নিজস্ব সংবাদদাতা, দিল্লি — শুরু হল বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশের বৃহত্তম ভােটযজ্ঞ। ৩৮ দিনব্যাপী এই ভােটযজ্ঞের প্রথম দিনে আজ সারা দেশে ১৮টি রাজ্য ও দু’টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ৯১টি কেন্দ্রে ভােটগ্রহণ শুরু হল। প্রথম দিনের ভােটের প্রধান বৈশিষ্ট্য হল ইভিএম নিয়ে ব্যাপক অভিযােগ। সপ্তদশ লােকসভা ভােটের প্রথম দিনেই কার্যত ভিলেন হয়ে ওঠে বৈদ্যুতিন ভােটযন্ত্র তথা ইভিএম। সকাল থেকেই কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী পর্যন্ত একাধিক ভােট কেন্দ্র থেকে এদিন ইভিএম বিচ্যুতির খবর আসতে থাকে। কোথাও ইভিএম কাজ করেনি, কোথাও আবার কোনও একটি বিশেষ বােতাম কাজ করছিল না। এই নিয়ে ভােটগ্রহণ শুরুর সময় থেকেই রাজনৈতিক দলগুলির প্রতিনিধিদের মধ্যে জোর তরজা শুরু হয়ে যায়। সবচেয়ে বেশি ইভিএম প্রমাদের খবর এসেছে কাশ্মীরের জম্মু ও বারমুলা লােকসভা কেন্দ্র, মহারাষ্ট্র এবং অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে। এর পাশাপাশি বেলা একটু গড়াতেই দেশের একাধিক প্রান্ত থেকে বিক্ষিপ্ত সন্ত্রাসের খবর আসতে থাকে। দুই দলের মধ্যে রাজনৈতিক সংঘর্ষে অন্ধ্রপ্রদেশে প্রাণ হারিয়েছেন তেলুগু দেশম পার্টির এক কর্মী। একই সঙ্গে মহারাষ্ট্র ও উত্তর-পূর্ব ভারতের বেশ কয়েকটি জায়গা থেকে আইইডি (ইপ্রােভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। তবে এই বিস্ফোরণে কোনও হতাহতের ঘটনা ঘটেনি বলেই নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানানাে হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকালে ভোটগ্রহণ শুরুর প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই অন্ধ্রপ্রদেশের অনন্তপুরে দফায় দফায় সংঘর্য শুরু হয়ে যায় দু’টি রাজনৈতিক দলের সমর্থকদের মধ্যে। ওই ঘটনায় প্রাণ যায় তেলুগু দেশমের এক সমর্থকের। বেলা বাড়তেই এই রাজ্যের বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে আসতে থাকে ইভিএম অকেজো হওয়ার খবর। রাজ্যের মুখ্য নির্বাচন আধিকারিক (সিইও) জানিয়েছেন, মােট ৩৬২টি ইভিএম কাজ করেনি।
এদিন ভােটগ্রহণ পর্ব শুরু হওয়ার আগে জম্মু এবং বারামুলায় একাধিক বুথে ইভিএম বিকলের খবর মেলে। পুঞ্চের একটি বুথে ইভিএম খারাপ হওয়ার কথা জানান প্রিসাইডিং অফিসার। সে কারণেই ওই বুথে ভােটগ্রহণ প্রক্রিয়ায় দেরি হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন ওই অফিসার। ইভিএম কাজ না করায় এদিন সকাল ন’টাতেও বেশ কয়েকটি বুথে ভােটগ্রহণ শুরু করা যায়নি। ওই দুটি কেন্দ্রের একাধিক বুথে ইভিএম মেশিন বিকল থাকার কথা স্বীকার করেছেন স্বয়ং প্রিসাইডিং অফিসার। পুঞ্চের প্রিসাইডিং অফিসার বলেন, হাত চিহ্নের বাটন কাজ করছিল না। এরপরই রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়ে যায়। ন্যাশনাল কনফারেন্সের নেতা ওমর আবদুল্লা জানিয়েছেন, কংগ্রেসের চিহের বাটন কাজ করছে না।
