বাঙালিদের জন্য পয়লা বৈশাখ মানেই নতুন জামা-কাপড়, নানা রকমের সুস্বাদু খাবার, রসগোল্লা, মিষ্টি দই আর অবশ্যই নতুন পঞ্জিকা ও ক্যালেন্ডার। বাঙালিদের নতুন ক্যালেন্ডার সংগ্রহ করার সবচেয়ে সরল উপায় পরিচিত দোকানে গিয়ে নববর্ষের কেনাকাটি করে নেওয়া। দোকানদার মিষ্টির প্যাকেট ও ক্যালেন্ডার আপনার হাতে তুলে দিয়ে বলবে আবার আসবেন কিন্তু। আসলে পয়লা বৈশাখে বাঙালি ব্যাবসায়ীরা দোকানে লক্ষ্মী-গণেশের পুজো দিয়ে নতুন হালখাতা চালু করে। আর মিষ্টি-ক্যালেন্ডার ক্রেতাদের উপহার দেওয়া ব্যাবসায় বৃদ্ধির আশায় এক সৌজন্যমূলক আচরণ।
বাঙালিদের বছর শুরু হয় বৈশাখে যা এপ্রিল মাসের ১৪ অথবা ১৫ তারিখে পড়ে। বাংলার ক্যালেন্ডার বা বঙ্গাব্দ সম্রাট আকবর তাঁর জ্যোতিষী আমির ফাতেহুল্লাহ শিরাজী-কে দিয়ে শুরু করেছিলেন। কিন্তু রাজা শশাঙ্ক’র সময়কালের (৭ম শতাব্দী) দুটো মন্দিরের গায়ে বঙ্গাব্দ পাওয়া যায়, যা কিনা আকবরের সময়ের অনেক আগে। তাই বঙ্গাব্দ’র সূত্রপাত কবে থেকে হয়েছিল তা স্পষ্ট বলা যায় না, তবে সরকারি ভাবে সম্রাট আকবর’ই বঙ্গাব্দ বাংলায় চালু করেছিলেন।
সম্রাট আকবরের সময় চন্দ্র পঞ্জিকা বা হিজরী শন মেনে রাজ্যের সব কাজকর্ম চলত। কিন্তু বাংলায় চাষিদের সৌর পঞ্জিকা মেনে চাষ করতেন। চন্দ্র পঞ্জিকা মেনে খাজনা দেওয়ার সময়ে চাষিদের অসুবিধার মধ্যে পড়তে হত কারণ তাদের ফসল তখনও ফলেনি। এই সমস্যাকে মাথায় রেখে সম্রাট আকবর তাঁর জ্যোতিষী আমির ফাতেহুল্লাহ শিরাজী-কে নির্দেশ দেন এমন একটা ক্যালান্ডার বানাতে যা চন্দ্র পঞ্জিকা ও সৌর পঞ্জিকা দুই’ই মেনে তৈরি হবে। এই নতুন ক্যালন্ডারের নাম দেওয়া হল ‘ফসলি শন’ যা পরে ‘বাংলা শন’ বা ‘বঙ্গাব্দ’ নামে পরিচিত।
বাংলা শন চালু করা হয় ১০/১১ মার্চ ১৫৮৪, কিন্তু তার হিসেব করা হয় ৫ নভেম্বর ১৫৫৬ বা হিজরী ৯৬৩ থেকে- যেদিন সম্রাট আকবর সিংহাসনে বসেন। মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের পরে ‘বাংলা শন’ পশ্চিম বাংলা আর পূর্ব দক্ষিণ এশিয়া ছাড়া আর কথাও ব্যবহার হয় না। বাংলাদেশে এই বাংলা শনের সংশোধিত রূপ ব্যবহার করা হয়।
বাংলাদেশের তাঁদের বাংলা ক্যালেন্ডারকে আরও যথাযথ করার জন্য বাংলা আকাদেমি তাতে কিছু বদল আনেন-
প্রথম পাঁচ মাস, বৈশাখ থেকে ভাদ্রো প্রতিটিতে ৩১ দিন থাকবে।
বাকি মাস গুলো, অশ্বিন থেকে চৈত্র প্রতিটিতে ৩০ দিন থাকবে।
গ্রেগরীয় ক্যালেন্ডারের মতো প্রত্যেক চার বছর অন্তর আসে অধিবর্ষ যেই বছরে থাকে ৩৬৬ দিন। অধিবর্ষের সময় ফাল্গুন মাসে এক দিন যুক্ত করা হয়।
বাংলা ক্যালেন্ডার বারো মাসে ও ছটি ঋতুতে বিভক্ত। প্রত্যেক রিতুর সঙ্গে জোড়া দুটি করে মাস। এই ক্যালেন্ডার বাংলার ঋতুর সঙ্গে মানিয়ে তৈরি। গ্রেগরীয় ক্যালেন্ডারের মতই বাংলা ক্যালেন্ডারে ৩৬৫ দিন।
বাংলা ক্যালেন্ডার এখনো জনপ্রিয়। প্রত্যেক বাঙালির ঘরের দেওয়ালে আজও ঠাকুরের ছবি সহ বাংলা ক্যালেন্ডার দেখা যায়। বাঙালি সংস্কৃতির কিছু নির্দিষ্ট (একাদশী, পূর্ণিমা, অমাবস্যা) দিন দেখার জন্য বাংলা ক্যালেন্ডার খুবই প্রয়োজন।