচিকেতা চক্রবর্তী। গান গাওয়ার সময় বাবুল সুপ্রিয়কে মঞ্চে ডেকে নেন মুখ্যমন্ত্রী।

তবে কারোরই গানটি মুখস্ত না থাকায় অনেকবার হোঁচট খেতে হল সবাইকে। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, গত বছর ইজেডসিসিতে বিজেপির দুর্গাপুজোর উদ্বোধনী সঙ্গীত গেয়েছিলেন বাবুল সুপ্রিয়। তৃণমুলে যোগদানের পরে প্রথম প্রকাশ্যে কোনও অনুষ্ঠানে মমতার সঙ্গে একমঞ্চে গাইলেন বাবুল।

এদিন বাবুলের একক পরিবেশনায় ছিল ‘আমি বাংলায় গান গাই’ সেই গান গাইতে বেশ কিছু ছত্র ওলোট পালোট করে ফেললেন বাবুল সুপ্রিয়। কিছু ছত্র বাদও দিয়ে গেলেন। যা থেকে বোঝা গেল গানে তিনি ‘আমি বাংলাকে ভালোবাসি’ বললেও বাস্তবে হয়তো এখনও বাংলাকে পুরোপুরি ভালোবেসে উঠতে পারেননি।

তবে এই মুহূর্তে তিনি যে বাংলার জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে যথেষ্টই ভালোবাসেন, সেকথা বোঝা গেল, তিনি যখন মুখ্যমন্ত্রীকে কি-বোর্ড জাতীয় একটি ছোট বাদ্যযন্ত্র উপহার দিলেন। প্রসঙ্গত, গত ২৩ জানুয়ারি ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে নেতাজি জয়ন্তীর অনুষ্ঠানে একটি বিশেষ ধরনের কি – বোর্ড দেখেছিলেন মমতা।

এদিন তেমনই একটা বাদ্যযন্ত্র মমতাকে দিলেন বাবুল। মমতা এদিন প্রকাশ্যে বললেন এটা আমার খুব কাজে লাগবে। বাবুলকে বলেছিলাম, ও আমার জন্য এনেছে। আগামীদিনে বাংলা গানের চর্চাকে আরও ভালোভাবে করার জন্য পরিকল্পনা করতে চান মুখ্যমন্ত্রী।

সেই উদ্যোগে সামিল হবেন ইন্দ্রনীল, নচিকেতা, বাবুল সুপ্রিয়র মতো শিল্পীরা। বাংলা গানের উন্নতিতে দীপাবলীর পরে জলসা বসানোর কথাও শোনা গেল মুখ্যমন্ত্রীর গলায়। বুধবার মহালয়ার দিনে মুখ্যমন্ত্রীর লেখা এবং সুর করা আটটি গানের ‘জননী’ নামের অ্যালবামও প্রকাশ করা হয় নজরুল মঞ্চে।

এই গানগুলির মাধ্যমেও নারীশক্তির জয়গানই তুলে ধরা হয়েছে। সব মিলিয়ে মহালয়াতে কথায়-সুরে শক্তি আরাধনাই সারলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন নাকতলা উদয়ন সংঘের পুজা উদ্বাধন করেন মুখ্যমন্ত্রী। সঙ্গে ছিলেন শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও পুজোর কর্ণধার বাপ্পাদিত্য দাশগুপ্ত।