বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতি জগতে নির্মল ব্রহ্মচারী বেশ পরিচিত নাম। তার সাহিত্যকর্মের পরিবেশ ব্যাপক হলেও ছড়া ও কবিতায় তিনি যথেষ্ট স্বচ্ছন্দ। সামাজিক মানুষের ভাবনা, চিন্তাধারা, সাহিত্য-সংস্কৃতি ও প্রতিনিয়ত ঘটে যাওয়া জীবনচর্যা উঠে আসে তার লেখায়।
তার লেখার গভীরতা, নান্দনিক দৃষ্টিভঙ্গি ও মানবতার প্রতি শ্রদ্ধা-ভালােবাসা অন্যদেরও আকৃষ্ট করে। তাই লেখক-কবি বইটি উৎসর্গ করেন বিশ্বে অতিমারি-শহিদদের ও বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের উদ্দেশে।
এমনকি ঘােষণা করেন, পুস্তক বিক্রয়লব্ধ অর্থ দান করা হবে বিপর্যস্তদের মধ্যে। অতিমারির এই মুহূর্তে এমন ঘােষণা বাজারি কোনও লেখকদের মুখনিঃসৃত হয়নি। তাই নির্মলবাবুকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
‘করােনা ও দাবাই’ যেহেতু ছড়া ও কবিতার বই, তাই অনেকের মনে হতে পারে ছােটোদের কাছে বইটি গুরুত্ব পাবে। কিন্তু তা নয়। বড়দের কাছেও এটি যে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। তার কয়েকটি উদাহরণ তুলে ধরলাম।
“নির্ভয়ে চিরতরে করতে মহামারি আর মন্বন্তর / নিরাপদে বাঁচবে অভাগা দেশ / তাই খুঁজে ফিরি এই মহামন্ত্রর লড়াইতে বেঁচে আছি স্বপ্নের আশাতে” (ধন্বন্তরী)।
সংকলকটির মূল কথা, মূল আহ্বান, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যেকে সামনে রেখেই মানবসভ্যতা ও মানবিকতার অবধারিত জয়যাত্রাকে অব্যাহত রাখতে হবে। অতিমারি ও বিশ্বের মানবশত্রু ও দেশের চরম শত্রুর বিরুদ্ধে করি আপােসহীন লড়াইয়ের সঙ্গে পাঠকরাও যেন যুক্ত হয়ে পড়েন। ঘুণধরা সমাজের আমূল পরিবর্তনের মাধ্যমে জনগণের কল্যাণকর নিরাপদ সুখী ও শান্তিপূর্ণ সমাজজীবনের স্বপ্ন পূরণে কবির আর্তির সঙ্গে কখন যেন মিলে যায় কণ্ঠ:
“পীড়নে হত্যায় বাঁচাতে অসহায়, হও একতায় মহাঅস্ত্রধারী / বিভেদে না ফেঁসে এক জোটে দেশে, শেষ কর ঘৃণ্য গণহত্যাকারী!’ (চরম শত্রু)।
সংকলনটির প্রথমাংশে রয়েছে কবি নির্মল ব্রহ্মচারীর সাম্প্রতিক ছড়া ও কবিতা সম্পর্কে বিদগ্ধজনের কিছু মন্তব্য। অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক অনাথবন্ধু দে, ড. তিমিরবরণ চত্রবর্তী, অধ্যাপক তরুণ মুখােপাধ্যায়, ড. রমজান আলি অধ্যাপক অমিত বন্দ্যোপাধ্যায়, কবি-সাহিত্যিক অনীতা বন্দ্যোপাধ্যায় (চট্টোপাধ্যায়) ও মানস ভান্ডারী আলােচনা করেছেন নির্মলের ছড়ার বৈশিষ্ট নিয়ে, যা তরবারির ক্ষুরধার, রাইফেলের মতন লক্ষ্যভেদে একনিষ্ঠ।
ছড়া ও কবিতা সংকলনটিকে আরাে মুল্যবান করে তুলেছে পাতায় পাতায় পার্থ সাহার বাস্তববাচিত অলঙ্করণ। একইসঙ্গে বিষয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই পার্থ একেছেন অসামান্য প্রচ্ছদ।