• facebook
  • twitter
Saturday, 23 November, 2024

দূষণ প্রতিরােধে দিল্লি

শীতের মরসুমে ধোঁয়াশা দূষণের এক মারাত্মক আক্রমণের শিকার দিল্লি ও সংলগ্ন অঞ্চল। বিগত কয়েক বছর ধরেই এর প্রাবল্যে দিল্লিবাসী অতিষ্ঠ।

ধোঁয়াশায় ঢাকা দিল্লি। (File Photo: IANS)

শীতের মরসুমে ধোঁয়াশা দূষণের এক মারাত্মক আক্রমণের শিকার দিল্লি ও সংলগ্ন অঞ্চল। বিগত কয়েক বছর ধরেই এর প্রাবল্যে দিল্লিবাসী অতিষ্ঠ। সংলগ্ন উত্তরপ্রদেশ ও হরিয়ানায় মূল শস্য ধান কেটে নেওয়ার পর যে অবশিষ্ট অংশ থেকে যায় তাই অন্য ফসল রােপনের সময়ে তুলে এক জায়গায় জড়াে করে জমিতেই জ্বালিয়ে দেওয়ার রেওয়াজ। 

কিন্তু পূর্বে এর প্রভাব না বুঝতে পারা গেলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে জনসংখ্যার বিস্ফোরণের ফলে ফাঁকা জমি ভরাট করে আবাসনের জঙ্গল তৈরি হয়েছে। তাই ধোঁয়াশারও আর যাওয়ার জায়গা নেই। শহরের আকাশে স্থান নেয় ও মানুষের শ্বাসপ্রশ্বাস রােধ করার ব্যবস্থা করে। 

সম্প্রতি পাঞ্জাব ও হরিয়ানা সরকার ফসল তুলে নেওয়ার পর সেই ধানগাছের গােড়া তুলে পুড়িয়ে দেওয়ার ব্যবস্থার কথা আগাম জানিয়েছে। এটাই একাজের মরসুম। তাই বাধা দেওয়াও যায় না। কারণ কৃষি মার খেলে মানুষ যে একেবারে অনাহারে মরবে তা না বললেও চলে। 

সেদিক দিয়ে বিচার করে দিল্লির আপ সরকার দূষণ প্রতিরােধে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছে। দেরিতে হলেও এই উদ্যোগ সাধুবাদ পাওয়ার যােগ্য। কারণ সম্প্রতি করােনা সংক্রমণ প্রতিরােধে দিল্লি সরকার যথেষ্ট পারদর্শিতার সাক্ষর রেখেছে। এজন্য দিল্লি সরকার সংশ্লিষ্ট ধানগাছের গােড়াগুলি নিকটবর্তী তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে বহন করে নিয়ে যাওয়া বা ইট ভাটায় ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছে। এতে দুই কাজই হবে, একদিকে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে জ্বালানি খরচ কমবে অন্যদিকে দূষণও কমবে। 

ইতিমধ্যেই রাজধানী শহরের বিভিন্ন অংশের দূষণের মাত্রা এতটাই বেড়ে গিয়েছে যে বয়স্ক ও শিশুদের ক্ষেত্রে ক্ষতিকারক হিসেবে দেখা দিয়েছে। দিল্লিতে তিন লাখ মানুষ করােনা আক্রান্ত হন, তাদের মধ্যে সাড়ে পাঁচ হাজার মানুষের মৃত্যু হয় এবং তিন হাজার কনটেনমেন্ট জোন ইতিমধ্যেই একটা সমস্যার সৃষ্টি করেছে। দিল্লিতেও এই রােগের সংক্রমণ এড়াতে মাস্ক পরা আবশ্যিক করতে জরিমানা ধার্য করতে হয়েছে। অন্যথায় যারা সচেতন এবং সংক্রমণ এড়াতে উৎসাহী তারা নিজেরাই সরকার নির্দেশিত নিয়মাবলি পালন করছেন। 

কিন্তু এমন আচরণ দেশের রাজধানীর নাগরিকদের কাছ থেকে আশা করা যায় না। ফলে দিল্লি এখন এক আঞ্চলিক শহরের রূপ নিয়েছে। এব্যাপারে কেন্দ্রীয় সরকারের উদাসীনতাও একটা নতুন সমস্যার সৃষ্টি করেছে। বিশেষত উত্তরের রাজ্যগুলির দূষণ মাত্রাতিরিক্ত হওয়া সত্ত্বেও কেন্দ্র তেমন কোনও কার্যকরী ব্যবস্থাই গ্রহণ করছে না। কিন্তু বাজেটে দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য অর্থমন্ত্রী চার হাজার চারশাে কোটি টাকা বরাদ্দ করেছেন। কিন্তু পরিকল্পনা রূপায়ণে কেন্দ্রীয় সরকারের তেমন কোনও উদ্যোগ চোখে পড়েনি। 

পাঞ্চাব, হরিয়াণা, রাজস্থান ও দিল্লিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শাসন রয়েছে। এদের মধ্যে প্রায়ই কোনও কোনও জাতীয় বিষয়ে সমঝােতা হওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া যায় না। এছাড়া এই রাজনৈতিক দলগুলি অন্য রাজ্যেও তাদের শাসন কায়েমের জন্য উদগ্রীব। একারণেই সকলের সমস্যার কারণ কোনও বিষয়ে সমাধানের একটি সার্বিক গ্রহণযােগ্য সূত্র রূপায়ণে উদ্যোগী হতে হবে কেন্দ্রীয় সরকারকে। 

কিন্তু রাজনৈতিক স্তরে এমন উদ্যোগ এখনও দেখা যায়নি, এটাই পরিতাপের বিষয়। করােনা সমস্যায় জর্জরিত দেশের নেতারা ব্যক্ত থেকেছেন এবং সমস্যা জটিল হওয়ায় প্রতিবােশী রাজ্যগুলি কেন্দ্রের সমালােচনায় মুখর হয়েছে। কিন্তু দেশের সামগ্রিক শাসন ও পরিকল্পনা রূপায়ণে দূরদর্শিতা না থাকলে কোনও দিনই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়। সমাধানের বহু পথ থাকলেও তা পরিহার করা হয়ে থাকে। কিন্তু আগামী বছরের ধোঁয়াশার দূষণ যেন রাজধানীর সামগ্রিক আকাশকে ছেয়ে না ফেলে তা দেখার দায়িত্ব সকল পক্ষেরই।