• facebook
  • twitter
Saturday, 23 November, 2024

ভােট ফিরল ভবানীপুরে প্রত্যাশিতভাবে প্রার্থী পদে ফিরলেন মমতা

পশ্চিমবঙ্গে সাংবিধানিক সঙ্কট তৈরি হতে পারে সেকথা মাথায় রেখে ভবানীপুর বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের দিনক্ষণ ঘােষণা করেছে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Photo: IANS)

পশ্চিমবঙ্গে সাংবিধানিক সঙ্কট তৈরি হতে পারে সেকথা মাথায় রেখে ভবানীপুর বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের দিনক্ষণ ঘােষণা করেছে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন। রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস এবং বামেরা উপনির্বাচনের দিনক্ষণ ঘােষণায় খুশি হলেও বঙ্গ বিজেপির শীর্ষ নেতারা ভােটের দিনক্ষণ ঘােষণা হওয়ায় রীতিমত বিরক্ত।

শুধু ভবানীপুর নয়, সামশেরগঞ্জ এবং জঙ্গিপুরেরও নির্বাচনের নির্ঘণ্ট প্রকাশ করা হয়েছে। প্রত্যাশিতভাবে ভবানীপুর বিধানসভা কেন্দ্রের প্রার্থী হচ্ছেন তৃণমূল সুপ্রিমাে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নির্বাচন কমিশন ভােটের দিনক্ষণ ঘােষণা করার সঙ্গে সঙ্গেই তৃণমূল কংগ্রেসের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই ভবানীপুরে তৃণমূলের প্রার্থী।

রবিবার আনুষ্ঠানিকভাবে তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে তিনটি বিধানসভার প্রার্থী ঘােষণা করা হয়েছে। প্রত্যাশা মতােই ভবানীপুর কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন মমতা বন্দ্যোপাধায়। কিন্তু জঙ্গিপুর এবং সামশেরগঞ্জ থেকে কারা প্রার্থী হবেন তা নিয়ে যথেষ্ট জল্পনা ছিল।

এদিন রাজ্যের শাসকদলের পক্ষ থেকে জানানাে হয়েছে, জঙ্গিপুর থেকে প্রার্থী হচ্ছেন জাকির হােসেন, আমিরুল ইসলাম প্রার্থী হচ্ছেন সামশেরগঞ্জ থেকে। অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র তিনি এবার বিধানসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি। তাই অনেকে ভেবেছিলেন তিনি হয়তাে মুর্শিদাবাদের এই দুটি আসনের কোনও একটি প্রার্থী হতে পারেন।

কিন্তু তৃণমূল এই দুটি কেন্দ্রে প্রার্থীপদ ঘােষণা করে দেওয়ায় সেই জল্পনার অবসান হল। ‘বাংলা তার মেয়েকেই চায়’, এই শ্লোগানকেই সামনে রেখে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে ঝাপিয়েছিল তৃণমূল। সেই সঙ্গে ছিল স্বাস্থ্যসাথী কার্ড সহ অনেক জনমুখী প্রকল্প। এবং তার সঙ্গে ‘দুয়ারে সরকার’-এর সাফল্য তৃণমূল কংগ্রেসকে বিপুলভাবে ক্ষমতায় ফিরতে সাহায্য করে।

কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়ায় নন্দীগ্রাম। ভবানীপুর আসনটি তিনি ছেড়ে দেন শােভনদেব চট্টোপাধ্যায়কে। কিন্তু অল্প ভােটের ব্যবধানে নন্দীগ্রাম তৃণমূলের হাতছাড়া হয়। যদিও তৃতীয়বার মুখ্যমন্ত্রী হতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তাতে কোনও অসুবিধা হয়নি।

ভােটের দিনক্ষণ ঘােষণা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মাঠে নেমে গিয়েছেন তৃণমূল নেতারা। ভবানীপুরেও ‘খেলা হবে’ এই শ্লোগানে দেওয়াল লিখতে দেখা যায় রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিধানসভা কেন্দ্রে নির্বাচনী প্রচার করার জন্য নেতাদের হুড়ােহুড়ি পড়ে গিয়েছে।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভবানীপুর বিধানসভা কেন্দ্রে প্রার্থী হলেও গােটা রাজ্য জুড়ে প্রচারে নেমেছে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। দেখলে মনে হবে ভবানীপুর নয়, গােটা পশ্চিমবঙ্গ যেন একটা বিধানসভা এবং তার প্রার্থী মমতা। তৃণমূল কংগ্রেসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে একটা প্রতিষ্ঠান। তিনি নিজেকে বটবৃক্ষের মতাে জায়গায় নিয়ে গিয়েছেন।

