• facebook
  • twitter
Saturday, 23 November, 2024

মধ্যবিত্তরা মার খাচ্ছে

অনেক তাে হল দেশের উচ্চবিত্তদের কথা ভাবা।খুবই ভালাে কাজ করছেন নিম্নবিত্তদের প্রতি নজর দিচ্ছেন। কিন্তু মধ্যবিত্তদের কথা কেউ কি একটু ভাববেন?

প্রতীকী ছবি (File Photo: iStock)

অনেক তাে হল দেশের উচ্চবিত্তদের কথা ভাবা। খুবই ভালাে কাজ করছেন নিম্নবিত্তদের প্রতি নজর দিচ্ছেন। কিন্তু মধ্যবিত্তদের কথা কেউ কি একটু ভাববেন? মধ্যবিত্তের আছে আত্মসম্মান বােধ। মধ্যবিত্তের আছে অহংকার। মধ্যবিত্তে আছে শিক্ষা। মধ্যবিত্তের আছে মূল্যবােধ। মধ্যবিত্তেরও আছে প্রয়ােজন। মধ্যবিত্তেরও খিদে আছে।

আজ প্রায় পনেরাে মাস সারা দেশজুড়ে এই মহামারি চলছে। বহুমানুষ রােজগারহীন। বেসরকারি চাকরিজীবী বহু মানুষ হয় কাজ হারিয়েছেন, নয় মাইনে পাচ্ছেন না অথবা অর্ধেক মাইনে পেয়ে সংসার চালাতে ধীরে ধীরে ঋণের সমুদ্রে ডুবে যাচ্ছে।

অনেকেই ব্যাঙ্ক লােন নিয়ে বাড়ি বা ফ্ল্যাট করেছেন, তারা আজ ব্যাঙ্কের কিস্তির টাকা না মেটানাের দরুন গৃহহীন হয়েছে বা ব্যাঙ্কের নােটিশ মাথায় বেঁধে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। গত বছর রিজার্ভ ব্যাঙ্ক একটা বিজ্ঞপ্তি জারি করে ঋণের উপর ছ’মাসের জন্য কিস্তি স্থগিত করেছিল।

সেক্ষেত্রে সেপ্টেম্বর ২০২০ থেকে ব্যাঙ্ক আবার চাপ দিতে শুরু করে এই ছ’মাসের সঙ্গে কারেন্ট মাসের কিস্তি অবিলম্বে শােধ করার জন্য। সেপ্টেম্বর মাস কেন, এখনও অবধি মানুষের রােজগার কিন্তু স্বাভাবিক হয়নি। জনগণ এই মহামরির কারণে আর্থিক দূরবস্থা কাটিয়ে উঠতে পারেনি।

তাই সরকারের নির্দেশে বা দেশের উচ্চ আদালতের নির্দেশে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক যে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল, তাতে সাধারণ মানুষ সাময়িক অব্যাহতি পেয়েছিল, কিন্তু পরে ব্যাঙ্কের ক্রমাগত চাপ সহ্য করে চলেছিল ও চলছেও। যে সময়ের জন্য আইন করে সকল দেনা স্থগিত রাখা হয়, সেটাকেই বলা হয় মরিটরিয়াম পিরিয়ড। ব্যাঙ্ক করল এক ধরনের চালাকি।

ওই ছ’মাসের সুদের টাকাটা ঋণগ্রহীতাকে একটা নতুন ভাবে ঋণ দিয়ে তার উপর সুদ চাপিয়ে ঋণগ্রহীতাদের আরও শােষণ করল। এতে কী লাভ হল বলুন তাে সাধারণ মানুষের? আরও আর্থিক ও মানসিক চাপ বৃদ্ধি পেল।

এই সুদ মকুব না করুক সরকার, উচিত ছিল না কি এই অস্থির ও মহামারির সময়ের কিস্তিগুলি পরিশােধ করার জন্য ঋণগ্রহীতাদের একটা নির্দিষ্ট সময় দেওয়া? আদালত বলেছিল সুদের উপর সুদ পুরােটাই মকুব করতে। ব্যাঙ্ক চালাকি করে সুদের টাকা ঋণ বানিয়ে তার উপর সুদ নিয়ে সাধারণ মানুষ আর সরকারকে বােকা বানাল।

আবার লকডাউন শুরু হয়েছে, কতদিন চলবে কেউ জানে না। লকডাউন উঠে গেলেও, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে, অর্থনীতি আবার উধ্বর্গামী হতে সময় লাগবে। সরকার দেশের বড় শিল্পপতিদের অনেক সুবিধা, অনেক সুযােগ দেয়, যেমন ঋণ মকুব, সুদ মকুব, ব্যবসা পুনর্গঠন করার জন্য আরও ঋণ দেওয়া এইসব।

আর এগুলি কিছু মুষ্টিমেয় ব্যবসাদারদের দেওয়া হয় কিন্তু ছােট বা মাঝারি শিল্পে সরকারের কোনওরূপ সহযােগিতা পাওয়া যায় না। হােম লােনের ওপর প্রধানমন্ত্রী আবাস যােজনা প্রকল্পে বেশকিছু টাকা দেওয়া হত, সেটাও গত ১ এপ্রিল থেকে বন্ধ করেছে সরকার।

সবশেষে বলব, ব্যাঙ্ক এখন বহু গুরুত্বপূর্ণ কাজ বন্ধ করেছে, যেমন লােনের কাজ পুরােটাই বন্ধ। এগুলিতেও সরকারের নজর দেওয়া উচিত। আর লকডাউন ছাড়াও এই যে মহামারি চলছে, এটা যতদিন না জনগণ কাটিয়ে উঠছে, ততদিন ব্যাঙ্কের সুদ ও কিস্তির ব্যাপারে সরকারের তরফ থেকে এক জনমুখী সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত অবিলম্বে।