জাতীয় সুরক্ষার প্রশ্ন তুলে পেগাসাস কাণ্ডে বিস্তারিত হলফনামা সুপ্রিম কোর্টে দিতে নারাজ কেন্দ্র। এমনটাই এদিন জানানাে হয়েছে কেন্দ্রের তরফে দেশের শীর্ষ আদালতে। যদিও এতদিন কেন্দ্রের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছিল, পেগাসাস বিতর্কে তাদের কিছু আড়াল করার নেই।
ইতিমধ্যে পেগাসাস কাণ্ডের তদন্ত চেয়ে একাধিক পিটিশন হয়েছে দেশের শীর্ষ আদালতে। কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের কথা সুপ্রিম কোর্টে জানান সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা। এই হলফনামা পেশ করার জন্য সুপ্রিম কোর্টে কেন্দ্র দু’বার সময় নিয়েছিল।
কিন্তু তারপরও এদিন শীর্ষ আদালতকে কেন্দ্র জানায়, পেগাসাস নিয়ে হলফনামা দেওয়া কেন্দ্রের পক্ষে সম্ভব নয়। কারণ এর মধ্যে জাতীয় সুরক্ষার প্রশ্ন জড়িত। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এন ভি রামনাথ নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চের সামনে এদিন কেন্দ্রের তরফে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা অবস্থান ব্যাখ্যা করেন।
পেগাসাস কাণ্ডে কী ধরনের সফটওয়ার ব্যবহার করা হয়েছে, তা যাতে সন্ত্রাসবাদীরা জেনে যেতে না পারেন, এ কারণ দেখিয়ে সলিসিটর জেনারেল হলফনামা দিতে অস্বীকার করেন। এই নিয়ে এদিন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি তার ক্ষোভ উগড়ে দেন।
এই প্রসঙ্গে প্রধানবিচারপতি সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতাকে বলেন, মি. মেহতা শেষবার আমরা একটা হলফনামা চেয়েছিলাম বলেই আপনাদের সময় দিয়েছিল। কিন্তু এখন দেখছি আপনি অন্য কথা বলছেন।
এদিন বিচারপতিরা অন্তর্বর্তী আদেশ ঘােষণা স্থগিত রাখেন। ফলে এই নিয়ে দুতিনদিনের মধ্যে তারা তাঁদের বক্তব্য জানাবেন তবে এর মধ্যে হলফনাম দেওয়ার জাতীয় সুরক্ষার বিষয়ে কেন্দ্র তাদের মত বদল করল কিনা, তাও আদালতকে জানানাের নির্দেশ দেন।
এদিন শীর্ষ আদালত সরকারকে মনে করিয়ে দেয়, শুধু সাধারণ ব্যক্তিদের ফোনে আড়ি পাতার অভিযােগ সম্পর্কে কেন্দ্রকে হলফনামা দিতে বলা হয়েছিল। বিচারপতি সূর্যকান্ত বলেন, প্রশ্ন আগের বারেও উঠেছিল। সেক্ষেত্রেও আমরা বলেছিলাম, এমনভাবে কেউ হস্তক্ষেপ করবে না, যাতে জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষতি হয়। সাধারণ মানুষের ফোনে আড়ি পাতা হয়েছে, সে কারণেই হলফনামা পেশ করার কথা বলা হয়েছিল।
কারণ ফোন হ্যাক করার অভিযােগ এ সছে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে। আমরা দেখতে চাইছি কোনও এজেন্সির কি কোনও এমন ক্ষমতা আছে ফোনে আড়ি পাতার? এটি বৈধ, না অবৈধ, সেটি আমরা দেখতে চাইছি।
এরপর সলিসিটর জেনারেল মেহতা বলেন, গােপনীয়তা লঙ্ঘিত হচ্ছে এমন অভিযােগ থাকলে সেটা সত্যিই সিরিয়াস বিষয়। আমরা তদন্ত চাই এবং সেই বিষয়ে রাজিও রয়েছি। বিশেষজ্ঞ কমিটি তদন্ত করবে। কিন্তু এতেও শীর্ষ আদালত সন্তুষ্ট হয়নি।
বিচারপতি বলেন, কমিটি তৈরি করাটা আমাদের কাছে কোনও ইস্যু নয়। হলফনামা আমরা চেয়েছি, কারণ এ বিষয়ে আপাদের অবস্থান জানার জন্য। কারণ তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী সংসদে বলেছেন, ফোনের বিষয়টি পুরাে টেকনিক্যাল। এর বিশ্লেষণ না করে তাঁর পক্ষে বলা সম্ভব নয়।
সেই সঙ্গে তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী আরও দাবি করেছে, ফোন হ্যাক হয়েছে কিনা, তা টেকনিক্যাল কমিটিই বলতে পারবে। তার পক্ষে বলা সম্ভব নয়। সেই কারণেই সরকারের কাছে হলফনামা চাওয়া হয়েছিল বলে এদিন শীর্ষ আদালত জানিয়েছে।