দু’দিনের বঙ্গ সফরে পা রেখেই রাজ্যের শাসকদলের সুপ্রিমাে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশানা করলেন বিজেপি সভাপতি জে পি নাড্ডা। তাঁর সাথেই দলের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সুরেই বাংলায় দুশাে আসন জয়ের ঘােষণা করলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি।
বুধবার দুপুরে দু’দিনের বঙ্গ সফরে আসেন জেপি নাড্ডা। তাঁর এই আগমনকে কেন্দ্র করে বিজেপি কর্মী সমর্থকদের মধ্যে উৎসাহ উদ্দীপনা ছিল চরমে। আর প্রথম দিনেই নাড্ডা’র বঙ্গ সফর ঘটনাবহুল হয়ে থাকল।
এদিন নাড্ডার প্রথম কর্মসূচি ছিল হেস্টিংসে রাজ্য বিজেপির কেন্দ্রীয় নির্বাচনী কার্যালয় উজাধন। সেখান থেকেই কর্মী সমর্থকদের মনােবল চাঙ্গা করতে এ দিকে যেমন দুশাে আসন জয়ের কথা ঘােষণা করেন, তেমনি ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে উৎখাত করার ডাক দেন তিনি।
এদিন তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম নিয়েও আক্রমণ করেন। তিনি বলেন, মমতার আর এক নাম অসহিষ্ণুতা। রাজ্যে তৃণমূল সরকারের আমলে অসহিষতা বেড়েই চলেছে। নাড্ডার কথায়, রাজ্যে ১৩০ জন বিজেপি কর্মীর মৃত্যু হয়েছে। আমি নিজে ১০০ জনের তর্পণ করেছি। এটা কোন বাংলা? তাঁর দাবি, বাংলায় রাজনৈতিক অসহিষ্ণুতার পরিচয় দিয়ে চলেছে তৃণমূল।
প্রসঙ্গত, এদিন হেস্টিংস থেকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে বিভিন্ন জেলায় বিজেপির ৯ টি নির্বাচনী কার্যালয়েরও উদ্বোধন করেন নাড্ডা। এদিন তিনি জানান, আগামী দিনে মােট ৩৮ টি কার্যালয় তৈরি হবে। ই-লাইব্রেরি থাকবে প্রতি কার্যালয়ে। কনফারেন্স হল থাকবে। বড় সভা করার জায়গা থাকবে। সেই সঙ্গে তিনি বলেন, পার্টি অফিস আর কার্যালয়ে অনেক তফাৎ। বিজেপি কার্যলয়ে বিশ্বাস করে। কার্যালয় আসলে সংস্কারের কেন্দ্র।
এরপরেই কর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, বিরােধীদের কোনও হিসেব মিলবে না। একুশে বাংলায় ক্ষমতায় আসছে বিজেপি। রাজ্যে সংগঠন বিস্তারে সঙ্গে ধৈর্য ধরতে হবে। কেউ এরাজ্যে বিজেপিকে ঠেকাতে পারবে না। বিহার বিধানসভা নির্বাচনে অনেকেই অনেক কথাই বলেছিল। অনেক সেফলজিস্ট ভবিষ্যবাণী করেছিলেন, এবার বিজেপির কোনও চান্স নেই। বিহারের মানুষ দেখিয়ে দিয়েছে। ভবিষ্যতবাণী যারা করেছিলেন। তারা জানত না কেন্দ্রে রয়েছে মােদিজির সরকার।
নাড্ডা আরও বলেন, মধ্যপ্রদেশ, মণিপুর, তেলঙ্গানা, হায়দরাবাদের পুরসভা নির্বাচন, রাজস্থানে পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদের নির্বাচনের ফল দেখুন। বিহারে আমরা ৭৪ আসন জিতেছি। সব জায়গায় জিতেছে বিজেপি। এরাজ্যেও বিজেপিকে থামানাের মতাে কোনও শক্তি নেই। আপনাদের ভরসা দিচ্ছি, একুশের বিধানসভা নির্বাচনে বাংলায় দুশাে আসন পেয়ে ক্ষমতায় আসবে বিজেপি সরকার।
রাজ্যে বিজেপির ক্রমাগত সাফল্যের খতিয়ান তুলে ধরে নাড্ডা বলেন, ২০০১ সালে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি ভােট পেয়েছিল মাত্র ৪ শতাংশ। কোনও আসন ছিল না। ২০১৪ সালে বিজেপি রাজ্যে ২ টি আসন দখল করে। ভােট বেড়ে হয় ৯ শতাংশ। ২০১৮ সালে আমরা পেয়েছি ১৮ লােকসভা আসন। ভােট বেড়েছে ৪০ শতাংশ। তাই ধৈর্য ধরুন।
এদিকে, এদিন দমদম বিমানবন্দরে তাঁকে স্বাগত জানাতে উপস্থিত হন রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘােষ, সর্বভারতীয় সহ সভাপতি মুকুল রায়, কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অনুপম হাজরা, সাংসদ রূপা গঙ্গোপাধ্যায় সহ অন্যান্যরা। সেখানে দলীয় সহকর্মীদের থেকে সংবর্ধনার নেওয়ার পর হেস্টিংসে পৌঁছতেই আচমকাই নাড্ডার গাড়ির সামনে চলে আসেন বেশকিছু বিক্ষোভকারী। তারা বিজেপি সভাপতিকে কালাে পতাকা দেখায়। এরপর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্বাচনী কেন্দ্র ভবানীপুরেও তাঁকে কালাে পতাকা দেখানাে হয়।
উল্লেখ্য, হেস্টিংসে নাড্ডার বিজেপি-র নির্বাচনী কার্যালয়ের উদ্বোধন করতে আসার আগে থেকেই সেখানে জড়াে হয়েছিলেন তৃণমূল কর্মীরা। নাড্ডা পৌছতেই তাঁরা নয়া কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে স্লোগান দেন। দেখানাে হয় কালাে পতাকা। সেখানে পাল্টা স্লোগান দেন বিজেপি কর্মীরা। দু’পক্ষের স্লোগান- পাল্টা স্লোগানে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। যদিও পুলিশি তৎপরতায় কোনও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যায়নি।
এরপরেই দলীয় কার্যক্রম থেকে তিনি বলেন, ‘কৃষি আইন নিয়ে বিরােধীরা ভুল বােঝাচ্ছে কৃষকদের। বাংলাতে দুর্দশার শিকার কৃষকরা। এর জবাব একুশের ভােটে পাবে তৃণমূল। মমতা সরকারকে উৎখাত করবে বিজেপি।’
হেস্টিংসের কার্যক্রম সেরে নাড্ডা ভবানীপুরে বিজেপি-র গৃহ সম্পর্ক অভিযান কর্মসূচিতে যােগ দেন। সেখানেও কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে বিক্ষোভে সামিল হন স্থানীয় তৃণমূল নেতাকর্মীরা। পাল্টা স্লোগান ওঠে বিজেপি-র তরফেও। তারমধ্যেই বেশ কয়েকটি বাড়িতে গিয়ে জনসংযােগ সাড়েন নাড্ডা। এরপরে তিনি কালীঘাট মন্দিরেও যান।