হাথরাস গণধর্ষণে মূল অভিযুক্ত সন্দীপের সঙ্গে দলিত তরুণীর প্রেমের একট সম্পর্ক যে একটু সময় পর্যন্ত ছিল তা সিবিআই-র চার্জশিটে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে। হাথরাস গণধর্ষণে এই সন্দীপ ছাড়াও আরও তিন জনের নাম সিবিআই তাদের চার্জশিটে দিয়েছে।
স্বাভাবিকভাবেই যে প্রশ্নটা ওঠে, তা হল প্রেমের সম্পর্কই যদি থাকবে তাহলে গণধর্ষণ কেন? কেন্দ্রীয় গােয়েন্দারা কীসের ভিত্তিতে দু’জনের রােমান্টিক সম্পর্কের কথা বলেছেন? চার্জশিটে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালের ১৭ অক্টোবর থেকে ২০২০ সালের, মার্চের মধ্যে হাথরাসের দলিত তরুণীর সঙ্গে সন্দীপের ১০৫ বার ফোনে কথা হয়েছে।
কিন্তু তার পরেই ওই তরুণী সন্দীপকে এড়িয়ে যেতে থাকে। এই উপেক্ষা মেনে নিতে পারেনি হাথরাস কাণ্ডের মূল অভিযুক্ত। সম্পর্কের দূরত্ব তাকে হতাশাগ্রস্ত করে তুলেছিল। কিন্তু কি কারণে ওই তরুণী সন্দীপকে এড়িয়ে যাচ্ছিলেন, চার্জশিটে তারও উল্লেখ রয়েছে। হাথরাসের দলিত পরিবার দাবি করে এর আগে তারা কখনও সন্দীপের সঙ্গে কথা বলেনি।
কিন্তু কেন্দ্রীয় গােয়েন্দাদের তদন্তে উঠে এসেছে এই বয়ান অসত্য। সন্দীপের সঙ্গে সম্পর্ক প্রকাশ্যে আসার পর ওই তরুণীর পরিবারের সদস্যরা যে কোনও কারণেই হােক, বেঁকে বসেন। সন্দীপের বাড়ির বাইরে তারা ঝগড়াও করে এসেছেন। তারপর থেকেই আর দুজনের মধ্যে কথা হয়নি।
চার্জশিট অনুযায়ী এরপর থেকে সন্দীপ অনেকবারই ওই তরুণীর সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করে। আত্মীয় ও বন্ধুদের একাধিক ফোন থেকে কথা বলার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। ওই তরুণী একবারও ফোন ধরেনি। এই উপেক্ষাই নাকি হতাশাগ্রস্ত করে তুলেছিল সন্দীপকে। তার ধারনা হয়, ওই দলিত তরুণী তার জামাইবাবুর সঙ্গে প্রণয়ের সঙ্গে জড়িয়েছে।
ঘটনার দিন অর্থাৎ ১৪ সেপ্টেম্বর মা ও দাদার সঙ্গে সকাল সাড়ে সাতটায় ঘাস কাটতে গিয়েছিল ওই তরুণী। কিছুক্ষণ পরে তরুণী মাকে জানান, আর ঘাস কাটতে পারছেন না। ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। মা তখন তাকে কেটে রাখা ঘাস জড়াে করতে বলে ৫০ মিটার দুরে যান। কয়েক মিনিট পর তিনি যখন ফিরে আসেন, তখন আর মেয়েকে দেখতে পাননি।
খোঁজাখুঁজির পর অদূরেই একটি বাজরা খেতে মেয়ের একপাটি চপ্পল দেখতে পান। সন্দেহ হওয়ায় বাজরা খেতের মধ্যে ঢুকে দেখেন মেয়ে সেখানে পড়ে রয়েছে। ততক্ষণে ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায় ঘটনার মূল সাক্ষী ছােটু। এই ছােটুই ওই তরুণীর দাদাকে বাড়ি থেকে ডেকে আনে। এরপর দাদা বােনকে কাঁধে তুলে স্থানীয় থানায় হাজির হন।
সিবিআই-র চার্জশিটে পুলিশের বিরুদ্ধে একাধিক ক্ষেত্রে গাফিলতির অভিযােগ আনা সিবিআই-র চার্জশিট অনুযায়ী থানায় পুলিশের কাছে দেওয়া বয়ানে ওই তরুণী জবরদস্তি শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন। বলেছিলেন তাঁর ওপর জবরদস্তি করা হয়েছে। তার পরেও পুলিশ যৌন নিগ্রহ হয়েছে কিনা সে ব্যাপারে জানতে মেডিকেল পরীক্ষার নির্দেশ দেয়নি। তার আগে তরুণীর দাদা থানায় গিয়ে প্রথমেই সন্দীপের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছিলেন। লিখিতভাবে জানিয়েছিলেন, মা-বােনকে খুঁজে পাওয়ার পরেই অভিযুক্ত ঘটনাস্থল থেকে দ্রুত পালিয়ে যায়।
পুলিশ যৌন নিগ্রহের বিষয়টিতে গুরুত্ব দিয়ে খুনের চেষ্টা ও তপশীলি জাতি-উপজাতি আইনে ওই মামলা রুজু করেছিল। ওই দিনই জেলা হাসপাতাল থেকে আলিগড় হাসপাতালে নির্যাতিতাকে স্থানান্তরিত করার প্রয়ােজন পড়ে। তার গুরুতর শারীরিক অবস্থার কারণ জানতে চেয়ে মেডিকো-লিগাল রিপাের্ট করাতে দেয়নি পুলিশ। ফলে হাথরাসের পুলিশের বিরুদ্ধে আবারও প্রশ্নটা উঠেছে তারা কি সত্যিই ঘটনাটি চেপে যেতে চেয়েছিল?