গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১০৮৮ জন। পাশাপাশি এই একদিনে মৃত্যু হয়েছে ২৭ জন করোনা রোগীর। এই পর্যন্ত বাংলায় করোনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে হল ৮৫৪। বৃহস্পতিবার রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিনে বলা হয়েছে, বাংলায় নতুন করে আরও ১০৮৮ জনের শরীরে কোভিড ১৯ মিলেছে। ফলে মোট করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২৫,৯১১।
বর্তমানে রাজ্যে করোনা সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ৮,২৩১। সুস্থ হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় বাড়ি ফিরেছেন ৮৩৫ জন। পশ্চিমবঙ্গে মোট করোনাজয়ীর সংখ্যা বেড়ে হল ১৬,৮২৬। ১২ জন আধিকারিক করোনা আক্রান্ত হওয়ায় আজ, শুক্রবার থেকে হাওড়া পুরসভা বন্ধ হতে চলেছে। জরুরি পরিষেবা বিভাগগুলি ছাড়া বাকি সব বন্ধ থাকবে। একসঙ্গে এতজন আধিকারিক করোনা আক্রান্ত হওয়ায় ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পুরসভায়।
করোনার কালবেলায় বড় ধাক্কা লেগেছে আতিথেয়তা শিল্পেও। যার প্রেক্ষাপটে অর্থনৈতিক সংকটের জেরে বন্ধ হয়ে গেল কলকাতার পাঁচতারা সুইসোটেল। সম্প্রতি এই হোটেলের মালিক অম্বুজা নেওটিয়া গোষ্ঠী এবং ফরাসি হসপিটালিটি চেইন অ্যাকর-এর মধ্যে চুক্তির মেয়াদ ফুরিয়ে গিয়েছে। নতুন করে চুক্তি না হওয়ায় সাময়িকভাবে হোটেলটি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মালিকপক্ষ।
গত দশ বছর ধরে সল্টলেকের সুইসোটেল ব্রান্ডটি চালাচ্ছিল আর গোষ্ঠী। গত ৩০ জুন অম্বুজা নেওটিয়া গোষ্ঠীর সঙ্গে অ্যাকরদের চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে। যার জেরে আপাতত পাঁচতারা এই হোটেলটি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে অম্বুজা নেওটিয়া গোষ্ঠীর মুখপাত্র জানিয়েছেন।
কলকাতা বিমানবন্দর থেকে সবথেকে কাছের পাঁচতারা হোটেলটি হল সুইসোটেল। এর ব্যবসা প্রায় সম্পূর্ণভাবে বিমাবন্দরের উপরে নির্ভরশীল। মূলত বিদেশি অতিথিদের উপরে দাঁড়িয়ে রয়েছে এই হোটেলের ব্যবস্থা। কিন্তু করোনা মহামারীর জেরে ভারতে আন্তর্জাতিক উড়ান পরিষেবা দীর্ঘদিন বন্ধ। ফলে সুইসোটেলের ব্যবসাও দারুণভাবে ধাক্কা খাচ্ছিল। যার জেরে আপাতত ঝাঁপ পড়ল পাঁচতারা এই হোটেলটিতে।
যদিও পাঁচতারা এই হোটেলটি ফের খেলার সমত প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন অম্বুজা নেওটিয়া গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান হর্ষ নেওটিয়া। তিনি বলেছেন, গত কয়েক মাস কোনও আন্তর্জাতিক উড়ান শহরে না আসায় সুইসোটেলের ব্যবসা মার খাছিল। যে কারণে আগামী কয়েক মাসের জন্য এই হোটেলটি আমরা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। অ্যাকরের সঙ্গে যাতে চুক্তি পুনর্নবীকরণ করা যায় সেই বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখব। অথবা অন্য হসপিটালাটি চেইনের সঙ্গেও আলোচনার মাধ্যমে সমঝতায় পৌঁছনোর চেষ্টা করব।
