মঙ্গলবার ছিল রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ের একাত্তরতম জন্মদিন। যদিও সােমবার রাতেই তিনি টুইট করে জানিয়েছিলেন অতিমারীতে এবার তিনি জন্মদিনের কোনও ‘সেলিব্রেশন’ করবেন না। তবে মঙ্গলবার দুপুরে রাজভবনের সামনে ঘটে গেল এক অভিনব কাণ্ড।
এক ব্যক্তি এক পাল ভেড়া নিয়ে চলে এলেন রাজভবনের গেটের সামনে। আচমকা এই আজব কাণ্ড দেখে হতচকিত হয়ে যান রাজভবনের সামনে নিরাপত্তারক্ষীরা। এ কি জন্মদিনের উপহার? পরে জানা যায়, না, এ হল উপহাস।
প্রসঙ্গত, কাশ্মীরের পুরনাে ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, সেখানে বিত্তশালী পরিবারে কোনও শুভ অনুষ্ঠানে অন্য সব উপহারের সঙ্গে ভেড়া দেওয়ার একটা প্রথা ছিল। কাশ্মীরের একদা রাজা হরি সিং-এর দাদু গােলাব সিং তৎকালীন ব্রিটিশ রাজকে রাজকর হিসেবে প্রতি বছর এক হাজার স্বর্ণমুদ্রা, কাশ্মীরী শাল এবং একটি ভেড়া উপহার দিতেন।
কিন্তু এদিন এই ভেড়া আনা হয়েছিল তিরষ্কারের জন্য। সিটিজেন্স এগেনস্ট ডার্টি পলিটিক্স অ্যান্ড করপােরেশন নামে একটি সংগঠনের পক্ষ থেকে সুমন মিত্র নামে এক ব্যক্তি এই ভেড়ার পাল নিয়ে আসনে রাজভবনের সামনে।
তাঁর বক্তব্য ছিল, ওই ভেড়ার অতিমারী পরিস্থিতিতে রাজ্যপালের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিতেই এই ভেড়ার পাল নিয়ে এসেছেন। এমনকী তার পরিষ্কার বক্তব্য, এই ভেড়াদের যেখানে থাকার সেখানেই এনেছি। এই কোভিড পরিস্থিতিতে মানুষের জমায়েত নিয়ে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু ভেড়ার ওপর তাে কোনও নিষেধ নেই। বরং ভেড়া নিয়ে এই প্রতিবাদতে রীতিমতাে প্রতীকী করে তােলা যায়।
সুমনবাবুর বক্তব্য, করােনা ভাইরাসের জেরে বিধ্বস্ত বাংলা। হাসপাতালে বেড নেই, অক্সিজেন নেই, ভ্যাকসিন নেই। অথচ রাজ্যে রাজনীতি আর প্রতিহিংসার নােংরা খেলা চলছে। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যপাল রাজ্যের কোভিড পরিস্থিতি নিয়ে ভাবছেন না। বরং তিনি এইসব সমস্যা থেকে মুখ সরিয়ে অন্য কারও হাতের পুতুল হয়ে রয়েছেন।
রাজ্যপালের ভূমিকাকেই কটাক্ষ করেই মঙ্গলবার এই সংগঠনের পক্ষ থেকে সাত আটটি ভেড়া নিয়ে এসে জমায়েত করা হয়। ভেড়াদের ধর্ম অনুযায়ী গড্ডালিকায় নেমে যাওয়ার মতােই দিনের পর দিন নিজের মর্যাদা ক্রমশ অধােগামী হচ্ছে। তাই এই প্রতীকী প্রতিবাদ।
যদিও রাজভবনের ফটকের সামনে কিছুক্ষণ থাকার পরেই ভেড়ার পাল সহ এই সংগঠনের সদস্যকে সেখান থেকে সরিয়ে দেয় পুলিশ। কিন্তু মঙ্গলবার রাজপথে ওই ভেড়ার পাল এক নতুন ধরনের প্রতিবাদকে রেখে গেল মানুষের সামনে।
মুখে কালাে কাপড়, হাতে হারিকেন, থালা বাজানাে-এসবের চেয়েও অবলা প্রাণীদের মাধ্যমে ক্ষোভের ভাষা বলা গেল। শুধু এতটুকু জানা গেল ওই পালের ভেড়াদের এতে সায় ছিল কিনা? আসলে কি পরশুরামের কথা থেকে ধার করে বলাই যায়, ‘ভেড়া বলে কি ওরা মানুষ নয়কো?’