নিজস্ব প্রতিনিধি- বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি এনডিএ সরকারের শেষ পুর্ণাঙ্গ বাজেট পেশ করতে চলেছেন, যা সম্ভবত তাঁর কঠিনতম বাজেটও বটে। ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচন হতে চলেছে, তাই একদিকে অর্থমন্ত্রীর সামনে জনমোহিনী বাজেট পেশ করার তাগিদ রয়েছে, কিন্তু অপরদিকে, তাঁকে কঠিন আর্থিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার দায়িত্বও পূরণ করতে হবে। কারণ এই মূহুর্তে অর্থমন্ত্রীকে কৃষি সমস্যার কথাও ভাবতে হবে, পাশাপাশি কর্মসংসংস্থানের সযোগ বৃদ্ধির জন্য সচেষ্ট হতে হবে। তবে এই দুটি কাজ করতে গিয়ে সবচেয়ে বেশি চন্তার কারণ হবে আর্থিক বিকাশের গতিকে ত্বরান্বিত করার উপায় বের করা। অরিন জেটলি বাজেট পেশ করতে গিয়ে যে পথেই হাঁটুন না কেন, তাঁকে মাথায় রাখতে হবে আর্থিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি। ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনের আগে ৮টি রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে চলেছে, যার মধ্যে রয়েছে তিনটি বড় রাজ্য, যেগুলি আবার বিজেপির শাসনাধীন। তাই সাধারন বাজেটের প্রভাব যে এই নির্বাচঙ্গুলির উপর পড়বে, তাতে কোন সন্দেহ নেই।
গুজরাত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি জিতলেও দেখা গেছে যে, খোদ মোদি-অমিত শাহের রাজ্যে বিজেপির গ্রামীন সমর্থন ভিত্তি ধীরে ধীরে কমছে, যার ফলে শঙ্কিত বিজেপি নেতৃত্ব। তাই জেটলি কৃষিক্ষেত্রকে চাঙ্গা করতে কৃষকদের কিছু রেয়াত দিতে পারেন। ছোট ছোট ব্যবসায়ী, যাঁরা নোটবন্দি এবং পণ্য পরিষেবা কর বা জিএসটি তড়িঘড়ি লাগু হওয়ার পর বিশাল ক্ষতির মুখে পড়েছেন, তাঁদের জন্যও জেটলি হয়তো তাঁর বাজেটে কিছু রেয়াতের ব্যবস্থা করতে পারেন।
এছাড়াও আশা করা হচ্ছে যে, সাধারন মানুষ যাঁরা মূলত চাকুরিজীবী, তাঁদের হয়তো আয়করে কিছুটা ছাড় দিতে পারেন অর্থমন্ত্রী। আয়কর দেওয়ার ক্ষেত্রে হয়তো ছাড়ের উর্দ্ধসীমা বাড়াতে পারেন জেটলি। তবে জেটলির সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ এখন আর্থিক বিকাশের হার বৃদ্ধি করা, যা চার বছরে নুন্যতম সীমায় গিয়ে ঠেকেছে। এও জন্য প্রয়োজন পরিকাঠামো খাতে, যেমন হাইওয়ে তৈরী কিংবা রেলের আধুনিকীকরণে সরকারি ব্যয় বৃদ্ধি করা, যাতে দেশে অর্থনৈতিক কার্যক্রমে গতি আসে। তবে এগুলি করতে গিয়ে এশিয়ার অন্যতম বিশাল ঘাটতির বাজেটের কথা মাথায় রাখতে হবে। যদি এই বাজেট ঘাটতি নিয়ন্ত্রন করতে সক্ষম না হন অর্থমন্ত্রী, তাহলে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীরা ভারতে লগ্নি করতে আগ্রহী হবেন না। পাশাপাশি, রেটিং এজেন্সি গুলিও ভারতের বাণিজ্য রেটিং কমিয়ে দিতে পারে।
জেটলি কিছুদিন আগে বর্তমান অর্থ বছরে রাজস্ব ঘাটতি জিডিপি’র ৩.২ শতাংশ বেঁধে দিয়েছিলেন এবং আগামী আর্থিক বছর অর্থাৎ ২০১৮-১৯ সালে সরকারি ভাবে এই রাজস্ব ঘাটতির হার ধরা হয়েছিল ৩ শতাংশ। তবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাজেটের আগেই ভোটারদের প্রত্যাশা কমিয়ে দিয়েছেন, কারণ তিনি একটি অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে সম্প্রতি বলেছিলেন যে, এবারের সাধারন বাজেট মনমোহিনী হবে না। কারণ আর্থিক বিকাশ বৃদ্ধি করাই সরকারের সামনে এখন মস্ত বড় চ্যালেঞ্জ। দ্বিতীয়ত, জনমোহিনী বাজেট পেশ করতে গিয়ে আর্থিক ঘাটতি আরও বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনে থাকবে। তবে কর্পোরেট সেক্টর অরুণ জেটলির ২০১৫ সালের সেই প্রতিশ্রুতির দিকে তাকিয়ে রয়েছে, সেখানে অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন যে, আগামী চার বছরে তিনি কর্পোরেট ট্যাক্স ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করে দেবেন। এ খবরও পাওয়া যাচ্ছে যে, জেটলি হয়তো শেয়ারে বিনিয়োগের ওপর মুলধনী কর তুলে দিতে সক্রিয় হবেন। জেতলি কীভাবে আজ অর্থনীতির দাবী মানে বাজেট পেশ করেন এবং পাশাপাশি ভোটের কথাটাও মাথায় রাখেন, সেটাই এখন দেখার।