সুইসাোটেল প্রায় ২৫০ জন কর্মী কাজ করেন। সেটি বন্ধ হওয়ায় কর্মীদেরকে ভাতা দিয়ে দীর্ঘমেয়াদি ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। এই হোটেল ফের খোলার বিষয়ে চূড়ান্ত আশাবাদী হর্ষ। তাঁর কথায়, ব্যবসার পরিস্থিতি ফের স্বাভাবিক হলে ফের সুইসোটেল। খোলার বিষয়ে আমরা আশাবাদী।
একই আশায় বুক বেঁধেছেন ওই হোটেলের কর্মীরাও। এদিকে, দীর্ঘ লকডাউনে আয় নেই কারও। ব্যাপক মার খাচ্ছে পাহাড়ের পর্যটন ব্যবসা। তাই আনলক পর্বে ফের পর্যটকদের জন্যে দরজা খুলে দিয়েছিল পাহাড়ের রাণী। কিন্তু গোটা রাজ্যের কনটেইনমেন্ট জোনগুলিতে আবারও যখন শুরু হচ্ছে লকডাউন, তখন আবার ফের পর্যটক যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা জারি করল জিটিএ। জানিয়ে দেওয়া হল, আগামী ৩১ জুলাই পর্যন্ত পাহাড়ে যেতে পারবেন না কোনও পর্যটক।
জিটিএর তরফে অনীত থাপা বলেন, আর্থিক ক্ষতি সবার হচ্ছে। কিন্তু এমন একটা সময় এখন, যখন এই ক্ষতি মেনে নিতে হবে। বৃহস্পতিবার থেকে পাহাড়ে পর্যটন ফের বন্ধ। আগামী ৩১ জুলাই পর্যন্ত এই নিয়ম জারি থাকবে। তারপর পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, মার্চ মাসে লকডাউন ঘোষণার আগে থেকেই পাহাড় পর্যটকশূন্য হয়ে পড়েছিল। তারপর লকডাউনের ধাক্কা সামলে জুন মাসের শেষে ফের পর্যটকদের স্বাগত জানাতে তৈরি হয়েছিল পাহাড়। খুব অল্প সংখ্যায় হলেও পাহাড়ে যাচ্ছিলেন কেউ-কেউ। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি ক্রমেই ঘোরাল হচ্ছে দেখে আবার পর্যটন বাতিলের ঘঅষণা করা হল। পর্যটকদের পাহাড়ে ঢাকার রাস্তা রোহিণী, রংপো, কালীঝোরার রাস্তায় বহিরাগতদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা করেও জিটিএ সেই আতঙ্ক কাটাতে পারছে না।
এদিকে জিটিএ, প্রশাসনের তরফে সভা করে হোটেল খুলে দেওয়া হলেও হোটেলের কর্মীদের পাহাড়ে ফেরানোর ব্যবস্থা হয়নি। বহু হোটেলের ম্যানেজাররাও পাহাড়ে ফিরতে পারেননি। সাধারণ মানুষের মধ্যে করোনা নিয়ে আতঙ্ক ও দুর করার জন্যও কোনও ব্যবস্থা হয়নি।
রাজ্যের সমস্ত হোটেল খোলার নিয়ম চালু হওয়ার পরই বারবার বৈঠকে বসেছিলেন দার্জিলিং জেলা প্রশাসন ও জিটিএ কর্তারা। সঙ্গে ছিলেন হোটেল মালিকরাও। কিন্তু তাঁদের অনেকেই হোটেল খুলতে রাজি ছিলেন না। তবে, কর্মীদের কথা ভেবে কিছু হোটেল ফের খোলা হয়। যদিও সমস্যা দাঁড়িয়েছিল, কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশের অস্পষ্টতা নিয়ে।
একজন পর্যটক যদি দার্জিলিং যান, তাহলে পৌঁছেই তিনি কি সরাসরি হোটলে ঢুকতে পারবেন, না কি তাঁকে প্রথমে কোয়ারানটিন সেন্টারে যেতে হবে, সেই নিয়ে ধন্দ তৈরি হয়েছিল। বিদেশি পর্যটকদের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকার এসওপি ঘোষণা করেছে। তাঁদের প্রথম সাত দিন ইনস্টিটিউশনাল কোয়ারানটিন এবং সাত দিন হোম কোয়ান্টিনের কথা বলা হয়েছে।
দেশীয় পর্যটকদের ক্ষেত্রে কোনও এসওপি ঘোষণা হয়নি বলে হোটেল মালিকদের দাবি। এরপর বৈঠকে বসে পর্যটকদের জন্যে স্বাস্থ্যবিধি সুনির্দিষ্ট করা হয়। দার্জিলিংয়ে যাওয়ার বিভিন্ন এন্ট্রি পয়েন্টে চেকিং করা, হোটেলগুলির জন্যে সুনির্দিষ্ট স্বাস্থ্যবিধি তৈরি করা হয়। কিন্তু সেই নিয়ম বেশিদিন টিকল না। ফের দার্জিলিংয়ে বন্ধ হল পর্যটন।