দিল্লি, ১৭ মার্চ – ২০১৭ সালে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি পদ থেকে অবসর নিয়েছিলেন পিনাকীচন্দ্র ঘোষ। ওই বছরেই জুন মাসে তিনি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে যোগ দেন। এবার দেশের প্রথম লোকপাল হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে রইলেন এই বাঙালি বিচারপতি। সুপ্রিম কোর্টের বেঁধে দেওয়া সময়সীমার মধ্যেই কেন্দ্র তাঁর নাম ঘোষণা করবে বলে সূত্রের খবর।
প্রধানমন্ত্রী নেতৃত্বাধীন কমিটি প্রথম লোকপাল হিসাবে শীর্ষ আদালতের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি পিনাকীচন্দ্র ঘোষের নাম চূড়ান্ত করেছে বলে জানা গেছে। লোকপালে বাকি ৮ জন সদস্যের নাম আগামী সপ্তাহেই চূড়ান্ত করবে কমিটি। সেক্ষেত্রে কয়েক দিনের মধ্যেই নির্দেশিকা জারি হতে পারে। চলতি মাসের শেষে লোকপাল নিয়ে মামলার শুনানি হবে সুপ্রিম কোর্টে। পরবর্তী শুনানির আগেই লোকপালের নাম ঘোষণা করতে পারে কেন্দ্র।
লোকসভায় প্রথম লোকপাল বিল পেশ হয় ১৯৬৮ সালে। ১৯৬৯ সালে তা পাশ হয় সংসদে। কিন্তু রাজ্যসভায় বিলটি আটকে যায়। এরপর ২০১৪ সালে পেশ হয় লোকপাল বিল। তবে সেই সময় লোকপালে বেশ কয়েকটি সংশোধন করা হয়। বলা হয় সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি, রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীকে এই বিলের বাইরে রাখা হবে। তারপরই বিলের বিরোধিতা করে আন্দোলনে নামেন সমাজকর্মী আন্না হাজারে। তাঁর দাবি ছিল লোকপাল নয়, জনলোকপাল আনা হোক, যেখানে বিশেষ কাউকে নয়, সকলকেই সমান দৃষ্টিতে দেখা হবে।
লোকপাল ও লোকায়ুক্ত বিল সংসদে পাশ হওয়ার পরও পদগুলিতে নিয়োগ করেনি সরকার। কেন্দ্রের সঙ্গে রাজ্যসরকারগুলিও এই পদে সদস্য নিয়োগ করতে কোনওরকম আগ্রহ দেখায়নি। শীর্ষ আদালতে লোকপাল ও লোকায়ুক্ত নিয়োগ নিয়ে আবেদন জানায় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। মামলার শুনানি চলাকালীন ৭ মার্চ কেন্দ্র সরকারে জবাবদিহি তলব করে শীর্ষ আদালত। ১৫ দিনের মধ্যেই কেন্দ্রকে আদালতে জবাবদিহি পেশ করতে হবে বলে জানান প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ। লোকপাল এবং লোকায়ুক্ত নিয়ে গত জানুয়ারি মাসে আদালতের ভৎসনার মুখে পড়তে হয় কেন্দ্র সরকারকে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নেতৃত্বাধীন নিয়োগ কমিটি প্রাক্তন বিচারপতির নাম নির্বাচিত করেছেন বলে জানা গেছে। এই কমিটিতে ছিলেন লোকসভার স্পিকার, লোকসভার বিরোধী দলনেতা, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি নিয়ে গঠিত কমিটি প্রথম লোকপাল হিসাবে পিনাকীচন্দ্র ঘোষের নাম প্রস্তাবিত করে।
সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি কর্মজীবনে কলকাতা হাইকোর্টে এবং পরে অন্ধ্রপ্রদেশের হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতিও ছিলেন। তামিলনাডুর প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতার সঙ্গী শশীকলাকে দুর্নীতি মামলায় দোষী সাব্যস্ত করেছিলেন এই প্রাক্তন বিচারপতিই। সূত্রের খবর, লোকপালে নিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে হাইকোর্টের ৪ প্রাক্তন বিচারপতি, তাঁদের মধ্যে থাকবেন একজন মহিলা বিচারপতি এবং ৪ জন প্রাক্তন আমলা।
লোকপাল একটি স্বশাসিত তদন্তকারী কমিটি। এই কমিটির কাজ হবে লোকসভা এবং রাজ্যসভার কোনও সাংসদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে তা তদন্ত করে দেখা।