পুজোর পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি খোলার একটি সম্ভাবনার কথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন বটে, কিন্তু করোনা সংক্রমণজনিত পরিস্থিতির তেমন উল্লেখযোগ্য উন্নতি এখনও দেখা যাচ্ছে না।
সুতরাং এই পরিপ্রেক্ষিতে স্কুলগুলিতে আবার পঠনপাঠন শুরু করা একটা ঝুঁকির হয়ে যাবে কিনা তা নিয়ে শিক্ষাদফতর উদ্বেগের মধ্যে আছে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, পুজোর পর সার্বিক কোভিড পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে স্কুল খোলা এবং একদিন অন্তর অন্তর ক্লাস চালু করার কথা বিবেচনা করা হবে।
কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী যখন এই সম্ভাবনার কথা বলেছিলেন, তখন করোনা পরিস্থিতি যা ছিল এখনও তাই আছে। স্বাস্থ্য দফতরের প্রতিদিনের বুলেটিন বলে দিচ্ছে, প্রতি ২৪ ঘণ্টায় গড়পরতা ৭০০-র ওপর মানুষ নতুন করে কোভিডে আক্রান্ত হচ্ছেন। মৃত্যুর সংখ্যা হ্রাস পেলেও তা প্রতিদিন দশের নীচে নামছে না।
সুতরাং এই অবস্থায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিকে চালু করে দেওয়া কতটা যুক্তিযুক্ত হবে তা বোঝা যাচ্ছে না চিকিৎসকেরা এখনও করোনার তৃতীয় ঢেউ আসে কিনা সেদিকে তাকিয়ে আছেন। আসন্ন দুর্গাপুজো, কালীপুজো, দীপাবলি উপলক্ষে বহু মানুষ রাস্তায় বের হবেন–করোনা নিয়ন্ত্রণজনিত বিধিনিষেধ যা এখনও কিছু চালু আছে, তা আর তখন সুযোগে, কোভিডের ছোবল থাকবে না।
সুতরাং ‘বিধি আরও বৃদ্ধি পায় আলগা’ হওয়ার এই কিনা, তা নিয়ে চিন্তায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা। তাদের মধ্যে কেউ কেউ আবার বলছেন, উৎসবের মাস শেষ হলে বোঝা যাবে, কোভিড পরিস্থিতি হাল কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়ে। তাই তাদের মতে স্কুলগুলি খোলার পরিস্থিতি এখনও তৈরি হয়নি।
এই অবস্থায় অভিভাবকেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পক্ষে না বিপক্ষে তা নিয়ে একটি সমীক্ষায় জানা গেছে, অধিকাংশ অভিভাবক এবং মা-বাবারা চান না, করোনা সংক্রমণ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস না পেলে স্কুল খোলা হোক বা চালু করা।
তারা বলেন, পড়াশোনার বিপুল ক্ষতি সে তো হয়েছেই, কিন্তু করোনার তাণ্ডব থাকাকালীন ছাত্রছাত্রীদের স্কুলে পাঠালে তাদের বিপদের মুখে ঠেলে দেওয়া হবে। স্কুলে ছাত্রছাত্রীরা অবাধে মেলামেশা করবে, খেলাধুলোও করবে-এই অবস্থায় সংক্রমণের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়াটা স্বাভাবিক।
স্কুলে করোনা বিধিনিষেধ পুরোপুরি মানা সম্ভব নয়। ছাত্রছাত্রীদের খাঁচায় আটকে রাখাও চলবে না। করাও যায় শিক্ষকমহলও বলছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি খুললে, ছাত্রছাত্রদের পক্ষে করোনা বিধি যথাযথভাবে পালন করা সম্ভব হবে না আবার করোনা রাজ্য বা দেশ থেকে বিদায় নিলে স্কুলগুলি খুলবে তার জন্য দীর্ঘকাল ধরে অপেক্ষা তাছাড়া বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, করোনা মুক্ত আমরা কবে হব তা পুরোপুরি অনিশ্চিত।
তাই শিক্ষকদের একটি বড় অংশ মনে করেন, ঝুঁকি নিয়ে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলি খুলতে হবে। কবে করোনা বিদায় নেবে তার জন্য অনন্তকাল ধরে অপেক্ষা করা যায় না আবার এই অবস্থায় অভিভাবকেরা ছাত্রছাত্রীদের স্কুল-কলেজে না পাঠালে, আরেক সমস্যার সৃষ্টি হবে।
শিক্ষাদফতর থেকে অবশ্য বলা হয়েছে, পুজোর পর স্কুল খোলার প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নর কাজ চলছে–পরিকাঠামোর উন্নতিতে সবরকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি খোলার দাবিতে ছাত্ররাও পথে নেমেছে।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা এই দাবি নিয়ে সম্প্রতি নবান্ন অভিযান করলে, কয়েকজন পড়ুয়াকে গ্রেফতার করা হয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের এক অংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার দাবিতে নবান্ন অভিযানের ডাক দিয়েছিলেন। তাতে বেশ সাড়া পড়েছিল।
ছাত্রদের তরফে বলা হয় ভবানীপুর উপনির্বাচনের জন্য নবান্নে কেউ নেই। তাই ছাত্রদের তরফে চারজন প্রতিনিধি ডিসি (সাউথ) -এর অফিসে গিয়ে তাদের দাবিপত্র জমা দেন। পড়ুয়ারা প্রশ্ন তুলেছেন, উপনির্বাচন হতে পারে, তাহলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি কেন খোলা হবে না?
ছাত্ররা তাদের দাবি সম্বলিত কাগজপত্র উচ্চশিক্ষা দফতরেও পাঠিয়ে দেন। তাদের দাবি, শিক্ষামন্ত্রী সার্বিক অবস্থা পর্যালোচনা করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি খুলতে ব্যবস্থা নিন। সব খুলে যাচ্ছে, তাহলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি কেন বন্ধ থাকবে?