অবশেষে স্বক্তি এল গাঙ্গুলি পরিবারে। চনমনেই রয়েছেন সৌরভ গাঙ্গুলি। শনিবার আচমচাই মাথা ঘুরে পড়ে গিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর সকলের মনের মধ্যে যে চিন্তা ঢুকে গিয়েছিল, সেখান থেকে চিকিত্সকদের তৎপরতায় শনিবারই সৌরভ গাঙ্গুলিকে বিপদের মুখ থেকে বার করে আনতে পেরেছিলেন। শনিবার রাতে হালকা খাবার খাওয়ার পর নিশ্চিন্তে ঘুমিয়েছিলেন রবিবার তা হাসপাতালের পক্ষ থেকে জানানাে হয়।
এছাড়া মেয়ে সানা ও স্ত্রী ডােনার সঙ্গে কথাও বলেছেন। দাদা স্নেহাশিস গাঙ্গুলির সঙ্গেও রবিবার কথা বলেছেন। তিনি যে এখন আগের থেকে অনেকটাই সুস্থ রয়েছেন সেটা তার পুরানাে মুখের হাসিটা দেখে বােঝা যাচ্ছে। চিকিৎসকদের সঙ্গে রবিবার সকালে নিজেই কথাবার্তা বলেছেন। তবে প্রশ্ন তাে একটাই থেকে সৌরভ গাঙ্গুলির মতন খেলােয়াড় এবং নিয়ন্ত্রিত ব্যক্তির হঠাৎই হৃদরােগ কেন হল? তাহলে কি সৌরভ গাঙ্গুলির ওপর ইদানীং খুব চাপ পড়ছে? তিনি কি নিজের খেয়াল রাখছেন না? তার রাতে কি ঠিক করে ঘুম হচ্ছে না? তিনি কি কোন চিন্তার মধ্যে রয়েছেন? খাওয়া-দাওয়া সময়মতাে করছেন না?
এত সব প্রশ্নের উত্তর এখন সকলের মনের মধ্যে ঘােরাফেরা করছে। কারণ চিকিৎসকদের মতে অতিরিক্ত চাপ ও নিয়মিত সময় মত না খাওয়া-দাওয়া এবং রাতে ঠিক মতন ঘুম না হলে এরকম ঘটনা ঘটতেই পারে। সৌরভ গাঙ্গুলির ক্ষেত্রেও ঠিক এইরকমই ঘটনা ঘটেছে। অবশ্য আমাদের সকলের প্রিয় দাদা’র এখন অনেকটাই চাপ বেড়েছে আগের থেকে। আগে দলের অধিনায়ক হিসাবে যতটা না বেশি চাপ ছিল তার উপর এখন তার দ্বিগুণ চাপ পড়ছে। বিসিসিআইয়ের সভাপতির কাজের পাশাপাশি বিভিন্ন বিজ্ঞাপণে শুটিং করা। এবং একটি টিভি শােয়ের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে রয়েছেন।
সব মিলিয়ে সময় পান না ঠিক মতন। তাই এতাে চাপের জন্যই তার আজ এই অবস্থা হয়েছে সেটা অনেকেই মনে করছেন। দাদা’কে সুস্থ থাকতে গেলে চিন্তা থেকে দুরে সরে গিয়ে সময়মত খাওয়া-দাওয়া এবং নিয়মিত শরীরচর্চার পাশাপাশি রাতেও চিন্তামুক্ত হয়ে ভালাে করে ঘুমােতে হবে তাহলেই তিনি আগের মতন আবারও ফিট হয়ে উঠবেন সেটা নিশ্চিতভাবে বলা যায়।
তবে রবিবার সকলেই কিছুটা চিন্তামুক্ত হয়েছেন কারণ সৌরভ গাঙ্গুলি স্বাভাবিক হয়ে উঠছেন এই খবরটা শােনার পর। এখন সকলেই ভগবানের কাছে প্রার্থনা করছেন সৌরভ তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠে পুনরায় মহারাজের স্টাইলে ফিরে আসুন বাড়িতে। এবং নিজের রাজ্যে আধিপত্য বিস্তার লাভ করুক।
স্বস্তির খবর এটাই আপাতত সুস্থ রয়েছেন সৌরভ গাঙ্গুলি। শনিবার আচমকাই শরীরচর্চা করতে গিয়ে বাড়িয়ে মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছিলেন। তারপর সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। দিনভর শনিবার দাদা’কে নিয়ে সকলেই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলেন। তবে তিনি সুস্থতার পর স্থিতিশীল ছিলেন, এমনটাই জানানাে হয়েছিল শনিবার ডাক্তারদের পক্ষ থেকে। শনিবার রাতে হালকা খাবারও খেয়েছিলেন।
