• facebook
  • twitter
Saturday, 23 November, 2024

হিন্দুত্বর আদর্শ নিয়ে গুরুবাদকেই অশ্রদ্ধা করছে বিজেপি: রাহুল

লালকৃষ্ণ আদ্‌বানিকে নির্বাচনে লড়াই থেকে সরিয়ে দিয়ে শাসকদল চরম অশ্রদ্ধার আচরণকে প্রশ্রয় দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী।

রাহুল গান্ধি

হিন্দুধর্মে গুরুকেই সর্বাধিক শ্রদ্ধার স্থান দেওয়া হয়ে থাকে। কিন্তু বিজেপি দলের অন্যতম গুরুস্থানীয় তথা দলের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির রাজনৈতিক গুরু লালকৃষ্ণ আদ্‌বানিকে নির্বাচনে লড়াই থেকে সরিয়ে দিয়ে শাসকদল চরম অশ্রদ্ধার আচরণকে প্রশ্রয় দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী।উল্লেখ্য, লালকৃষ্ণ আদবানি আগের দিনই সোশ্যাল মিডিয়ায় মন্তব্য করেছিলেন,বিজেপি কখনো সমালোচকদের ‘শত্রু’ বা ‘জাতীয়তা বিরোধী’ আখ্যা দেয়নি। দলের একজন প্রতিষ্ঠাতা সদস্যের প্রতি অবজ্ঞা প্রকাশ এবং কোনও আলোচনা ছাড়াই তাঁকে নির্বাচন ময়দান থেকে বাদ দেওয়ার নজির কোনও রাজনৈতিক দলের নেই বলে রাজনৈতিক মহলে চরম ক্ষোভের ঝড় উঠেছে।

দলের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য লালকৃষ্ণ আদবানির নির্বাচন ক্ষেত্র গুজরাটের গান্ধীনগর আসনে চলতি নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে দলের সভাপতি অমিত শাহর নাম ঘোষণা করা হয়েছে।এছাড়া অমিত শাহ গান্ধীনগর নির্বাচন ক্ষেত্রে তাঁর মনোনয়নও দাখিল করেছেন।

দলের এহেন আচরণে ক্ষুব্ধ ও হতাশ প্রবীণ নেতা লালকৃষ্ণ আদবানি, দলের পরিচালকদের গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক ঐতিহ্যকে রক্ষা করার ক্ষেত্রে দলের প্রথম দিকের কাজের খতিয়ান পর্যালোচনার দাবি জানান।তিনি অত্যন্ত ক্ষোভ ও হতাশার সুরে দলের কাজকর্মে অতীত,বর্তমান ও ভবিষ্যতের বিষয়টি পর্যালোচনা করা জরুরি বলে মন্তব্য করেছেন।

নির্বাচনের আগে শাসক দলের একজন জ্যেষ্ঠ নেতার এই হতাশার সুরকে কাজে লাগাতে উঠেপড়ে লেগেছে। এক নির্বাচনী সভায় কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী বলেন,’বিজেপি হিন্দুত্ব নিয়ে হইচই করে থাকে,তাদের দলের নীতিগত ভিত্তিও নাকি হিন্দুত্ব,কিন্তু হিন্দু ধর্মে যে গুরুকে শ্রেষ্ঠ মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করা হয় সে জ্ঞান তাদের নেই। বিজেপি তাদের গুরু পরম্পরার আদর্শকেই জলাঞ্জলি দিচ্ছে।এক্ষেত্রে মোদি তাঁর গুরু লালকৃষ্ণ আদবানিকে একেবারে  দলের বাইরে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছেন।’দেশের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আদবানিকে নরেন্দ্র মোদির গুরু বলে মানা হয়।লালকৃষ্ণ আদবানি রাজনৈতিকভাবে এতটাই প্রাজ্ঞ যে ২০১৩ সালে দলের পক্ষে তাঁকে প্রধানমন্ত্রী পদের প্রার্থী হিসেবে প্রচার করার প্রস্তাব উঠলে তা তিনি বিনয়ের সঙ্গে বাতিল করে দেন।কিন্তু বিজেপি তাঁর এই বিনয়কে অজ্ঞতা ভেবে ২০১৪ সালে ক্ষমতা দখলের পর তাঁকে মার্গদর্শক মন্ডল বা পরামর্শদাতা কমিটিভুক্ত করে দিতে পিছপা হয়নি।

প্রবীণ নেতার সোশ্যাল মিডিয়ায় মন্তব্যকে ঘিরে যখন রাজনৈতিক মহলের ঝড় বয়ে যাচ্ছে তখন,মোদি নির্লজ্জের মতো তার উত্তরে ট্যুইট করে বলছেন,’আদবানি যে দলের আদর্শের সঠিক নীতিকেই আবার তুলে ধরেছেন।তাঁর মন্ত্র হল দেশ আগে,দল পরে, আর ব্যক্তি সবার শেষে।আদবানিজির এই মন্তব্যে বিজেপির একজন কার্যকর্তা হিসেবে গর্ব অনুভব করি, কারণ তিনি দলের ভাবমূর্তিকে আরও শক্তিশালী করেছেন।’

রাহুল গান্ধী বিজেপির প্রতি তাঁর সমালোচনার ঝাঁঝ উস্কে দিয়ে বলেন, দেশের প্রধানমন্ত্রী দক্ষতাকে আমল দেন না।অথচ স্কিল ইন্ডিয়া নিয়ে প্রচার করছেন। চিনের সঙ্গে ভারতের কর্মসংস্থানের তুলনা করে তিনি বলেন,চিন দিনে ৫০,০০০ কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে। অন্যদিকে ভারতে ২৪ ঘন্টায় ২৭০০০ কর্মসংস্থানের সুযোগ নষ্ট হচ্ছে।শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির সঙ্গে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলির কোনও সম্যক সংযোগ নেই।শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের যোগাযোগই কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে থাকে।শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে এই যোগাযোগ সৃষ্টির ক্ষেত্রটি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে।এটি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে।

কংগ্রেস সভাপতি সভাশেষে অর্থনীতি,মহিলাদের ক্ষমতায়ন এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের সংরক্ষণ বিষয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে শিক্ষাব্যবস্থা এবং স্বাস্থ্যসুরক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নের দিশার কথা বলেন।রাজনীতিতে ভালোবাসা ও মমতার স্থান নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে রাহুল জানান, ‘তিনি নরেন্দ্র মোদিকে অত্যন্ত ভালোবাসেন,তাঁর প্রতি কোনও ঘৃণা বা হিংসা পোষণ করেন না।কিন্তু তিনি আমার প্রতি বিরূপ।’