• facebook
  • twitter
Saturday, 23 November, 2024

ভূমিপুজায় ভূমিতেই সাষ্টাঙ্গ মোদি

নরেন্দ্র মোদি চল্লিশ কেজি ওজনের রুপোর ইট গেঁথে ভূমিপুজোর মাধ্যমে রামমন্দির নির্মাণের সূচনা করেন।

রামমন্দিরের ভূমিপুজায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। (Photo: Twitter | @BJP4India)

রামমন্দিরের শিলান্যাসের দিনটিকে প্রধানমন্ত্রী  ত্যাগ, সংকল্প ও সংঘর্ষের প্রতীক হিসেবে বর্ণনা করলেন। তিনি বলেন, রামমন্দিরের জন্য বহু বলিদান, ত্যাগের ফলে এই সাফল্য এসেছে। আজ সারা দেশ রামময়, রোমাঞ্চিত। বিশ্বের সর্বত্রই রামের ধ্বনিতে মুখরিত আমাদের রাষ্ট্রীয় ভাবনার প্রতীক। বিশ্বের মানুষ এখানে আসবেন। মন্দিরের মাধ্যমে অতীতের সঙ্গে বর্তমানের যগসূত্র তৈরি হল। দেশের মানুষ এই মন্দিরের নির্মাণের সঙ্গে আত্মিকভাবে যুক্ত হয়েছেন।

তিনি বলেন, স্বাধীনতা দিবস যেমন দেশের মানুষের আত্মবিশ্বাসের সৃষ্টি করে তেমনই রামমন্দিরের শিলান্যাসের দিনটি সংকল্প, ত্যাগের প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। জাতীয় চরিত্র হিসেবে রাম আমাদের সত্যপালনের অঙ্গীকারের শিক্ষা দেয়। বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য আমাদের ভিত্তি। তাই সারা দেশে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শ্রীরামচন্দ্রের ভব্যমন্দির সুচনার দিনটি মানুষ পালন করছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে শ্রীরামচন্দ্রের ভিন্ন ভিন্ন গাথা প্রচলিত। প্রতিবেশী দেশগুলিতেও শ্রীরামচন্দ্রের পূজার্চনার চল রয়েছে।

তিনি বলেন, এতদিন রামলালা বহু বিতর্কিত ঘটনার সাক্ষী হিসেবে তাবুতে কাটিয়েছেন। যেমনটি তিনি পিতার সত্যরক্ষার জন্য বনবাসে অসহনীয় কষ্ট স্বীকার করেছেন, সাধারণ মানুষের মতো সকল অবস্থায় নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার মধ্যে দিয়ে এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, তেমনই তাঁর জন্মস্থানে মন্দির নির্মাণ নিয়ে এতদিন যে বিতর্ক ও সংঘর্ষের পরিবেশ ছিল তার সমাপ্তি হল। এখন শ্রীরামচন্দ্রের জন্য আমরা এক ভব্য মন্দির নির্মাণের সূচনা করতে পেরে গর্বিত। দেশের সংস্কৃতির সঙ্গে রাম জড়িয়ে রয়েছেন, তাঁকে এর থেকে পৃথক করা যায় না।

রামের মন্দির ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল তার পরও বহু সময় অতিক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু মানুষের মনে তিনি ছিলেন সদা জাগরুক। মানুষ তাঁর মন্দির নির্মাণ করে তাঁকে স্বমর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়েছে। মানুষের সেই চেষ্টা আজ সফল হয়েছে। এতে আমাদের রাষ্ট্রশক্তি আরও সহনশীল হয়েছে তারই অনুপ্রেরণায়। দেশবাসীর ঐকান্তিক চেষ্টা রামমন্দির নির্মাণের পথকে সুগম করেছে। স্বাধীনতা সংগ্রামে দেশের মানুষ যেভাবে আত্মবলিদান দেওয়ার জন্য সঙ্কল্পবদ্ধ ছিল, রামমন্দির নির্মাণের বিষয়েও একই রকমভাবে মানুষ সচেষ্ট ছিল। তাই শ্রীরামচন্দ্রের মন্দির নির্মাণের আজ সূচনা করা সম্ভব হল। প্রত্যেক ভারতীয়র মনেই রামের অবস্থান।

