প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আগে কোন প্রধানমন্ত্রী দেশে খেলাধুলোর সংস্কৃতি তৈরি করার অঙ্গীকার নিয়েছেন কিনা বা দেশের প্রত্যেক অভিভাবকের কাছে আবেদন করেছেন কিনা, যে সকলে যেন খেলাধুলা করতে ইচ্ছুক শিশুদেরকে উৎসাহিত করেন তা আমার কাছে স্পষ্ট নয়। প্রধানমন্ত্রী কেবলমাত্র বাবা-মাকে খেলাধুলায় উৎসাহিত করতে বলেননি উপরন্তু তিনি খেলাধুলায় এবং আমাদের খেলোয়াড়দের প্রতি গভীর আগ্রহ দেখিয়ে কিভাবে একটি খেলার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হয় তা করে দেখিয়েছেন।
প্রায়ই মানুষজন কেবলমাত্র একজন ক্রীড়াবিদের সাফল্যের কথা চিন্তা করেন যখন কেউ ব্যর্থ হয় তখন তাদের ভুলে যান। কিন্তু সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো একজন ক্রীড়াবিদের জীবনের সফলতা বা ব্যর্থতা নির্বিশেষে এমন একজন মানুষের পাশে থাকা যে তার সংগ্রামকে গুরুত্ব দেবে। মোদিজীর প্রতিক্রিয়া সেই বিষয়টিকে স্পর্শ করেছে এবং তার একজন ক্রীড়াবিদের প্রতি শ্রদ্ধা কোন পদকের উর্দ্ধে, যা অলিম্পিক পরবর্তী অলিম্পিয়ানদের সঙ্গে টেলিভিশন কথোপকথনে আমরা প্রত্যক্ষ করেছি।
তিনি বিজয়ী এবং পরাজিত সকল অলিম্পিয়ানদের সঙ্গে সময় অতিবাহিত করেছেন এবং উৎসাহ প্রদান করেছেন টেলিভিশন আলাপচারিতায়। পি আর শ্রীজেস একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ করেছিলেন যেখানে তিনি প্রধানমন্ত্রীকে বলেছিলেন “জেতার সময় বেশিরভাগ মানুষই ফোন করেন, কিন্তু প্রধানমন্ত্রী হেরে গেলেও ফোন করেছিলেন যা খুবই অর্থবহ এবং তাদেরকে আলাদাভাবে অনুপ্রাণিত করেছে।
উদাহরণস্বরূপ, যেভাবে তিনি ভিনেশ ফোগাতকে বুঝিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন পদক জয় না করতে পারার জন্য নিজের ওপর অহেতুক রাগ না করে ঘুরে দাঁড়াতে হবে এবং বলেন, ” সাফল্যতাকে কখনো নিজের মাথায় চড়তে দেবে না এবং ব্যর্থতায় কখনো নিজের হৃদয় যেতে দেবে না”। এই বিচক্ষণ পরামর্শ শুধুমাত্র তার জন্য নয় সেই সঙ্গে আরো অনেকের জন্যে যারা কোন পদক জিততে পারেনি।
বেশিরভাগ ক্রীড়াবিদ যাদের নিজেদের প্রতি আস্থা থাকে এবং সেই আস্থা নিয়ে অলিম্পিক পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন কিন্তু আশাহত হন তখন তারা সেই ব্যর্থতা থেকে স্বয়ং শাস্তির মতন এক মানসিক স্থিতিতে প্রবেশ করেন। এরকম নিঃসঙ্গ সময় তাদের সমর্থন প্রয়োজন এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রীর চেয়ে কে তা ভালো করে দেখাতে পারেন যে একটি সম্পূর্ণ জাতি তাদের পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী যেভাবে ক্রীড়াবিদদের সঙ্গে সংযুক্ত হন তাতে এক অনায়াস স্বাচ্ছন্দ এবং স্বাভাবিক উষ্ণতা রয়েছে। তিনি বেশিরভাগ ক্রীড়াবিদদের নামে চিনতেন এবং তাদের প্রথম নামের ভিত্তিতেই তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন।
লাভলিন বোরগোহাইনের মায়ের স্বাস্থ্যের কথা তিনি জানতেন, তিনি দ্যুতি চন্দের নামের অর্থ সম্পর্কে কথা বলেছেন, তিনি রবি দাহিয়াকে গম্ভীরতা কমিয়ে আরও হাসিখুশি হতে বলেছেন, এবং বেশিরভাগ ক্রীড়াবিদদের সাথে এমনভাবে তিনি সংযুক্ত হয়েছেন যেমন ভাবে বহুদিন ধরে তাদেরকে জানা এবং অনুসরণ করা কোন ব্যক্তি সংযুক্ত থাকেন।
