• facebook
  • twitter
Saturday, 23 November, 2024

গা-ছাড়া মনােভাব

সাধারণ মানুষ কিন্তু বলতে শুরু করেছেন এই মারুণ ভাইরাস এখন বিদায় নেওয়ার পথে। সুতরাং সব বিধিনিষেধ আলগা হয়ে গেছে।

প্রতীকী ছবি (File Photo: AFP)

করােনা রুখতে আমাদের গা-ছাড়া মনােভাব আরও বড় বিপদ ডেকে আনবে না তাে? সাধারণ মানুষ কিন্তু বলতে শুরু করেছেন এই মারুণ ভাইরাস এখন বিদায় নেওয়ার পথে। সুতরাং সব বিধিনিষেধ আলগা হয়ে গেছে। চিকিৎসকরা বলছে, এই মনােভাব মারাত্মক। কারণ এই ভাইরাস তার চরিত্র বদল করে আবার হানা দিতে পারে। তাদের মতে, প্রত্যেক মহামারির দ্বিতীয় ঢেউ আসে— অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে তা প্রথম ঢেউয়ের চেয়েও মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। আবার নাও পারে। 

আরও এক শ্রেণির মানুষ বলছেন, প্রতিষেধক তথা করােনার জন্য ভ্যাকসিন তাে এসেই গেছে। তাই এখন আর ভয় কিসের? কিন্তু এরা জানে না, কবে তা সাধারণ নাগরিকদের জন্য এই ভ্যাকসিন মিলবে? আবার ভাইরাস যদি তার ‘মহিমা’ বদল করে, তাহলে এই ভ্যাকসিন তাকে রুখতে সক্ষম হবে তাে? যাঁরা ভ্যাকসিন নিয়েছেন, দুই ডােজের পর, তাদের শরীরে ভাইরাস প্রতিরােধ ক্ষমতা কতদিন স্থায়ী হবে, তা এখনও অনিশ্চিত। 

করােনা অবহেলার দিকটা নিয়ে চিন্তিত চিকিৎসকমহল এবং রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করেছে সরকার। মাস্কহীন কেউ বাইরে বের হলে, পুলিশ তাকে ধরে জরিমানা করতে পারে। কিন্তু এই জরিমানার তালিকা এখনও পর্যন্ত শূন্য। অর্থাৎ পুলিশ এ ব্যাপারে নিষ্ক্রিয়। লকডাউন কালে মাস্কহীন কাউকে রাস্তায় দেখলে তাকে বাড়ি ফিরিয়ে দিত আরও গুরুতর কিছু করলে কান ধরে ওঠবােস করাত। তাতে সাধারণের মনে কিছুটা ভীতির সঞ্চার হয়েছিল। এখন সবকিছু আলগা হয়ে যাওয়ায়, মাস্ক পরা লােকের সংখ্যা রাস্তায় কম দেখা যায়। পুলিশ তাদের দেখেও কিছু বলে না। সুতরাং আইন আছে তার প্রয়ােগ নেই। মাস্ক ব্যবহার না করাটা দিন দিন যেভাবে বাড়ছে, তা যদি এমন চলতে থাকে, তাহলে ঘােরতর বিপদ ঘটতে পারে। 

দূরত্ববিধি তাে প্রায় মুছে গেছে। বাসে, ট্রামে, ট্রেনে, দূরত্ববিধি মানা সম্ভব নয়। তাই মানা হচ্ছে না। রাজনৈতিক দলগুলির মিছিল মিটিং এবং রােড শাে’তে লােমগম হচ্ছে সেখানে দূরত্ববিধি মানার কোনও প্রশ্নই ওঠে না। নেতাদের মুখে মাস্ক- শ্রোতা বা সমর্থকদের মুখে মাস্ক নেই। সবচাইতে আশ্চর্যের বিষয়, নেতারা জনপ্রতিনিধি হয়েও বক্তৃতা কালে তাদের মাস্ক পরার গুরুত্ব যে অপরিসীম তা স্মরণ করিয়ে দিলেন না।

এই তাে সামনে বাম-কংগ্রেস জোটের ব্রিগেড জনসভা। তারপর আগামী মাসের ৭ তারিখ ব্রিগেড়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদির জনসভা। কোন দল কত লােক ব্রিগেডে আনতে পারে তার একটা প্রতিযােগিতা চলছে। হাজার হাজার মানুষের এই সমাবেশে দূরত্ববিধি রক্ষার তাে কোনও প্রশ্নই নেই, কারওর মুখেই মাস্ক দেখা যাবে না। সুতরাং সংক্রমণের মােক্ষম সুযােগ। সামনে নির্বাচন, মিছিল-মিটিংয়ের বন্যা বয়ে যাবে এবং সেই সঙ্গে করােনা প্রতিরােধের বিধিনিষেধও উধাও হয়ে যাবে।

পশ্চিমবঙ্গে করােনায় আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা ক্রমশ কমছে এবং প্রতি চছু ঘণ্টায় মৃত্যুও দুই থেকে তিন-চারের মধ্যে ঘােরাফেরা করছে। কিন্তু করােনা বিদায় নেয়নি। তাই আত্মতুষ্টির কোনও অবকাশ নেই। এই অবস্থায় প্রায় একবছর পর, স্কুলগুলি খুলেছে, যদিও সরকারের স্কুল খােলার এই সিদ্ধান্ত একটা ঝুঁকির। আপাতত নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের স্কুলে ক্লাস হবে। এখন পর্যন্ত সব ঠিকঠাই আছে। যদিও সংক্রমণের সময় এখনও উত্তীর্ণ হয়ে যায়নি।

দেশের পাঁচটি রাজ্যে কেরল, অসম, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র এবং ছত্তিশগড়ে করােনা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। ভারতে এ পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকার স্ট্রেনে পাঁচজন আক্রান্ত হয়েছেন। যেহেতু এই রাজ্যগুলিতে মানুষের আসা যাওয়ার ওপর কোনও নিষেধাজ্ঞা এখনও বলবৎ হয়নি, তাই এ রাজ্যেও করােনার দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়তে পারে। সুতরাং সবকিছু ঢিলে দিয়ে বসে থাকলে, বিপদ কিন্তু বসে থাকবে না। সামনে নির্বাচন। সুতরাং করোনাবিধি মানা প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ারই উপক্রম। ফলে রাজ্যের সামনেও বড় বিপদের সম্ভাবনা, যা উড়িয়ে দেওয়ার উপায় নেই।