একের জুতাে অন্যের পায়ে যন্ত্রণার কারণ। রাজস্থানের কোটাস্থিত সরকারি হাসপাতাল জে কে লােন হাসপাতালে বৃহস্পতিবারই নয়টি সদ্যোজাত শিশুর মৃত্যুতে হইচই পড়ে যায়। গতবছর এই হাসপাতালেই এমন শিশু মৃত্যুর খবরে হইচই পড়েগিয়েছিল। রাজ্যের বিরােধীদল ভারতীয় জনতা পার্টির পক্ষে হইচইয়ের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করতে থাকে। বিরােধীদের দাবি মুখ্যমন্ত্রী অশােক গেহলটের অধীনে রাজ্যের স্বাস্থ্য যে বেহাল তার প্রমাণ শিশু মৃত্যু।
কিন্তু বিজেপি শাসিত মধ্যপ্রদেশের সরকারি হাসপাতালের বিদ্যুৎ সরবরাহ হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়া ও জরুরিকালীন ব্যবস্থা হিসেবে রাখা জেনারেটরের কাজ না করার ফলে বেশ কিছু কোভিড আক্রান্ত মানুষের মৃত্যু হয় বলে অভিযােগ। এবার কংগ্রেস দলের পক্ষে মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহানের বিরুদ্ধে সমালােচনার তির ঘুরিয়ে দেওয়া। খুবই সহজ হয়েছে। দুটি ঘটনাতেই তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তদন্তের সমাপ্তি ঘটবে কোনও ক্ষেত্রেই তেমন গাফিলতি হয়নি, এর পর আর যেন এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয় তা দেখতে হবে-এমন মন্তব্য দিয়ে। মধ্যপ্রদেশ , রাজস্থান বা দেশের অন্য কোনও রাজ্যেরই স্বাস্থ্য নিয়ে যে তেমন মাথাব্যথা নেই তা বলাই বাহুল্য।
সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থা হচ্ছে, হবে এমন করেই নাকি চলবে। এর ফলে বেসরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদায়ক সংস্থাগুলির স্বাস্থ্য দিন দিন স্ফীত হচ্ছে। রাজ্য সরকারগুলি কি বেসরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদায়ক সংস্থা গুলির স্বাস্থ্য ফেরানাের জন্য এমন অবস্থা কায়েম করে রেখেছে বলে- প্রশ্ন বিশেষজ্ঞ মহলের। কয়েক সপ্তাহ আগেই মধ্যপ্রদেশের শাসকদল সরকারি হাসপাতালে ছয় সদ্যোজাত শিশু মৃত্যু হয়। ২০১৭ সালে মধ্যপ্রদেশের বিদিশা সরকারি হাসপাতালে ২৪, শাসকদলে ৩৬, উত্তরপ্রদেশের ফারুখাবাদে ৪৯ গোরক্ষপুরে ৬০ শিশুর মৃত্যু হয়।
সরকারি হাসপাতালে শিশু মৃত্যুর অন্যতম কারণ চিকিৎসার গাফিলতি ও পরিকাঠামাের ঠিকমতাে সময়ে কাজ না করাকেই চিহ্নিত করা হয়েছে। এমন কোনও সময় নেই যখন দেশের কোনও না কোনও প্রান্ত থেকে এমন ঘটনার খবর পাওয়া যায় না। করোনা আবহের বঙ্গ আগে থেকেই এই রােগের প্রকোপ রয়েছে দেশে। করোনা সংক্রমণের প্রাবল্যের সময়ে অন্য নেতাদের প্রকোপ বরং অনেক কম হয়েছে। এসময়ে করােনার চিকিৎসায় হাসপাতালগুলির সকল কর্মী ও চিকিৎসকরা দিনরাত এক করে করােনা মােকালািয় কাজ করছেন। কিন্তু অন্য রােগের চিকিৎসায় গাফিলতি চরম পর্যায়ে পৌঁছায়। বর্তমানে করােনা সংক্রমণ কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আসায় সরকারি হাসপাতালগুলি তাদের পুরনাে ছন্দে কাজ করতে শুরু করেছে।
ভারতের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এতটাই গায়াংগ গতি চলে যে কোনও দল শাসন ক্ষমতায় এল ,আর কোন দল এল না অত্র কোনও পার্থকাই নেই। হাসপাতালগুলির পরিকাঠামাে রােগীর ভারে ভারাক্রান্ত। কিন্তু সরকারি বরাদ্দ স্বাস্থ্যখাতে কোনও সময়েই উল্লেখযােগ্য পরিমাণে বাড়ে না। কিন্তু করােনা অতিমারি দেশের স্বাস্থ্যক্ষেত্রে উল্লেখযােগ্য বিনিয়ােগের দিকটি নির্দেশ করেছে। করোনা অতিমারি নিপুণ ও ভ্যাকসিন মানুষের সাধ্যের মধ্যে আনা সম্ভব হলেই করােনার ভয়াবহতা নিয়ে গুজবের অবসান হতে পারে। আর মানুষের স্বাস্থ্যর হাল পুনমূষিক হবে। কারণ সরকার সাধারণ মানুষের প্রাণের জন্য অধিক ব্যয় করতে রাজি নয়।