• facebook
  • twitter
Friday, 20 September, 2024

রাহুলের ‘ন্যূনতম আয় প্রকল্প’ দশকের শ্রেষ্ঠ ভাঁওতা : জেটলি

কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীর দরিদ্র পরিবারগুলিকে মাসে বারো হাজার টাকা ন্যূনতম আয়ের প্রতিশ্রুতিকে সম্পূর্ণ ভাঁওতা বলে উড়িয়ে দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি।

অরুণ জেটলি (Photo: IANS)

দিল্লি – ২৫ মার্চ – কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীর দরিদ্র পরিবারগুলিকে মাসে বারো হাজার টাকা ন্যূনতম আয়ের প্রতিশ্রুতিকে সম্পূর্ণ ভাঁওতা বলে উড়িয়ে দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। এদিন রাজধানীতে রাহুল গান্ধীর ঘোষণাকে ‘দরিদ্রের প্রতি চূড়ান্ত অপমান’ বলে আখ্যা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, নরেন্দ্র মোদি সরকার বর্তমানে দরিদ্র মানুষের সাহায্যের জন্য বছরে সরকারি কোষাগার থেকে গড়ে সোয়া লাখ টাকা করে দিচ্ছে। সেখানে কংগ্রেস দল ক্ষমতায় এসে মাত্র বাহাত্তর হাজার টাকা সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। তিনি জানান, বর্তমান সরকার বছরে দরিদ্র পরিবারগুলির সহায়তায় বিভিন্ন প্রকল্পের অধীনে ৫.৩৪ লাখ কোটি টাকা ব্যয় করছে। এছাড়া, খাদ্য, সার, কৃষিকাজে এবং আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পে ভর্তুকি দিচ্ছে। যদি কংগ্রেস দলের প্রতিশ্রুতি মতো পাঁচ কোটি পরিবারকে বাহাত্তর হাজার টাকা করে বছরে দেওয়া হয়, তবে তাঁর জন্য সরকারের ব্যয় হবে মাত্র ৩.৬ লাখ কোটি টাকা, যা মোদি সরকারে ইতিমধ্যেই প্রচলিত প্রকল্পগুলি বাবদ ব্যয়ের মাত্র দুই তৃতীয়াংশ পরিমাণ। অরুণ জেটলি বলেন, মানুষকে ভাঁওতা দেওয়ার জন্য প্রকল্প পাল্টা প্রকল্পের কথা বলছে কংগ্রেস দল।

অন্যদিকে কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ কংগ্রেসের এই ঘোষণার কড়া সমালোচনা করে বলেছেন, এটা চলতি দশকের ‘দরিদ্রের প্রতি’ শ্রেষ্ঠ রসিকতা। আইনমন্ত্রী বলেছেন, কংগ্রেসের ৫৫ বছরের রাজত্বকালে দরিদ্র মানুষকে প্রলোভিত করার জন্য এমন বহু ভাঁওতা দিয়েছে। তাই মানুষ নতুন প্রকল্প নিয়েও তেমন আশাবাদী নন। কারণ ১৯৭১ সালে ইন্দিরা গান্ধীও এমন ‘গরিবি হাটাও’ স্লোগান চালু করেছিলেন। কিন্তু তা রূপায়িত হয়নি। পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী বলেছিলেন, দিল্লি থেকে পাঠানো হয় এক টাকা, কিন্তু গ্রামের গরিবরা পান মাত্র পনেরো পয়সা। চলতি সময়ে কংগ্রেস সভাপতির দরিদ্রদূরীকরণের প্রকল্প ‘ন্যায়’ এর কোনও বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ কড়া হয়নি। নীতি আয়োগ সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের পর্যাপ্ত সংখ্যতত্ত্বের অভাব এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে আর্থিক নীতি সহায়ক না হওয়ায় প্রকল্পটি বাস্তুবায়িত হওয়া দুষ্কর বলে মন্ত্যব করেছে। তবে কংগ্রেসের নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে ধনীদের সরকার স্লগানের পাল্টা হিসেবে ন্যূনতম আয় প্রকল্প সঠিক বলে রাজনৈতিক মহলের মন্তব্য।

