নিজস্ব প্রতিনিধি – কোচবিহারের নির্বাচনী জনসভা থেকে চিটফান্ড ইস্যুতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করে বক্তব্য রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদি। সেই সঙ্গে মােদি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন চিটফান্ডের টাকা যার পকেটে গিয়েই থাকুক না কেন, এই চৌকিদার তা বের করে আনবে। মােদির এই মন্তব্যের এক ঘন্টা কাটতে না কাটতেই রীতিমতাে বিরক্ত মমতা সুর চড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদিকে নিশানা করে বলেছেন, গােটাদেশ জানে চৌকিদারই চোর হ্যায়। সেই সঙ্গে মমতার আরও সংযােজন মুকুল রায়কে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গী করা নিয়ে। মমতার অভিযােগ, সারদা-নারদা নিয়ে বড়বড় কথা বলছেন কিন্তু যে লােকটা আপনার সামনে বসে সভা নিয়ন্ত্রন করছে সেইতাে সবচেয়ে বড় অভিযুক্ত। সারদা নারদার দুটি অভিযােগ রয়েছে ওর বিরুদ্ধে। তাঁকে পাশে নিয়ে সভা করছেন এমনকী হাওলা কেলেঙ্কারিতে যুক্ত। হাওলা কেলেঙ্কারির নায়ককে নিয়ে মিটিং করছেন। ময়নাগুড়ির সভায় এদিন নাম না করে প্রধানমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে মমতা বলেন, আজকেও দাঁড়িয়ে বলেছেন, তৃণমূল কংগ্রেস নাকি সারদা-নারদার পার্টি? ২০১৪ সালে একই কথাই বলেছেন। ২০১৬ সালেও সেই একই বলেছেন। আসলে প্রধানমন্ত্রী এর আগেও সারদা-নারদা নিয়ে তৃণমূলকে বিধলেই বাংলার মানুষজন যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেই রয়েছেন তা বিগত বিধানসভা নির্বাচন বড় প্রমাণ বলে মমতা তার এই বক্তব্যের মাধ্যমে বােঝাতে চেয়েছেন। রবিবার কোচবিহারের সভায় মমতাকে নিশানা করে বক্তব্য রেখেছেন মােদি। ঠিক একই ভাবে ফালাকাটা ও ময়নাগুডির সভা থেকে মােদিকে জবাব দিয়েছেন মমতা। এই দুই হেভিওয়েট নেতার বাকযুদ্ধে রীতিমতাে সরগরম ছিল উত্তরবঙ্গের নির্বাচনী প্রচার। মােদি-মমতা দ্বৈরথ শেষ পর্যন্ত সারদা ইস্যুকে অন্য মাত্রা দিয়েছে। এতদিন সুদীপ্ত সেনের সঙ্গে তৃণমূলের মাখামাখির অভিযােগ সিবিআইয়ের র্যাডারে ছিল। সারদা এবং রােজভ্যালি কেলেঙ্কারিতে বেশ কয়েকজন তৃণমূল নেতাকে জেলও খাটতে হয়েছিল। কিন্তু এদিনই প্রথম মুকুল রায় সারদা নারদাতে যুক্ত বলে প্রকাশ্য সভায় মুখ খােলায় রাজ্য রাজনীতিতে শােরগােল পড়ে গিয়েছে। মুকুলও এর পাল্টা দিয়েছেন। তিনি দাবি করেছেন, মমতার সৌজন্যে ডেলাে ও নিজাম প্যালেসে সুদীপ্তর সঙ্গে সাক্ষাত করেছিলাম। কিন্তু সুদীপ্তকে ব্যক্তিগতভাবে তিনি চেনেন না বলে দাবি করেছেন। ২০১৯ এর লােকসভা নির্বাচন প্রথম শুর হবে ১১ এপ্রিল। আলিপুর দুয়ার ও কোচবিহারে প্রথম দফার ভােট রয়েছে। তার আগে যেভাবে সারদা ইস্যু নতুন করে উঠে এল তা