কেবলমাত্র ব্যক্তিগতভাবে ক্রীড়াবিদদের মোদীজি চিনতেন না বরং তিনি স্পষ্টভাবে অলিম্পিক প্রতিযোগীতাকে অনুসরণ করেছিলেন এবং প্রতিটি খেলার সূক্ষ্ম তাকে বুঝতে পেরেছিলেন। তা না হলে, তার পক্ষে সম্ভব হত না বারবার চোটগ্রস্ত বজরং পুনিয়া ধারাবাহিকতার সম্পর্কে জানা, অথবা রবি দাহিয়াকে কামড় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা এবং নীরাজ চোপরার কাছে জানতে চাওয়া জ্যাভলিন নিক্ষেপের মুহূর্তে তিনি কি করে বুঝলেন যে তিনি জিতে গেছেন। একজন ক্রীড়াবিদের কাছে এটি সত্যি স্মরণীয় মুহূর্ত যে প্রধানমন্ত্রী তাদের প্রত্যেকটি ম্যাচকে খুবই উৎসাহের সঙ্গে অনুসরণ করেছিলেন।
সাধারণত সরকার আয়োজিত কোন অনুষ্ঠান প্রচলিত প্রথানুযায়ী হয়। যেখানে রাজনীতিবিদরা বক্তৃতা দেন এবং ক্রীড়াবিদরা শুধু পাশে থাকেন। দুঃখজনকভাবে এইটি একটি রাজনৈতিক সংস্কৃতি যা খেলাধুলা নিয়ে চলছে বহু দশক ধরে। যা ক্রীড়াবিদদের এমন বার্তা দেয় যে তারা কোনো মূল্যহীন।
কিন্তু অলিম্পিয়ানদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে কোন বক্তব্য ছিল না এবং কোন আনুষ্ঠানিকতাও ছিল না। এমন কিছু ক্রীড়াবিদদের জন্য প্রধানমন্ত্রী মাইকটি ধরেছিলেন যারা জানেন না যে মাইকটি চালু ছিল নাকি বন্ধ ছিল। যা স্পষ্টভাবে বার্তা দেয় যে তারা কতটা গুরুত্বপূর্ণ এবং তারা যা বলছেন সেটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
পুরো অনুষ্ঠানে এটা স্পষ্ট ছিল যে প্রধানমন্ত্রী নিশ্চিত করেছিলেন কেবলমাত্র খেলাধুলা অনুষ্ঠানের মূল কেন্দ্রবিন্দু হবে এবং এই অনুষ্ঠানটি মন্ত্রী বা আমলাদের চেয়ে বেশি, সেই সকল ক্রীড়াবিদদের যারা অলিম্পিকে ভারতের জন্য ঘাম ঝরিয়েছেন। যা খেলাধুলোর সাথে যুক্ত তরুণ প্রজন্মের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা প্রেরণ করে।
এরকম একটি ইভেন্ট অনুষ্ঠিত করা সম্ভব হতো না যদি সত্যিই মোদীজির খেলাধুলার প্রতি আগ্রহী না থাকতো কিংবা তিনি বিভিন্ন খেলাধুলায় ভারতের উত্থান না চাইতেন। অন্যথায় সিএ ভবানী দেবীর অবদানের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করার প্রয়োজন হতো না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটি পদক বা তার অভাব কোন ব্যাপার না কারণ যদি না তিনি ভারতের মানচিত্রের বিভিন্ন অঞ্চলগুলিকে একই পরিবেষ্টনীর মধ্যে আনার চেষ্টা করতেন।’
নীরজ চোপড়াকে চুরমা এবং পিভি সিন্ধুকে আইসক্রিম দিয়ে অভ্যর্থনার ছবিগুলো ভাইরাল হয়েছে। এই উষ্ণ মুহূর্তগুলি গ্রহনযোগ্যতা দেয় খেলাধুলা এবং ক্রীড়াসংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণতাকে। যার ফলে অনেক তরুণ এবং উদীয়মান ক্রীড়া তারকারা ভারতে ক্রীড়াবিদ হিসেবে তাদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আরো বেশি করে ভাবার আশ্বস্ত হবেন কারণ তারা জানবেন যে তারা মূল্যবান এবং সম্মানযোগ্য কারণ যে ব্যক্তি ভারতের গণতন্ত্রের নেতৃত্ব দেয় সে নিজে খেলাধুলা এবং ক্রীড়া সংস্কৃতিকে সম্মান করেন।
এটি একটি ক্রীড়া সংস্কৃতি তৈরিতে উৎসাহ প্রদান করবে যা মোদিজীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উত্তরাধিকার হিসেবে থেকে যাবে।
আমি একজন ক্রীড়াবিদ হিসেবে, ভারতের সমগ্র ক্রীড়া সংঘকে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে ভালোবাসা ও স্নেহ পেতে দেখে খুব আবেগপ্রবণ ও আনন্দিত।
একটি জিনিস আমি শুধু যোগ করতে চাই ভবিষ্যতে আরও পদক জিততে হলে আমাদের ক্রীড়া কাঠামোর উপর মনোযোগ দিতে হবে এবং শীর্ষস্থানীয় ক্রীড়াবিদদের যে ক্রীড়া সামগ্রী ব্যবহার করতে হয় তা শুল্ক বিহীন করলে তারা উপকৃত হবেন।
মোদীজি, আপনি ভারতের সমগ্র ক্রীড়াসংঘের মন জিতে নিয়েছেন, জয় হিন্দ।