পূর্বপ্রস্তুতি ছিলই। দিল্লির দিকে এগােতেই কৃষকদের উপর কাঁদানে গ্যাস, জলকামান ছুড়ে রােখার চেষ্টা করল পুলিশ-সিআরপিএফ। কিন্তু কৃষকদের ঐক্যবদ্ধ শক্তির সামনে কার্যত কোণঠাসা হয়ে পড়ল মনােহর লাল খট্টরের পুলিশ-প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার সীমানা পেরিয়ে পাঞ্জাব থেকে হরিয়ানায় ঢুকে পড়ল কৃষকরা। জল কামান, টিয়ার গ্যাস ছুঁড়েও রােখা গেল না তাঁদের। দিল্লির উদ্দেশে রওনা দিচেছন তাঁরা। এদিন দিল্লির সীমানায় বদরপুরের কাছে কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় কৃষকদের দিল্লি চলে অভিযান ঘিরে। পুলিশের দিকে পাল্টা ইট পাটকেল ছােড়েন কৃষকরা। রাস্তায় দেওয়া ব্যারিকেড সরিয়ে এগনাের চেষ্টা করেন। পুলিশের গাড়িতেও ভাঙচুর চালানাে হয়।
প্রসঙ্গত, সংসদের বিলম্বিত বাদল অধিবেশনে তিনটি কৃষক বিল পাশ হওয়া নিয়ে তুলকালাম হয়েছিল। যদিও শেষ পর্যন্ত বিল পাশ হয়ে আইনে পরিণত হয়েছে। সেই সময় প্রায় সারা দেশেই প্রতিবাদ হয়েছিল ওই তিন আইনের বিরুদ্ধে। সবচেয়ে বেশি প্রতিবাদ-প্রতিরােধ হয়েছিল পঞ্জাব ও হরিয়ানায়। পঞ্জাব বিধানসভায় কেন্দ্রের ওই আইনের বিরুদ্ধে প্রস্তাবনাও পাশ হয়েছে। এর মধ্যেই সম্প্রতি ‘দিল্লি চলাে’ অভিযানের ডাক দেয় পঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশের মতাে রাজ্যের বেশ কয়েকটি কৃষক সংগঠন।
মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে সেই প্রতিবাদ আন্দোলন। পঞ্জাব থেকে হেঁটে দিল্লি আসছেন কৃষকরা। তবে মঙ্গলবার হরিয়ানায় একাধিক বার বাধা পেয়েছেন তাঁরা। জলকামান ছােড়া হয়েছে আন্দোলনকারীদের উপর। হরিয়ানার বিজেপি সরকারের পক্ষ থেকে পঞ্জারে সঙ্গে সব সীমান্ত সিল করে দেওয়া হয়েছে। তবে সে সব বাধা পেরিয়ে বুধবারই দিল্লির উপকণ্ঠে এসে পৌঁছন কৃষকরা।
কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল দিল্লির শাসনভার আম আদমি পার্টির হাতে থাকলেও পুলিশের নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হাতে। বুধবারই দিল্লি পুলিশের তরফে টুইট করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, বেশ কয়েকটি সংগঠনের প্রতিবাদ কর্মসূচির (২৬ এবং ২৭ নভেম্বর) আবেদন পেলেও তার কোনওটির অনুমতি দেওয়া হয়নি। সব আবেদন খারিজ করা হয়েছে এবং সংগঠনগুলিকে তা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। পুলিশকে সহযােগিতার আর্জি জানিয়ে আইনভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছে।
কৃষকদের আন্দোলনের জেরে নিয়ন্ত্রিত করা হচ্ছে দিল্লির মেট্রো। টুইটারে মেট্রো কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, কৃষকদের প্রতিবাদ কর্মসূচি এবং কোভিড পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে সকাল থেকে দুপুর দুটো পর্যন্ত মেট্রো পরিষেবা নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। অবশ্য দিল্লি সরকারকে পালটা হুমকি দিয়ে রেখেছে কৃষক সংগঠনগুলি। তাঁদের বক্তব্য, যদি যন্তরমন্তর পর্যন্ত তাঁদের যেতে দেওয়া না হয়, তাহলে তাঁরা হরিয়ানা-দিল্লি হাইওয়েতে ধরনায় বসবেন। এরজন্য তাঁরা সঙ্গে অন্তত তিন মাসের রেশন, তাঁবুসহ অন্যান্য জিনিসও নিয়ে আসছেন।
এদিন সকালে পাঞ্জাব থেকে হরিয়ানায় প্রবেশের চেষ্টা করেন কয়েক হাজার কৃষক। দুই রাজ্যে সীমানার কাছে একটি সংকীর্ণ সেতুতে পুলিশের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধ বেঁধে যায় তাঁদের। সেতুতে থাকা ব্যারিকড তুলে নদীর জলে ফেলে দিয়ে এগােতে থাকেন কৃষকরা। পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস ছোঁড়ে। পাল্টা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুঁড়তে থাকেন চাষিরা। প্রায় খণ্ড যুদ্ধের চেহারা নেয় গােটা এলাকা।
প্রায় দু’ঘণ্টা এই পরিস্থিতি চলার পর পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে। অভিযােগ, কৃষকদের হাতে লাঠি, তরােয়ালের মতাে অস্ত্রও ছিল। যদিও কৃষকদের উপর পুলিশের এই অত্যাচারকে তীব্র কটাক্ষ করেছেন পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিং। এদিকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও কৃষকদের পাশে দাঁড়িয়েছে। তাঁর বার্তা, সকালে আমিও দিল্লি যাব। আপনাদের পাশে দাঁড়াব। আন্দোলন করব।
তাঁর অভিযােগ, কেন্দ্র সরকার কৃষকদের সমস্ত গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিচ্ছে। এই আইন কৃষকদের মঙ্গলের জন্য আনা হয়নি। বিজেপিকে তীব্র কটাক্ষ করে তৃণমূল নেত্রীর অভিযােগ, বিজেপি শুধু এক নেতা, এক দল, একার রাজনীতি চায়। আর কিছু না। এই দেশটা আমাদের সবার। স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় ওঁরা কোথায় ছিল? দেশের সঙ্গে বেইমানি করেছে ওঁরা। তিনি সম্পূর্ণভাবে কৃষকদের সঙ্গে আছেন।