আর সেখানে আশ্রয় নেওয়া নেতারা কেউ মন্ত্রী, কেউ সাংসদ, কেউ বা অন্যস্তরের জনপ্রতিনিধি হয়েছেন। ফলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ঘিরে শাসকদলের নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি আমজনতারও আবেগ কম নয়। বাই মমতার কেন্দ্রে ভােটের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন। একমাত্র মমতাই পারেন যুযুধান দুই প্রতিপক্ষের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটাতে, আবার তিনিই পারেন যুযুধান তার দুই প্রতিপক্ষকে মিলিয়ে দিতে।

একটু সহজ করে বললে, ২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনে মমতার কারণেই বাম কংগ্রেস এক ছাত্রের তলায় এসেছিল। ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে বাম-কংগ্রেসের সাজানাে সংসার আরও পাকাপােক্ত হয়। যদিও মমতার সামনে তাদের দু’জনের যৌথ ফসল হয় না।

আবার এই মমতার বিজয়রথই বাম-কংগ্রেসের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটাচ্ছে এই নির্বাচনে। সব মিলিয়েই মমতাই পারেন মিলিয়ে দিতে, আবার তিনিই পারেন বিচ্ছেদ ঘটাতে। তিনটি কেন্দ্রে নির্বাচন হলেও মধ্যমণি সেই মমতা। যদিও মমতার ভােটকে এত সহজে মসৃণ করতে রাজি নয় বিজেপি সেকারণে কাটা বেছানাের জন্য বিজেপি আদালতে যাওয়ার তােড়জোড় শুরু করেছে।

সে কারণে বড় মাপের আইনজীবীর সঙ্গে শলাপরামর্শ করছে বিজেপি। তারা চাইছে এই মামলা আদালতের নির্দেশে সাংবিধানিক বেঞ্চে নিয়ে যেতে। আইনজীবী সাংসদ মহেশ জেটমালানিকে সামনে রেখে বিজেপি তৈরি হচ্ছে বলে জানা যাচ্ছে।

গুজরাত দাঙ্গার একাধিক মামলায় সুপ্রিম কোর্টে নরেন্দ্র মােদি এবং অমিত শাহের আইনজীবী ছিলেন মহেশ। পরে তিনি রাজ্যসভার সাংসদ হন। সব মিলিয়ে ভবানীপুর বিধানসভার উপনির্বাচন ঘিরে উত্তাপ বাড়ছে।

একদিকে বিজেপি যেমন আইনের পথে হাঁটার কথা ভাবছে, অন্যদিকে দিনেশ ত্রিবেদী, তথাগত রায়, রুদ্রনীল ঘােষ, ভারতী ঘােষের নামও ভবানীপুর কেন্দ্রের জন্য বিজেপি’র সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় থাকছে বলে জানা যাচ্ছে। তবে, যাই হােক না কেন, প্রচারের সব আলাে শুষে নেবে মমতাই। এদিকে ভবানীপুরে কংগ্রেস প্রার্থী না দিলেও সিপিএম তৈরি বলে জানা যাচ্ছে।

মঙ্গলবার এই নিয়ে বামফ্রন্টের সমস্ত শরিক দলকে বৈঠকে ডেকেছে সিপিএম। কলকাতা জেলা কমিটিকে এবিষয়ে তৈরি থাকতে বলা হয়েছে। সিপিএম সিদ্ধান্ত নিয়েছে, কারও সঙ্গে জোট ভাঙার দায় তারা নেবে না, তাই কংগ্রেস নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত দেখে তারা পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করবে।

অন্যদিকে, ফরওয়ার্ড ব্লক জানিয়েছে, সংযুক্ত মাের্চার নামে কোনও ফ্রন্টে তারা থাকবে না। এবং কংগ্রেসের সঙ্গে জোটে ফরওয়ার্ড ব্লকের আপত্তি রয়েছে। পরিস্থিতি বেগতিক দেখলে ফরওয়ার্ড ব্লক ভবানীপুরে আলাদা প্রার্থী দিতে পারে, এমনটাও শােনা যাচ্ছে।

সব মিলিয়ে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার তিনটি নির্বাচন বিরােধীদেরকে আরও বেশি ছন্নছাড়া করে দিয়েছে তৃণমূল। আর এর সবকিছুই সম্ভব হয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য। ফলে রাজ্য রাজনীতি এবং জাতীয় রাজনীতি আবর্তিত হচ্ছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তার জনপ্রিয়তার কথা মাথায় রেখে।