• facebook
  • twitter
Saturday, 23 November, 2024

মণীশের খুনের নেপথ্যে কী? উঠে আসছে একাধিক তথ্য

শিল্পাঞ্চলের রাজনীতিতে গো-বলয়ের ঢঙে “ ভাইয়া ” সংস্কৃতির অন্যতম ধারক মণীশ শুক্লার নেপথের কাহিনি নিয়ে সােমবার দিনভর নানান চর্চা চলে

(Photo: Twitter/@BJP Bengal)

শিল্পাঞ্চলের রাজনীতিতে গো-বলয়ের ঢঙে “ ভাইয়া ” সংস্কৃতির অন্যতম ধারক মণীশ শুক্লার নেপথের কাহিনি নিয়ে সােমবার দিনভর নানান চর্চা চলে। যাতে একাধিক তথ্য উঠে এসেছে। তবে বিশিষ্ট আইনজীবী , সমাজসেবী একাধারে দুই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মণীশের খুনের পিছনে সম্পূর্ণ রাজনীতি রয়েছে, নাকি পুরনো শত্রুতা, তা প্রকাশ্যে আসতে কতদিন লাগবে, তা কেউ জানে না।

তবে এদিন দিনভর দুই ফুল শিবিরের তরফে একে অপরের দিকে আঙুল তােলা হয়। মণীশের গুরু সাংসদ অর্জুন সিং সরাসরি এই ঘটনায় বিধানসভা তৃণমুলের মুখ্য সচেতক নির্মল ঘােষের নাম করেছেন। পাশাপাশি, তিনি জানান, বারাকপুরে তার কাছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজনৈতিক লড়াইয়ে মণীসলের কারণে হেরে যাওয়া তার বদলা নেওয়া হচ্ছে।যদিও রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম জানান, তিনি মণীশকে চিনতেন ও বিজেপিতে গেলেও সম্প্রতি সে তৃণমুলে ফিরতে চাইছিল তাই এই হতাকাণ্ড|

প্রসঙ্গত, মণীশের রাজনীতিতে হাতেখড়ি বাম আমলে। সে সময় বারাকপুরের বাম সাংসদ তড়িৎ তােপদারের ছায়ায় ছাত্র থেকে যুব রাজনীতিতে নাম লেখান তিনি। এরপর ২০০৯ সালে বাম রাজনীতি ছেড়ে সে সময় বারাকপুরে বাহুবলি হয়ে ওঠা অর্জুনের শিবিরে যােগ দেয় সে। তারপরে বারাকপুর রাষ্ট্রগুরু কলেজ বামেদের হাত থেকে তৃণমূল ছিনিয়ে আনে। এরপর শিল্পাঞ্চলের রাজনীতিতে নিজের পরিচয় স্থাপন করা শুরু করেন তিনি। এরই মধ্যে বাম জমানার শেষে একবার তাকে খুন করার চক্রান্ত করা হয় বলে অভিযােগ ওঠে।যদিও সে সময় প্রাণে বেঁচে যান ।এরপরই একে একে তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রুজু করা হয়।

সূত্রের খবর, রাজ্য পুলিশের খাতায় মণীশ শুক্লার নামে ছটি ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত। বারাকপুর শিল্পাঞ্চলের টিটাগড়, জগদ্দল, বীজপুর, নৈহাটি এবং বারাকপুর থানায় নথিভুক্ত এই মামলায় তালিকায় খুন, ডাকাতি, অপহরণ, পুলিশকে মারধর থেকে শুরু করে অস্ত্র আইনে অভিযুক্ত করা হয়েছে মণীশকে।

তবে এতেও তাতে তাকে দমানাে যায়নি। ২০১৫ সালে নির্দল প্রার্থী হিসেবে টিটাগড় পুরসভার দুটি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর হিসেবে নির্বাচিত তিনি। এরপর ২০১৮ সালে অক্টোবর মাসে কালীপুজোর আগে তাকে খুন করার চেষ্টার অভিযােগ ওঠে। যদিও সে সময় তার এক সঙ্গী সতীশ মিশ্র মারা যান। তখন স্থানীয় এক কারখানার লােহার ছাঁট কেনাবেচা করা নিয়ে খুনের ঘটনা বলে অভিযােগ ওঠে। এরপর রবিবার রাতে তাকে দুষ্কৃতীতে গুলিতে ঝাঝরা হতে হল। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে , তাহলে কি পুরনাে কোনও শত্রুতাই টিটাগড়ের ‘ ভাইয়া’র মৃত্যু হল?

