ইম্ফল, ২০ মার্চ – প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদি ২০১৮ সালেই দিনে ত্রিশ হাজার কাজ নষ্ট করেছেন। মনিপুরের ইম্ফলে এক জনসভায় ভাষণ দিতে গিয়ে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী অভিযোগ করে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে নরেন্দ্র মোদি বছরে দুই কোটি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবেন। কিন্তু কেবল ২০১৮ সালেই নরেন্দ্র মোদি এক কটির বেশি কর্মসংস্থানের সুযোগ বিনষ্ট করেছেন। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদি তাঁর কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি পুরণে শুধু ব্যর্থই নন, তিনি বিগত বছরে ত্রিশ হাজার কর্মসংস্থানের সুযোগ নষ্ট করেছেন। দেশে বিশেষত উত্তরপূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিতে কর্মসংস্থান সমস্যা সমাধান অত্যন্ত জরুরী। এছাড়া, সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা সুগম করার জন্যও যথেষ্ট উদ্যোগ নেওয়া জরুরি বলে তিনি মন্তব্য করেন।
নরেন্দ্র মোদির নোটবন্দির কড়া সমালোচনা করে বলেছেন, আসলে নরেন্দ্র মোদি অর্থনীতির কিছুই বোঝেন না। নোটবন্দির পিছনে কোনও নির্দিষ্ট পরিকল্পনাই ছিল না, এটা নিছক একটা প্রতিরক্ষামূলক উদ্যোগ ছাড়া আর কিছুই নয়।
অন্যদিকে নরেন্দ্র মোদি সরকারের গুডস অ্যান্ড সার্ভিস ট্যাক্স চাপানো সম্পর্কে তিনি বলেন, এটা হল গব্বর সিং ট্যাক্স। মোদি সরকার জিএসটি সম্পর্কে এক, সহজ ও ন্যূনতম কর ব্যবস্থা বলে যে ব্যাখ্যা চালু করেছে তা সত্য নয, জিএসটির মাধ্যমে দেশের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ করা হয়েছে বলে রাহুল গান্ধী মন্তব্য করেছেন।
বুধবার মনিপুরের রাজধানী ইম্ফলে সাধারণ নির্বাচনের প্রচারে গিয়ে সেখানে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এক আলাপচারিতায় কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী বলেন, নরেন্দ্র মোদি নিজের প্রচারের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কেই ব্যবহার করেছেন। এতে দেশের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করা হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেছেন। কার্যত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে তিনি নিজের প্রচার কার্যালয়ে পরিণত করেছেন। তিনি নরেন্দ্র মোদির শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়ে কটাক্ষ করে বলেন, নরেন্দ্র মোদী কখনও কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন বলে তাঁর জানা নেই। এ ব্যাপারে তথ্য জানার অধিকারের অধীনে আবেদন করেও কোন তথ্য জানা যায়নি। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে তিনি গেরুয়াকরণের জন্য প্রচেষ্টা চালিয়েছেন।
গত বছর মনিপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ পি পান্ডের বিরুদ্ধে ‘শিক্ষা বহির্ভূত কাজের’ অভিযোগে ছাত্র ও শিক্ষকরা তাঁর অপসারণের দাবি জানান। এ কাজে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সঠিক দাবি এবং তা সফল হওয়ায় তিনি খুশি। ‘কারণ প্রাক্তন উপাচার্য এ পি পান্ডে পান্ডেকে আপনাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তার একমাত্র যোগ্যতা ছিল হাফ-প্যান্ট, সাদা জামা ও হাতে লাঠি নিয়ে ঘৃণা ছড়ানো।’ শিক্ষার্থীদের নোটবন্দি নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে রাহুল গান্ধী বলেন, ‘নোটবন্দির সিদ্ধান্ত এক হাস্যকর পরিকল্পনা নরেন্দ্র মোদির। একদিন সকালে উঠে তিনি ভাবলেন, নোটবন্দি করতে হবে। এটা তাঁর কাছে এক মজা ছাড়া আর কিছুই নয়। কিন্তু এতে মানুষের হয়রানি ও প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়েছে।’ সেটা বোঝার মত মানসিকতা তাঁর নেই।
তিনি বলেন, বিজেপি আবার ক্ষমতা দখল করতে পারলে পুনরায় নাগরিক বিল পেশ করবে। এটা বিজেপি নেতাদের রচিত উত্তরপূর্ব রাজ্যগুলোর সংস্কৃতির ওপর আঘাত হানার জন্যই। তিনি সেখানকার নাগরিকদের সতর্ক করে দিয়ে বলেন, বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ উত্তরপূর্ব রাজ্যগুলি তথা মণিপুরে এই নাগরিক বিল বলবৎ করতে উৎসাহী। কিন্তু কংগ্রেসে এই বিল যাতে বিজেপি বলবৎ করতে না পারে সেজন্য সকল সময়ই সতর্ক থেকেছে, এবং বিল রাজ্যসভায় পাশ করতে বাধা দিয়েছে, ভবিষ্যতেও এর বিরোধিতা করবে। বিল যাতে কোনও সময়েই আইনে পরিণত না হয় সেজন্য কংগ্রেস সকল রকমের বাধা দেবে। তিনি বলেন, ভারতের সকল প্রদেশের একটা নিজস্ব সংস্কৃতি আছে তাকে রক্ষা করা এবং মর্যাদা দেওয়া কেন্দ্রীয় সরকারের একটা কর্তব্য। ‘আদর্শগত এক লড়াই চলছে। আরএসএস-বিজেপি জোট অন্যদের বা বিবেচনা করতে রাজি নয়।’ বিপরীতে কংগ্রেস উত্তরপূর্ব রাজ্যগুলোর বিশেষত্ব সম্পর্কে ওয়াকিবহাল,সে কারণে তাদের প্রতি উপযুক্ত মর্যাদা দিয়ে থাকে বলে তিনি মন্তব্য করেন। নরেন্দ্র মোদি সরকার উত্তরপূর্বের রাজ্যগুলোর প্রতি অবহেলা দেখিয়ে এসেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কথা ও কাজে কোন মিল নেই বলে রাহুল কটাক্ষ করেন। তিনি বলেন, ‘শুধু দেখলে হবে না, কিছু করতেও তো হবে।’