আজ সকাল থেকে শুরু হয় সপ্তদশ লােকসভা নির্বাচনের প্রথম দফার ভােটগ্রহণ। সাত কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সহ অন্তত দশটি কেন্দ্রে চলছে হেভিওয়েট প্রার্থীদের লড়াই। একই সঙ্গে চারটি রাজ্যের বিধানসভার ভােটগ্রহণ চলছে। ভােটগ্রহণ চলবে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নীতিন গডকড়ি, কিরেন রিজিজু, ভি কে সিং সহ অন্তত দশজন হেভিওয়েট প্রার্থীরও আজ ভাগ্য পরীক্ষা শুরু হয়েছে সকাল সাতটা থেকে। অন্ধ্রপ্রদেশ (২৫), তেলেঙ্গানা (১৭), উত্তরাখণ্ড (৫) সহ অরুণাচল প্রদেশ, জম্মু কাশ্মীর, মেঘালয় ও পশ্চিমবঙ্গের দুটি আসনে ভােটগ্রহণ চলছে। এছাড়া ছত্তিশগড়, মণিপুর, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, সিকিম, ত্রিপুরা আন্দামান-নিকোবর ও লাক্ষাদ্বীপের একটি করে আসনে ভােটগ্রহণ চলছে।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর, সারা দেশে বেশ কয়েক জায়গায় হিংসাত্মক ঘটনা ঘটেছে। অন্ধ্রপ্রদেশের গুন্টাকাল বিধানসভা কেন্দ্রে ভােটকর্মীদের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে তুলকালাম কাণ্ড ঘটিয়ে গ্রেফতার হয়েছেন জনসেনার প্রার্থী মধুসূদন গুপ্তা। অনন্তপুর জেলার গুটি বুথে ভােট দিতে ঢুকেই মেজাজ সপ্তমে চড়ে যায় জনসেনার বিধানসভার প্রার্থী মধুসূদনের। ভােট দিতে গিয়ে দেখেন ইভিএমে লােকসভা ও বিধানসভার কেন্দ্রের নাম ঠিকমতাে বােঝা যাচ্ছে না। বচসা শুরু হয়ে যায় ভােটকর্মীদের সঙ্গে। এরপরই ইভিএম তুলে মাটিতে আছাড় মারেন তিনি। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
মহারাষ্ট্রের নাগপুর কেন্দ্র থেকে দাড়িয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা বিজেপি প্রার্থী নীতিন গডকড়ি। তাঁর বিরুদ্ধে কংগ্রেসের প্রার্থী নানাভাই পাটালাে। নাগপুর কেন্দ্রটি একসময় কংগ্রেসের দুর্গ বলে পরিচিত ছিল। ২০১৪ সালে কংগ্রেসের বিলাস মুত্তেমওয়ারকে হারিয়ে ওই কেন্দ্র থেকে সাংসদ হন নীতিন। অরুণাচল পশ্চিম কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেণ রিজিজু। তাঁর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন কংগ্রেস প্রার্থী তথা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী নাবাম তুকি।
মুজাফফরনগর কেন্দ্রটি বর্তমানে বিজেপির দখলে। ওই কেন্দ্রে বিজেপির প্রার্থী সঞ্জীবকুমার বলিয়ান। তাঁর বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন রাষ্ট্রীয় লােকদল সুপ্রিমাে অজিত সিং। উত্তরপ্রদেশের বাগপত লােকসভা কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন অবসরপ্রাপ্ত আইপিএস অফিসার তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সত্যপাল সিং। তাঁর বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আরএলডি সুপ্রিমাে অজিত সিংয়ের পুত্র জয়ন্ত চোধুরি। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রামবিলাস পাসােয়ানের পুত্র তথা লােক জনশক্তি পার্টির নেতা চিরাগের ভাগ্য নির্ধারিত হতে চলেছে বিহারের জামুই কেন্দ্রে।
কংগ্রেস নেতা তথা মেঘালয়ের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মুকুল সাংমা, তুরা কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। বিপরীতে দাড়িয়েছেন ন্যাশনাল পিপলস পার্টির নেত্রী তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আগাথা সাংমা। উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদে লড়ছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ভি কে সিং। তাঁকে লড়াই করতে হচ্ছে কংগ্রেসের প্রার্থী ডলি শর্মার বিরুদ্ধে। গোতম বুদ্ধনগর থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা বিজেপি প্রার্থী মহেশ শর্মা। হায়দরাবাদ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন এআইএমআইএম প্রধান আসাদুদ্দিন ওয়াইসি।