যদিও তার অনুগামীরা বলছে , রবিবার দুপুরেই টিটাগড় পুরসভার নম্বর ওয়ার্ডে শাসক দলের পক্ষ থেকে একটি রক্তদান শিবিরের আয়ােজন করা হয়েছিল। সেখানে পুরসভার প্রশাসক প্রশান্ত চৌধুরি থেকে শুরু করে ছিলেন বারাকপুর এলাকার তৃণমুল শ্রমিক সংগঠনের নেতা লালন পাসওয়ান। ওই রক্তদান শিবির থেকে নাকি আওয়াজ উঠেছিল, ‘ ওদের মণীশ শুক্লা আছে । আমাদেরও পাল্টা আরমান মণ্ডল আছে।’

আর সেই ঘটনার কথা উল্লেখ করেই বিজেপি সমর্থকরা অভিযোগ করেন, ‘দুপুরেই হুমকি দেওয়া হল। আর রাতেই খুন।’

কিন্তু এই আমান মওল কে ? এলাকার বাসিন্দারা আরমান মণ্ডলকে চেনেন থানার পাশেই টিটাগড় পুরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা হিসেবে। পুরসভার এক প্রাক্তন তৃণমূল কাউন্সিলরের কথায়, ‘ আরমান এলাকার কুখ্যাত দুষ্কৃতী। প্রায় আড়াই বছর জেলে থাকার পর কয়েক মাস আগেই জামিনে মুক্ত হয়ে ফের পাড়ায় থাকা শুরু করেছে।’

আর এই আরমানের সঙ্গে মণীশের পুরনাে ‘দুশমনি’। আরমানের নামের সূত্রেই এলাকায় শােনা যায়, আরমান ছাড়াও আরও বেশ কিছু কুখ্যাত দুষ্কৃতীর সঙ্গে ‘স্ট্রংম্যান’ মণীশের শত্রুতার কথা। খড়দহের আদর্শপল্লির বাসিন্দা মণীশের রাজনৈতিক উত্থান যাঁরা দেখেছেন, তারা প্রত্যেকেই স্বীকার করেন, সিপিএম-কংগ্রেস-তৃণমূল ঘুরে বিজেপিতে যােগ দেওয়া মণীশ এলাকায় সবসময়েই পরিচিত ছিলেন ‘বাহুবলী’ রাজনীতিক হিসেবে।

তাই মণীশের সঙ্গে এই এলাকার অন্ধকার জগতের হােমরাচোমড়াদের সঙ্গে যে যােগাযোগ ছিল, তা স্বীকার করেন অনেকেই। আর সেই যােগাযােগ বা ওঠাবসাকেই খুনের পিছনে অন্যতম কারণ হিসেবে বর্ণনা করছেন রাজ্য পুলিশের শীর্ষকর্তাদের একাংশ।

অন্যদিকে, কাকতলীয়ভাবে সাতদিন আগেই মণীশের দুজন দেহরক্ষী ছুটিতে যান। ঘটনার পর বিজেপি কর্মী সমর্থকরা সিসি ক্যামেরার খোঁজ করতে গিয়ে দেখেন, ঘটনাস্থলের পাশেই একটি ওষুধের দোকানে শনিবার পর্যন্ত যে সিসি ক্যামেরা ছিল, ঘটনার পর তা নেই।

এখানেই প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে কি পুর্বপরিকল্পিতভাবেই খুন করা হয়েছে মণীশকে? সেই সঙ্গে এঁর দেহরক্ষী না থাকা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে| এই নিয়ে তার অনুগামী ও বিজেপি কর্মীদের দাবি, ‘ঘটনা পূর্ব পরিকল্পিত। এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে মণীশের গতিবিধির ওপর নজর রেখেই খুনের ছক কষা হয়েছে।’ দুটি বাইকে আসা আততায়ীরা বারাকপুরের দিক থেকে এসে খুব কাছ থেকে পরপর গুলি চালায় রাস্তার উপরে দাঁড়ানাে মণীশকে। লক্ষ্য করে ন’টি গুলি চালানো হয়। যার পাঁচটি তার শরীর ভেদ করে যায়। বাকি চারটি তাঁর শরীরে বেঁধেছিল।