বীরভূমের শহিদ রাজেশ ওরাং-এর বাড়িতে তাঁর পরিবারকে সমবেদনা জানাতে এসে বীরভূমের কৃতি গুণী ব্যক্তিদের পাশাপাশি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশংসায় পঞ্চমুখ রাজ্যপাল জগদীশ ধনকড়। শুক্রবার আকাশপথে এসে বীরভূমে পৌছান রাজ্যপাল। সেখানে জেলার মহম্মদ বাজার থানার অন্তর্গত বেলঘড়িয়া গ্রামে শহিদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে যান সস্ত্রীক রাজ্যপাল। সঙ্গে ছিলেন চিফ কমান্ডিং অফিসার অনিল চৌহান।
শুক্রবার সকালে হেলিকপ্টারে সিউড়িতে পৌছান তাঁরা। তারপর সড়কপথে বেলঘরিয়া গ্রামে যান তাঁরা। শহিদের বাড়িতে প্রবেশ করে প্রথমে তিনি শহিদ রাজেশ ওরাং-এর ছবিতে মাল্যদান করে শ্রদ্ধা জানান। সেই সঙ্গে শহিদের মায়ের হাতে ১১ লক্ষ টাকার চেক তুলে দেন রাজ্যপাল। তারপর শহিদের পরিবারের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ সময় কাটান রাজ্যপাল এবং তাঁর স্ত্রী।
শহিদের পরিবারের সাথে সাক্ষাতের কর্মসুচি শেষ করে রাজ্যপাল সংবাদ মাধ্যমের উদ্দেশ্যে বলেন, রাজেশের বলিদান বীরভূমকে ভূমি করে তুলেছে। রাজেশ ওরাং-কে পথপ্রদর্শক মেনে চলুন। দেশের জন্য প্রাণ বলিদান দেওয়া এক ব্যক্তি সমাজের কাছে বড় অনুপ্রেরণার কারণ হতে পারে। বীরভুম রবীন্দ্রাথ ঠাকুরের মাটি, পঞ্চসতী পীঠ রয়েছে এখানে। রাজেশ ওরাং-এর বলিদান এই মাটিকে আরও সমৃদ্ধ করল।
সেই সঙ্গে রাজ্যপাল বলেন, নোবেল বিজয়ী অমর্ত্য সেনের কর্মকান্ড যুক্ত রয়েছ বীরভূমের সঙ্গে। গীতগোবিন্দ থেকে শুরু করে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-এর বহু কীর্তি এই বীরভূমের সঙ্গে যুক্ত। সেই সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়রে জন্ম হয়েছে এই মাটিতে। এই বলে তিনি সংবাদমাধ্যমের কোনো বিতর্কে বা প্রশ্নে কান না দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী’র প্রশংসা করেন রাজ্যপাল।
এছাড়াও এদিন রাজ্যপাল জগদীশ ধনকর হাতজোড় করে আম জনতার উদ্দেশ্যে নিবেদন করেন করোনাভাইরাসের মহামারীতে আরও সতর্ক হওয়ার জন্য। তিনি বলেন, বহু মানুষ করোনার কবলে পড়েছে। আমি সকলের কাছে হাত জোড় করে প্রার্থনা করছি দয়া করে মাস্ক ব্যবহার করুন এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন। এরমধ্যে কোনও কিছু অবহেলা করলে নিজেকে যেমন বিপদে ফেলবেন তেমনি আপনার পরিবারকে বিপদে ফেলবেন। আমাদের রাজ্যে শুধু নয় দেশেও এর সংক্রমণ বেড়েই চলেছে, যা খুবই চিন্তার বিষয়।
রাজ্যপাল ফিরে যাওয়ার আগে শহিদের পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দেন এবং সকলকে শহিদের পরিবারের পাশে থাকার আর্জি জানিয়ে কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। রাজ্যপাল চলে যাওয়ার পর শহিদ রাজেশ ওরাং-এর বোন শকুন্তলা ওরাং বলেন, রাজ্যপাল আমাকে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে বলেছেন। কোনও সমস্যা হলে নির্দ্বিধায় রাজভবনে যোগাযোগ করতে বলেছেন।
এদিন শহিদের পরিবারের সঙ্গে সাংবিধাকি প্রধানের সাক্ষাতের এই কর্মসুচির সময় জেলা প্রশাসনের তরফে মহম্মদ বাজার ব্লকের সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বোলপুর) সহ বেশ কয়েকজন জেলা প্রশাসনের আধিকারিককে দেখা যায় ঘটনাস্থলে।
কিন্তু প্রশ্ন ওঠে জেলাতে সাংবিধানিক প্রধান উপস্থিত থাকলেও কেন প্রশাসনিক প্রধান অর্থাৎ জেলা সমাহর্তা এবং জেলা পুলিশ সুপার এর অনুপস্থিতি নিয়ে। রাজ্যপাল এদিন শহিদের পরিবারের হাতে চেক তুলে দেওয়ার পাশাপাশি করোনাভাইরাস মোকাবিলার জন্য মাস্ক এবং স্যানিটাইজার তুলে দেন পরিবারের হাতে।