এবং রাতে ভালাে ঘুম হয়েছে বলে রবিবার জানানাে হয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে। তবে দাদা’র বাইপাস অস্ত্রোপচার করা হবে না। শনিবার একটি সেন্ট বসানাে হয়েছিল। আরও দুটো সেন্ট বসানাে হবে বলে জানা গিয়েছে। যে ধমনীতে বেশি ব্লকেজ ছিল তা এখন পুরােপুরি মুক্ত।
চিকিৎসকদের সঙ্গে সহযােগিতা করছেন দাদা। গল্পও করেছেন দাদা এমন কথাও জানানাে হয়েছে। রবিবার সকালেই হাসপাতালে সৌরভের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন সিপিএম নেতা এবং শিলিগুড়ির পুরপ্রশাসক অশােক ভট্টাচার্য। এছাড়া শনিবারের পর রবিবারও সৌরভের সঙ্গে দেখা করেন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। পাশাপাশি দাদার সঙ্গে দেখা করেছেন কংগ্রেসের রাজ্য সভার সদস্য প্রদীপ ভট্টাচার্যও।
দক্ষিণ কলকাতার যে হাসপাতালে সৌরভ গাঙ্গুলি ভর্তি রয়েছে, তাদের তরফে জানানাে হয়েছে এক মাসের মধ্যেই পুরােপুরি সুস্থ হয়ে উঠবেন সৌরভ। রবিবার সকালে এও জানানাে হয়েছে দাদা’র জ্বরও নেই। রক্তচাপ এবং নাড়ির গতিও স্বাভাবিক। সৌরভের অক্সিজেন সার্পোট খুলে নেওয়া হয়েছে। সকালের ইসিজি রিপাের্টও স্বাভাবিক আগামি দু দিন চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণেই রাখা হবে তাকে।
ফিটনেস ট্রেনার রণদীপ মৈত্র বলেন সৌরভের ওপর ইদানীং কালে অতিরিক্ত চাপ পড়ছে সেটা আমরা সকলেই দেখতে পাচ্ছি। ভারতীয় ক্রিকেট বাের্ডের দায়িত্ব পাওয়ার পর তিনি আরাে বেশি চাপ অনুভব করছেন। কর্পোরেট দুনিয়ার কাজের চাপ অনেক সময়েই শরীরের ওপর প্রভাব ফেলে। একটা গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন সৌরভ। তার ওপর চাপ পড়ছে সেটা তিনি নিশ্চয়ই বুঝতে পারতেন।
তাই তার নিয়মিত শারীরিক পরীক্ষা করানাের প্রয়োজন ছিল। সৌরভের যেটা হয়েছে, এটা খুব স্বাভাবিক ব্যাপার এটা। যেকোনাে মানুষের হতে পারে। কারণ, প্রতিটা মানুষের মধ্যেই চিন্তা রয়েছে সেখান থেকে হৃদরােগে আক্রান্ত হওয়াটা স্বাভাবিক ব্যাপার। আমি তাে মনে করি, বয়স চল্লিশের গন্ডি পার করলেই নিয়মিত শারীরিক চিকিৎসা করানাে উচিত।
এবং চিকিৎসকদের পরামর্শ নিয়ে চলা উচিত। সৌরভ একজন খেলােয়াড় সে তাে সাধারণ মানুষের থেকে আরাে ফিট। সেখানে সে সবকিছুই জানে। তা হলে কেন এত চাপ পড়ার পরও নিজের শরীরে দিকে খেয়াল রাখল না সেটা বুঝতে পারলাম না। যদি সৌরভ একটু নিজের শরীরের দিকে খেয়াল রাখত এবং চিকিৎসকদের সঙ্গে পরামর্শ করতে পারত তা হলে হয়তাে তাকে এই দিনটার মুখােমুখি হতে হত না।
