পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের জন্য ট্যাবলেট ও ল্যাপটপ দেওয়ার কথা ঘােষণা করায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে উৎসাহ উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে। অনলাইনে পাঠাভ্যাস করার সুবিধার জন্যই তিনি এমন উন্নত প্রযুক্তিযুক্ত যন্ত্র দেওয়ার কথা ঘােষণা করেন। কিন্তু পরবর্তীতে শিক্ষামন্ত্রী সংশ্লিষ্ট দুইটি পরীক্ষা আগামী বছরের জুন মাসে অনুষ্ঠানের কথা ঘােষণা করায় শিক্ষার্থীরা প্রচলিত পদ্ধতিতেই তাদের পাঠাভাস করতে পারবেন বলে মনে করা হচ্ছে। ফলে ল্যাপটপ বা ট্যাবলেট দেওয়ার আর প্রয়ােজন হবে না।
কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী একবার বিষয়টি ঘােষণা করেছেন তা কি আর প্রত্যাহার করা হবে এ প্রশ্ন উঠতে পারে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট বিষয়টি বাক্তবায়িত করার জন্য যে সকল সংস্থার সঙ্গে সরকারের আলােচনা হয়েছে তারা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এত সংখ্যক ল্যাপটপ বা ট্যাবলেট দিতে অপারগতার কথা জানিয়েছে।
এক্ষেত্রে আরও কয়েকটি বিষয় খােলসা না হওয়ায় বিভিন্ন মহলে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। যেমন কলকাতা ও সন্নিহিত নির্দিষ্ট সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরই যদি শুধুমাত্র এই ল্যাপটপ ও ট্যাবলেট দেওয়া হয় এবং কলকাতায় অবস্থিত সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত বিদ্যালয় বা বেসরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যদি বঞ্চিত হয় তবে একটা বৈষম্যের সৃষ্টি হবে। কম্পিউটার উৎপাদন সংস্থাগুলি কেভিড অতিমারির আবহে উৎপাদন বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে কোনও নিশ্চয়তা দিতে পারছে না।
অন্যদিকে ট্যাবলেট উৎপাদনকারী সংস্থাগুলি। সাধারণ নির্দিষ্ট সংখ্যক চাহিদার দিকে তাকিয়েই তা উৎপাদন করে থাকে। কয়েকটি এমন সংস্থা মাসে মাত্র পনেরাে হাজার ট্যাবলেট সরবরাহ করতে পারে বলে সরকারকে জানিয়েছে। ফলে চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য দেখা দেবে।
একারণে সরকারিভাবে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে দশ হাজার টাকা করে পাঠিয়ে দিয়ে তাদেরই সংশ্লিষ্ট ডিজিটাল যন্ত্রটি কিনে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। রাজ্যে তথা কলকাতা শহরে বেশকিছু কর্পোরেট সংস্থা পরিচালিত বিদ্যালয়ে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থায় শিক্ষাদানের প্রচলন রয়েছে। তাদের বাস গুলিও শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। কিন্তু নির্দিষ্ট মান অনুযায়ী শিক্ষা দান করা ভিন্ন কথা।
৩ ডিসেম্বর মুখ্যমন্ত্রীর ঘােষণা রাজ্যের চৌদ্দ হাজার সরকারি এবং সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত বিদ্যালয় এবং ৬৩৬ মাদ্রাসার দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদেরই ট্যাবলেট দেওয়া হবে। আসন্ন নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে মুখ্যমন্ত্রী। তার ঘােষণা মতাে ট্যাবলেট দেওয়ার প্রতিশ্রুতি থেকে বিচ্যুত না হওয়ার দিকেই পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। কয়েকটি সংস্থা সরকারকে জানিয়েছে তারা এখন তারা দেড় লাখের মতাে ট্যাবলেট সরবরাহ করতে পারবে। তবে চিনের তৈরি কোনও ট্যাবলেট যাতে সরবরাহ না করা হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা হবে।
একারণেই সরকার সিদ্ধান্ত বদল করে প্রত্যেক দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীকেই দশ হাজার টাকা করে দেওয়ার কথা ঘােষণা করা হয়েছে। বাজেট বহির্ভুত এমন অর্থ দেওয়ার বিষয়ে কোনও পক্ষই কোনও আপত্তি তুলবে না কারণ অর্থ যাচ্ছে, শিক্ষাখাতে। কিন্তু প্রশ্ন হল সরকারি অর্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়েই ব্যয় হচ্ছে কিনা। তার খোঁজ কি সরকার নেওয়ার ব্যবস্থা করেছে? যাতে শিক্ষার্থীদের কল্যাণের জন্য দেওয়া অর্থের অপব্যবহার না হয়। অর্থ পাঠানাের আগে আমলার বিষয়টি নিশ্চিত করার কথা বলেছেন। কিন্তু সরকারি পরীক্ষায় মরসুমে সরকারি আর্থের অপচয়ের আশঙ্কাই করছেন অধিকাংশ মানুষ।