সুপ্রিম কোর্ট অনেক ঝড় কাটিয়ে এসেছে,তাই বর্তমান গােলমালও সে কাটিয়ে উঠবে বলেই আশা করা যায়।তবে প্রতিটা সংকটেই বিশ্বাসযােগ্যতার কিছুটা ক্ষয় হয়।দেশের এই একমাত্র প্রতিষ্ঠানের ওপর মানুষের এখনও বিশ্বাস রয়েছে,যে প্রতিষ্ঠান তার অতীত গৌরব বজায় রাখার জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।সুপ্রিম কোর্ট এখনও মানুষের আস্থা ও বিশ্বাসের প্রতীক।চারদিকে ভেসে বেড়ানাে অপ্রীতিকর অভিযােগের গুণাগুণ নিয়ে কোনও মন্তব্যের মধ্যে না গিয়েও বিচারপতিদের সংযত আচরণ ও মানসিক আবেগের উর্ধ্বে ওঠার কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া যায়।যার তীব্র প্রতিক্রিয়া হতে পারে তা পরিহার করাই বাঞ্ছনীয়।কড়া কথা,তড়িঘড়ি সিবিআই,আইবিও দিল্লি পুলিশকে তলব থেকে প্রতীয়মান হয় ‘আগুন ছাড়া ধোঁয়া হয় না’।আদালতের গৃহীত ব্যবস্থা থেকে ভাবাবেগে আঘাত লাগা ও সঠিকভাবে ধান্ধার মােকাবিলা করার অক্ষমতা প্রকাশ পাচ্ছে।সমস্যার গভীরে পৌছনাের আগেই ‘তদন্ত তদন্ত ’ বলে হুমকিসুলভ মনােভাব বর্তমান রাজনৈতিক ব্যবস্থার কুৎসিত চেহারাকেই তুলে ধরছে।প্রতিষ্ঠানের ভাষাকেও তা প্রভাবিত করছে যা এতকাল অস্বাস্থ্যকর প্রভাব থেকে মুক্ত ছিল।
এটা সত্যি যে যৌন হয়রানির অভিযােগকে হাল্কাভাবে নেওয়া যায় না, কিন্তু ন্যায্য প্রক্রিয়ার গুরুত্বকে কখনই অস্বীকার করা যায় না,কারণ অভিযােগ মিথ্যা বলে যতই যুক্তি দেখানাে হােক একজন উচ্চ পদাধিকারী এর শিকার।এব্যাপারে অভ্যন্তরীণ কমিটি একটা দুর্বল সমাধান-মাঝে মাঝে বেঞ্চে যারা অধিষ্ঠান করেন তারা নিরপেক্ষ বলে গণ্য হন না।আর সেই তদন্ত কমিটি কার কাছে রিপাের্ট পেশ করবে?সম্ভবত এটা তাড়াহুড়াে করে ব্যবস্থা নেওয়ার ঘটনা অন্তত প্রতিকুল প্রতিক্রিয়া থেকে এটা বােঝা যাচ্ছে বিষয়টা নিয়ে আদালতের বাইরে যখন খুব হইচই নেই,তখন একটা আরও ভারসাম্যযুক্ত কমিটি গঠন করা যেতে পারত।আইন পেশায় এমন অনেক সদস্য আছেন যাদের প্রভুত বিশ্বাসযােগ্যতা রয়েছে।তাদের মতামত ব্যাপকভাবে শ্রদ্ধার সঙ্গে গৃহীত হত। অনিবার্য কারণেই যৌন হয়রানি সম্পর্কে অভিযােগকারী মহিলার পক্ষে কিছুটা সহানুভূতি থাকবেই আদালত সেটা জানে না এমন নয়।যেক্ষেত্রে স্বচ্ছতাই মুল বিষয় সেখানে অভ্যন্তরীণ তদন্ত তাে সমালােচনা ডেকে আনবেই।
এর পরবর্তী ঘটনাবলিও যথেষ্ট বিচলিতকর।এর মধ্যে গড়াপেটার গন্ধও পাওয়া যাচ্ছে।আবারও সেই আগুন ছাড়া দেয়া হয় না তত্ত্বের পুনরাবৃত্তি।এটা আদালতের ওপর কুৎসিত ছায়া ফেলেছে। এর সঙ্গে খুব নামি নয় এমন একটি শিল্পগােষ্ঠী জড়িয়ে যাওয়ায় পরিস্থিতির গভীরতায় একটা ভিন্নমাত্রা যুক্ত হয়েছে এই ব্যাপারে আইনমন্ত্রকের নীরবতাও লক্ষ্যণীয়।এ ব্যাপারে একটা ব্যাপক ভিত্তির তদন্তের প্রয়ােজন আছে এই প্রক্রিয়ায় কোনও ব্যক্তিগত বিদ্বেষের স্থান থাকা উচিত নয়। আইন ব্যবস্থার (শুধু আদালত নয়) অন্তত জনগণের কাছে একটা দায়বদ্ধতা আছে,যারা এই ব্যবস্থাকে খুবই শ্রদ্ধার চোখে দেখে থাকে।এই শ্রদ্ধাটাই এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি প্রয়ােজন।