নিয়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক মহলে। কারণ এখানে এই ইস্যুকে সামনে রেখে একে অপরের বিরুদ্ধে যে অভিযােগ এনেছেন তাদের মধ্যে একজন তৃণমূলে ছিলেন আবার বর্তমানে একজন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান। ফলে মুকুলের এই মন্তব্যকে হাতিয়ার করে আগামী দিনে সিবিআই তদন্ত কোন পথে এগােয় এখন সেটাই দেখার। এতদিন বাম ও কংগ্রেস যে অভিযােগ তুলেছিল সারদার সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের সম্পর্ক নিয়ে এবার তা প্রকাশ্যে আনলেন মুকুল-মমতা।
এদিনের উত্তরবঙ্গের দুটি নির্বাচনী জনসভা থেকে ভােটের মরশুমে রাজ্যে আসার জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদিকে বসন্তের কোকিল বলেও কটাক্ষ করেছেন মমতা। সেই সঙ্গে মমতা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন রাজ্যে কোনভাবে এনআরসি চালু করা যাবে না। মমতার কথায়, এনআরসি করবে বলছে বাংলায়। আমরা বলছি গায়ে হাত দিয়ে দেখ আমরা বুঝে নেবাে। সেই সঙ্গে মােদিকে কটাক্ষ করে তীব্র শ্লেষের সঙ্গে মমতা বলেন, বারাণসীর গঙ্গা পরিষ্কার করতে পারেন না আবার বাংলার দিকে তাকাচ্ছেন। বসন্তের কোকিলের মতাে আসেন উনি। এমন অসৌজন্যমূলক প্রধানমন্ত্রী আমি দেখিনি। এরপর উত্তরবঙ্গের মানুষদের সাক্ষী রেখে মােদিকে প্রশ্ন করেন মমতা। জানতে চান জলপাইগুড়ির বন্যার সময় মােদি কোন খোজ নিয়েছিলেন কিনা। উত্তরবঙ্গের চা বাগান নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের কোন নীতি নেই বলেও এদিন তুমুল সমালােচনা করেন মমতা। মােদিকে তােপ দেগে মমতা বলেন, মালিক শ্রমিক দ্বন্দ্বের জেরে মাঝে মধ্যেই বন্ধ হয়ে যায় চা বাগান। মমতার কথায় মাদারিহাটে দাঁড়িয়ে মােদি বলেছিলেন সাতটা চা বাগান অধিগ্রহন করবে কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু আজ পর্যন্ত একটাও করেননি। শুধু মিথ্যে কথা। বিভিন্ন কেন্দ্রীয় এজেন্সি গুলিকে কাজে লাগিয়ে তৃণমূলকে ভয় দেখাচ্ছে। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে ভীত নন তা এদিন স্পষ্ট জানিয়ে দেন। বলেন, এর আগে অনেক বন্দুক, বােমা দেখেছি। আমার সারা শরীর ক্ষতবিক্ষত কিন্তু আমাকে রােখা যাবে না। আতঙ্কে ভােগা মােদির পরাজয় হবে।
সুর চড়িয়ে মমতা বলেন, বাংলার নাম বদল আটকে রেখেছে ওরা। পাহাড়ের অশান্তির নেপথ্যে বিজেপি রয়েছে বলেও মমতা অভিযােগ করেন। বিজেপির আলিপুরদুয়ারের প্রার্থী জন বার্লারকে লক্ষ্য করে মমতা বলেন, তরাই ডুয়ার্সে দাঙ্গা করেছিল জন বার্লার। পাহাড় এবং সমতলে ভাগাভাগি করতে চেয়েছিল সেই আগুন নিভিয়েছি আমরা। পাহাড়ে শান্তি বজায় রাখার জন্য বিজেপি প্রার্থীদের ভােট না দেওয়ার জন্য সতর্ক করে দেন মুখ্যমন্ত্রী।