জানা গিয়েছে, হৃদরােগে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা সৌরভের প্রথম না-ও হতে পারে। এর আগেও সম্ভবত একবার মৃদু হৃদরােগে আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি। তবে সে সময় বুঝতে পারেননি। অনেকে বলছেন তার পারিবারিক ইতিহাসের কথাও। তার বাবা চণ্ডী গাঙ্গুলিও হৃদরােগে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছিলেন। সে কারণেই সৌরভের আরও বেশি করে সতর্ক থাকা উচিত ছিল।
এখন কিছুটা নিজের শরীরের অবস্থার কথা শুনে দাদা বিষগ্ন হয়ে পড়েছেন। তিনি নিজেও বুঝতে পেরেছেন পুরাে ব্যাপারটা। তবে চিকিৎসকরা তাকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করছেন ঘাবড়ানাের কোনও ব্যাপার হয়নি।
তার নাড়ির গতিবেগ, রক্তচাপ সবই স্বাভাবিক রয়েছে। তবে ভবিষ্যতে যে শরীরের খেয়াল রাখতে হবে এ বিষয়টাও তার বারবার উল্লেখ করেছেন।
এদিকে চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, হাসপাতালে সৌরভের অ্যাঞ্জিয়ােগ্রাফি করে দেখা গিয়েছিল, তার হৃদপিন্ডে তিনটি ধমনীতে ব্লক রয়েছে। তার মধ্যে ডানদিকের ধমনীতে প্রায় নব্বই শতাংশ ব্লক রয়েছে। বাকি দুটিতে সত্তর শতাংশ ব্লক রয়েছে। তখনই অ্যাঞ্জিয়ােপ্লাস্টি করে ডানদিকের ধমনীতে একটি সেন্ট বসানাে হয়েছে। উনি সচেতন রয়েছেন। কথাবার্তাও বলছেন।
মেডিক্যাল বাের্ডের এক সদস্য হৃদরােগ চিকিৎসক সরােজ মন্ডল বলেন, অন্য যে দুটি ধমনীতে কম-বেশি সমস্যা রয়েছে, তা নিয়ে বাের্ড পরে প্রয়ােজনীয় পদক্ষেপ করবে। চিকিৎসকদের মতে, ধূমপান, অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ, হাই কোলেস্টেরল, অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ ডায়াবিটিস, স্থূলতা, অত্যধিক জাঙ্ক ফুড, ঘুম কম হওয়া, অত্যধিক স্ট্রেসের কারণে সাধারণত হৃদরোগ আক্রান্ত হয় সাধারণ মানুষ। কিন্তু ধূমপান না করা, নিয়মিত শরীরচর্চা, নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন করার পরেও সৌরভের এমন কেন হল সেটাই এখন ভাবাচ্ছে চিকিৎসকদের।
সকলের প্রিয় তিনি। তাই তার এই পরিস্থিতি দেখে কেউ নিজেকে আর ধরে রাখতে পারছেন না। সকলেই ছুটে আসছেন সৌরভকে দেখার জন্য। শনিবার গােটা রাত স্ত্রী ডােনা গাঙ্গুলি, সৌরভের সঙ্গেই থেকেছেন। রবিবার সকালে আবারও বাবার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন মেয়ে সানা। তার কিছু পরেই ডােনাকে বেরােতে দেখা যায়। বেরােনাের সময় ডােনা বলেন, ভাল আছে। কথাবার্তা বলছে। এছাড়া রবিবার সকালে সৌরভকে দেখতে এসেছিলেন বৈশালী ডালমিয়াও।
তিনি সৌরভকে দেখে বেরােনাের পর গাড়িতে ওঠার সময় বলেন, জয় শাহর তরফে সৌরভকে দিল্লি বা মুম্বইতে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। সবাই চাইছেন ওর উন্নত থেকে উন্নত চিকিৎসা হােক। তবে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন ডাক্তাররাই। শােনা যাচ্ছে, সৌরভের চিকিৎসার জন্য চিকিৎসক দেবী শেঠির পরামর্শ নেওয়া হতে পারে।