• facebook
  • twitter
Saturday, 23 November, 2024

হােক সুন্দর মুখের জয়

শাসক তৃণমূল কংগ্রেস এবং প্রধান বিরােধী বিজেপি-উভয় দলই টলিউডের বেশ কিছু বিশিষ্ট তারকাকে প্রার্থী করে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামিয়ে দিয়েছে।

দেব (Photo: Indrajit Roy/IANS)

বিনােদন জগতের সুন্দর মুখের ছড়াছড়ি। এবার একুশের বিধানসভা ভােটে এরাই অন্যতম প্রধান আকর্ষণ। শাসক তৃণমূল কংগ্রেস এবং প্রধান বিরােধী বিজেপি-উভয় দলই টলিউডের বেশ কিছু বিশিষ্ট তারকাকে প্রার্থী করে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামিয়ে দিয়েছে।

তারকাদের দলে টানতে এ পর্যন্ত এগিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দিদির আকর্ষণে বিনােদন জগতের অনেকেই এসে যােগ দেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ অতি কাছের অতি স্নেহের অতি আদরের। দিদি প্রয়ােজনে তাদের ডাকেন, সভাসমিতিতে মঞ্চের প্রথম সারিতেই আলাে করে তারা বসেন, আমন্ত্রিত হয়ে। দুই লােকসভা নির্বাচনে এঁদের কয়েকজনকে প্রার্থী করে আসরে নামিয়ে দিয়েছিলেন।

তারা রাজনীতিতে অভিজ্ঞ হেভিওয়েট প্রার্থীদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জিতেও গেলেন। তাঁরা সন্ধ্যা রায়, সুচি সেন তনয়া মুনমুন সেন (যিনি হারালেন সিপিএমের বাঘা প্রতিদ্বন্দ্বী, রাজনীতিতে অভিজ্ঞ বাসুদেব আচারিয়াকে), শতাব্দী রায় এবং বিধানসভা নির্বাচনে রায়দিঘি কেন্দ্রে দেবশ্রী রায় (যিনি হারালেন সিপিএমের দাপুটে নেতা জনপ্রিয় কান্তি গাঙ্গুলিকে)।

এঁদের জেতাতে সবাই অবাক হলেন, কারণ রাজনীতির ধারেকাছে এঁরা কেউ ছিলেন না, মানুষের দুর্দিনে তাদের পাশেও কোনােদিন দাঁড়াননি, কিন্তু ভােটে জিতে গেলেন। শেষে বলা হল এ সুন্দর মুখের জয়’। আর দিদির প্রতি মানুষের ভালবাসার ফল। সুতরাং এই তারকা টানার প্রতিযােগিতায় বিজেপি আর পিছিয়ে থাকে কী করে? তাই এবার একুশের নির্বাচনে তারকা টানতে বিজেপি টলিউডের দিকে হাত বাড়াল।

বিজেপিতে ‘দিদির মতাে আকর্ষণীয় কেউ নেই, তবুও অভূতপূর্ব সাড়া মিলল। এক ঝাক সিনেমা ও ছােট পর্দার অভিনেতা, অভিনেত্রী, পরিচালক বিজেপির ডাকে পদ্ম চিহ্নিত পতাকা হাতে তুলে নিলেন। তাদের প্রায় সবাইকে প্রার্থী করে ভােটের আসরে নামিয়ে দিল।

শাসক দলে তারকা প্রার্থীদের ছড়াছড়ি দেখে বিজেপি নেতৃত্ব ভাবলেন, এই প্রতিযােগিতাতেই তৃণমূলের কাছে হারলে চলবে না। বিজেপিতে যে তারকেরা নির্বাচনে প্রার্থী হলেন, তারা অভিনয় জগতে খ্যাত-তৃণমূলের তারকাদের সঙ্গে সমানে সমানে পাল্লা দিতে কোনােভাবেই পিছিয়ে নেই। কীসের আকর্ষণে রুপােলি জগতের চাকচিক্য ছেড়ে রাজনীতিতে যােগ দিলেন?

এই প্রশ্নের উত্তরে গেরুয়া শিবিরের এই প্রার্থীরা অকপটে জানালেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদি যেভাবে আত্মনির্ভর ভারত গড়ার কাজে হাত দিয়েছেন, তা দেখেই তারা উৎসাহিত হয়ে, দশের জন্য দেশের জন্য কিছু করতে তারা পদ্ম শিবিরে যােগ দিলেন।

অনেকেই হয়ত জিতবেনও, রাজনীতির জ্ঞান নাই থাকুক, ভােটে জেতার কৌশল না জানলেও, অভাবী, দুখী মানুষের পাশে দাঁড়াতে রাজনীতির জ্ঞানের প্রয়ােজন আছে কী? অভিনয় জগত থেকে রাজনীতির জগতে প্রবেশ, অন্যায় কিছু নয়। আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই।

কিন্তু প্রশ্ন একটাই, অভিনয়ের জগতে ব্যস্ত থেকে কতটুকু সময় তারা ব্যয় করতে পারবেন জনপ্রতিনিধি হিসেবে মানুষের পাশে দাঁড়াতে? তৃণমূলের যাঁরা সাংসদ ছিলেন, তাঁদের সময় শেষ হয়ে যাওয়ার মুখে, এখন তাদের অবদানের কথা কিছু মনে করা যায়? তাদের মধ্যে একজন সন্ধ্যা রায় রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন, অপরজন মুনমুন সেন নির্বাচনে হেরেছেন।

শতাব্দী রায় এখনও অবশ্য আছেন-তিনি বিজেপিতে ঢুকতে গিয়েও হঠাৎ মত পাল্টে আবার তৃণমূলেই। যদি বলা যায় রাজনীতির জগত এঁদের জন্য নয়, তাহলে অনেকেই আপত্তি জানাবেন। তাই হােক গ্ল্যামারের জয়, সুন্দর মুখের জয়।