জাপানের ট্যুইটার কিলার তাকাহিরাে শিরাইশির মৃত্যুদণ্ড দিল আদালত। ২০১৭ সালেই কুখ্যাত এই সিরিয়াল কিলার পুলিশের হাতে ধরা পড়েছিল। তিন বছর ধরে শুনানি চলার পর টোকিওর আদালত মঙ্গলবার তাকাহিরাে। শিরাইশির মৃত্যুদণ্ডের সাজা ঘােষণা করে। চাঞ্চল্যকর এই মামলার রায় শুনতে এদিন আদালত চত্বরে ছিল উপচে পড়া ভিড়। আদালত কক্ষে আম জনতার জন্য ১৬ টি আসন বরাদ্দ থাকলেও সেখানে উপস্থিত ছিলেন ৪৩৫ জন।
শিকার ধরতে ট্যুইটারকেই বেছে নিয়েছিল মানসিক বিকারগ্রস্ত এই যুবক। এই সােশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে কেউ আত্মহত্যার ইচ্ছে প্রকাশ করলে তাদের নিশানা করতাে তাকাহিরাে। আলাপ জমিয়ে ডেকে আনত নিজের অ্যাপার্টমেন্টে। সেই আত্মহত্যা-উন্মুখ হতাশাগ্রস্তদের সামনে এমন ভান করতাে যেন সে নিজেও আত্মহত্যা করতে চলেছে। তাকাহিরাে সকলকে বড়িতে ডেকে এনে প্রথমেই বলত, নিজের জীবন শেষ করার ক্ষেত্রে সে সাহায্য করতে পারে। সেই ফাঁদে পা দিয়েই মারা গিয়েছেন একের পর এক মানুষ। এভাবেই সে হয়ে ওঠে টুইটার কিলার।
একটা খুনের নেশা থেকে আর একটা খুনই তাকে করে তােলে সিরিয়াল কিলার। পুলিশের কাছে স্বীকারােক্তি অনুযায়ী সে মােট ন’জনকে খুন করেছে। এই নজনের মধ্যে একজন শুধু পুরুষ। তাকাহিরাের হাতে খুন হওয়া কোনও এক তরুণীর প্রেমিক। মুখ বন্ধ করতেই তাঁকে খুন করা হয়েছিল। বাকি আট শিকারের ক্ষেত্রে নাবালিকা থেকে যুবতী– নানা বয়সের মহিলারা ছিলেন। সােশ্যাল মিডিয়ায় তাকাহিরাের নাম ছিল হ্যাংম্যান।
এই ন’জনকে খুন করার কথা অস্বীকার করেনি বছর তিরিশের এই যুবক। অবশ্য অস্বীকারের কোনাে উপায়ও ছিল না। কারণ নিজের অ্যাপার্টমেন্টেই সে রেখেছিল মৃতদেহগুলি। পুলিশি অভিযানের সময় তার অ্যাপার্টমেন্ট থেকেই বিকৃত এই মৃতদেহগুলি উদ্ধার করা হয়েছিল।
পুলিশের জেরায় এই সিরিয়াল কিলারের স্বীকারােক্তি ছিল, খুনের আগে সে প্রত্যেককে ধর্ষণও করেছিল। খুনের পর কসাইয়ের মতাে দেহগুলি টুকরাে করেছে। শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ।
এই ট্যুইটার কিলারের আইনজীবীরা তাকে বাঁচানাের চেষ্টার কসুর করেননি। তাদের যুক্তি ছিল নিহতরা সকলেই সােশ্যাল মিডিয়ায় তাদের জীবন শেষ করে দেওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন। তাই তাদের সাহায্য করেছে তাকাহিরাে। বিচারককা অবশ্য সে যুক্তি মানেননি।
তারা জানিয়ে দেন-হতে পারে তারা আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু কেউ তাকাহিরােকে তাদের খুন করার অনুমতি দেয়নি। এর পরেই আদালত তাকাহিরাের মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয়। তাকাহিরাের হাতে খুন হওয়া এক তরুণীর বাবার প্রতিক্রিয়া- এই লােকটাকে আমি ওর মৃত্যুর পরেও ক্ষমা করতে পারব না।