দেশের একটি জাতীয় পতাকা থাকা সত্ত্বেও নরেন্দ্র মোদি দেশে বিভাজন সৃষ্টি করেছেন বলে অভিযোগ রাহুলের।

পরাজয় নিশ্চিত জেনেই কংগ্রেস সভাপতি মানুষকে আকাশের চাঁদ এনে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন বলে কটাক্ষ বিজেপির। উল্লেখ্য কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী দেশে গরিবি হাটাও অভিযান হিসেবে কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে দরিদ্র পরিবারগুলিকে মাসে ন্যূনতম ছয় হাজার টাকার ভাতা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। অর্থাৎ বছরে বাহাত্তর হাজার টাকা একটি পরিবারকে ‘ন্যায়’ প্রকল্পের অধীনে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন।

সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাত্র দুই সপ্তাহ আর বাকি। এ সময়ে রাহুল গান্ধীর দরিদ্র দূর করার এমন ঘোষণাকে হাস্যকর বলে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি শাসক বিজেপি এবং এনডিএ শরিকরা। বিজেপির মুখপাত্র রামমাধব ট্যুইটারে এক বার্তায় বলেছেন, ‘মানুষ কংগ্রেস সভাপতির প্রতিশ্রুতিতে বিশ্বাস রাখতে পারবেন বলে মনে হয় না। রাহুলের প্রতি কটাক্ষ করে রামমাধাব বলেছেন, আপনার দলের আসন্ন নির্বাচনে ভারাডুবির আশঙ্কা থেকেই আপনি সাধারণ মানুষকে আকাশের চাঁদ এনে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিতেও পিছপা হচ্ছেন না। কারণ ইতিমধ্যেই সরকার গরিবদের জন্য নানান সহায়তামুলক প্রকল্প চালু করেছে। এগুলির অতিরিক্তে এই প্রকল্প ঘোষণার অর্থ তাদের বিভ্রান্ত কড়া ছাড়া আর কিছুই নয়’।

রাহুল বলেছেন, ন্যায় প্রকল্পের অধীনে দেশের অন্তত পাঁচ কোটি দরিদ্র মানুষ সুবিধার অন্তর্ভুক্ত হবেন। তিনি দিল্লিতে সোমবার এক সাংবাদিক সম্মেলনে জানান, দলের পক্ষে সংশ্লিষ্ট প্রকল্প নিয়ে চার পাঁচ মাস ধরে আলোচনা পরামর্শ চালাচ্ছে। তিনি বলেছেন, দরিদ্র মানুষকে সাহায্যের জন্য দলের গৃহীত প্রকল্পের বিষয়ে তিনি বিস্তারিত জানাতে আগ্রহী। তিনি জানান, মাসে বারো হাজার টাকা পর্যন্ত একটি দরিদ্র পরিবারকে দেওয়া সম্ভব। এতে দেশের কুড়ি শতাংশ দরিদ্র মানুষ উপকৃত হবেন। এর আগে কংগ্রেস সরকার মহাত্মা গান্ধী জাতীয় গ্রামীণ কর্মসংস্থান নিশ্চিত প্রকল্পে ১৪ কোটি মানুষ উপকৃত হয়েছেন। দলের নতুন গরিবি হাটাও প্রকল্প ন্যায়ের মাধ্যমে দ্বিতীয় পর্যায়ে আরও সুবিধা পাবেন দরিদ্র পরিবারগুলি। নতুন ন্যায় প্রকল্প আর্থিকভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে কংগ্রেস সভাপতি দাবি করেছেন। এই প্রকল্প রূপায়ণে সরকারের ৩.৭ লাখ কোটি টাকা ব্যয় হবে বলে অনুমান।