এদিন নরেন্দ্র মোদি চল্লিশ কেজি ওজনের রুপোর ইট গেঁথে ভূমিপুজোর মাধ্যমে রামমন্দির নির্মাণের সূচনা করেন। এদিন বেলা এগারোটায় সাকেত কলেজের মাঠে নামে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হেলিকপ্টার। সেখানে তাঁকে স্বাগত জানান উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। সেখান থেকে প্রধানমন্ত্রী যান রামগড়িতে হনুমান মন্দিরে পুজো দিতে। মন্দিরের পক্ষ থেকে তাঁকে বস্ত্র ও রুপোর মুকুট উপহার দেওয়া হয়।

এরপর রামলালার দর্শন করেন প্রধানমন্ত্রী। সেখান থেকে যান রামজন্মভূমিতে। সেখান থেকে নির্দিষ্ট সময় মেনে শুভক্ষণ অনুযায়ী একে একে সমস্ত ধর্মীয় প্রথা-অনুষ্ঠান শেষে মূল মঞ্চে আসেন। মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের নেতৃত্বে মূল অনুষ্ঠান থেকে ভূমিপূজন সবই সম্পাদিত হয়েছে। অনুষ্ঠান শেষে মুখ্যমন্ত্রী কিভাবে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও বিচারব্যবস্থার মাধ্যমে যেকোনও বিতর্ক শান্তিপূর্ণ, গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক উপায়ে সমাধান করা যায় তা দেখিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, আজকের দিনটি আমাদের কাছে অত্যন্ত আবেগের দিন, আনন্দের দিন, সুখের দিন। পাঁচশো বছর পর এই দিনটি এসেছে। বহু প্রজন্ম এই মুহূর্তটির জন্য অপেক্ষা করেছে। করোনাভাইরাসের কারণে বহু মানুষ এই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে চেয়েও আসতে পারেননি। তবে আগামী দিনে চেষ্ট করা হবে কোনওভাবে যাতে তাদের অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার ব্যবস্থা করা যায়।

রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের প্রধান মোহন ভাগবত বলেন, রামমন্দির নির্মাণ আন্দোলনে বিজেপির মার্গদর্শক ছিল আরএসএস। সঙঘ জানত, কুড়ি-ত্রিশ বছর লাগবে মন্দির তৈরিতে। শেষ পর্যন্ত তিন দশক পর সংঘের সেই স্বপ্ন সত্যি হল। তিনি বলেন, আমাদের দেশ ‘বসুধৈব কুটুম্বকম’ মন্ত্রে বিশ্বাসী। দেশবাসীর এই ভাবনাই যে কোনও সমস্যার সমাধান করতে পারে। আমরা সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে চলায় বিশ্বাসী। আজ এক নবভারতের সূচনা হল। আজ সারা দেশে তাই আনন্দের লহর বইছে। বহু বছরের আশা পূর্ণ হল। ভারতকে আত্মনির্ভর করার জন্য যে আত্মবিশ্বাসের প্রয়োজন ছিল, আজ তার সূচনা হল।

তিনি আদবানিজির কথা স্মরণ করেন। তিনি বলেন, আদবানিজি নিশ্চয়ই বাড়িতে বসে টিভিতে এই অনুষ্ঠান দেখছেন। ১৯৯০ সালে লালকৃষ্ণ আদবানি গুজরাতের সোমনাথ মন্দির থেকে অযোধ্যা রথযাত্রা শুরু করেছিলেন। পুরনো সেই সময়ের ছবিতে লৌহপুরুষ আদবানিজির পাশে ছিলেন তখনকার বিজেপি কর্মকর্তা নরেন্দ্র দামোদর মোদি। কিন্তু এদিনের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনিই প্রধান মুখ। এদিন লালকৃষও আদবানি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে শামিল হন।