• facebook
  • twitter
Saturday, 23 November, 2024

২০২১’এর মধ্যে টিকা অসম্ভব, পিছু হঠল বিজ্ঞানমন্ত্রক

ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিকেল রিসার্চ (আইসিএমআর)-এর উল্টো সুরে রবিবার বিজ্ঞান মন্ত্রক প্রথমে জানায়, করোনার টিকা '২০২১- এর আগে আসবে বলে মনে হচ্ছে না।

প্রতিকি ছবি (Photo: iStock)

করোনা’র টিকা স্বাধীনতা দিবসের মধ্যেই কি বাজারে আসছে? এই প্রশ্ন এখন দেশজুড়ে। এই নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। এবার এই বিতর্কে নতুন ইন্ধন জোগাল কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রকের একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিকেল রিসার্চ (আইসিএমআর)-এর উল্টো সুরে রবিবার বিজ্ঞান মন্ত্রক প্রথমে জানায়, করোনার ভ্যাক্সিন ‘২০২১- এর আগে আসবে বলে মনে হচ্ছে না।

কিছুক্ষণের মধ্যে অবশ্য উলোটপুরাণ। আচমকাই প্রেস বিজ্ঞপ্তি থেকে মুছে ফেলা হয় এই লাইটি। দুটি টিকা মানব শরীরে পরীক্ষা চালানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছে, তা করোনার ‘শেষের শুরু’। আইসিএমআর শুক্রবার দাবি করে, আগামী ১৫ আগস্টের মধ্যে দেশে তৈরি প্রথম কোভিড টিকা বাজারে আসবে।

আইসিএমআর-এর এই দাবির পর থেকে টিকা বিতর্কে সরগরম হয়ে গোটা দেশ। অনেকে বলেন, খুব তাড়াহুড়ো করে বাজারে আনা হচ্ছে টিকা। আগামী জনস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে এই টিকা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের একাংশের তরফেও বিভিন্ন মত উঠে আসছে। বিরোধীরা ‘ব্যস্ততা’ নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করে। এমনই বিতর্কের মধ্যে কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রক এদিন বিবৃতি জারি করে।

কোভিড ১৯ ভ্যাকসিন ২০২১ এর আগে বাজারে নিয়ে আসা সম্ভব নয় বলে কেন্দ্রীয় বিজ্ঞানমন্ত্রকের পক্ষে জানানো হয়েছে। ভারতে তৈরি কোভ্যাক্সিন এবং জিকভ-ডি সহ বিশ্বে আবিষ্কৃত এমন এগারো কোভিড ১৯ টিকা কেবল পরীক্ষার স্তরেই রয়েছে। তা ২০২১ সালের আগে দেশে ব্যবহারের জন্য পাওয়া যাবে না কেন্দ্রীয় প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানমন্ত্রকের পক্ষে জানানো হয়েছে।

এদিকে আইসিএমআর (ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর ডিক্যাল রিসার্চ) ইতিমধ্যেই ১৫ আগস্ট করোনাভাইরাস ভ্যাক্সিন সাধারণের ব্যবহারের জন্য বাজারে নিয়ে আসা যাবে বলে ঘোষণা করেছিল। কিন্তু বিহার বিধানসভার চলতি বছরের শেষেই ভোটের দিকে তাকিয়েই এমন একটা ঘোষণা করানো হয়েছে যাতে প্রধানমন্ত্রী তার স্বাধীনতা দিবসে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে একথা ঘোষণা করে বিজেপি দলের সুবিধা করে দিতে পারেন বলে বিরোধী ও বিশেষজ্ঞ মহলের অভিযোগ।

এখন কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রকের এক বিজ্ঞপ্তিতে ভ্যাক্সিন আগামী বছরের আগে বাজারে নিয়ে আসা যাবে না বলে ঘোষণার ফলে বিরোধীদের অভিযোগকেই সত্য প্রমাণিত করেছে। বিশেষজ্ঞ ও বিরোধীদের আরও অভিযোগ ছিল তাড়াহুড়ো করে কেবল পরীক্ষাগারের পরীক্ষার ওপর নির্ভর করে তা বাজারে নিয়ে এলে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হবে।

ছয়টি ভারতীয় সংস্থা কোভিড ১৯ ভ্যাক্সিন নিয়ে কাজ করছে। ভারতীয় কোভ্যাক্সিন এবং জিকভ-ডি সহ সম্ভাব্য ভ্যাক্সিনের মানুষের ওপর প্রয়োগ করা হয়েছে। কিন্তু কোনওটিই ২০২১ সালের আগে সাধারণের ব্যবহারের জন্য বাজারে ছাড়া যাবে না বলে মন্ত্রকের পক্ষে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

মন্ত্রকের পক্ষে জানানো হয়েছে এক ব্রিটিশ সংস্থা অ্যাস্ট্রাজেনেকা ও এক মার্কিন সংস্থা তাদের ভ্যাক্সিন দুটি ভারতে উৎপাদনের জন্য চুক্তি করেছে, কিন্তু তা কতটা নিরাপদ ও কার্যকরী সে নিয়ে সংশয় থেকেই গিয়েছে। এগুলি সবই ফেজ দুই ও তিনের পরীক্ষার পর অনুমোদিত হয়েছে। ভ্যাক্সিন দুটি প্রথম দুই পর্যায়ে কতটা নিরাপদ তা পরীক্ষা করা হয় এবং তৃতীয় পর্যায়ে তা কতটা কার্যকরী তার পরীক্ষা করা হয়।

প্রতিটি পরীক্ষার পর্যায় বেশ কয়েক মাস বা বছর ধরে চলে সম্পূর্ণ ফল জানতে। যদিও ওষুধের পরীক্ষার বিষয়টি অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করার প্রয়াস করা হয়ে থাকে। কিন্তু সকল পর্যায়ের পরীক্ষার পর তা সাধারণের ব্যবহারের জন্য বাজারে নিয়ে আসার বিষয়টির সময়সীমা নির্দিষ্ট করে দেওয়া আইসিএমআর এর মতো বিশেষজ্ঞ সংস্থার ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক ঠেকেছে।

ভারতে এপর্যন্ত ছয় লাখ সত্তর হাজার নাভাল করোনাভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার খবর রয়েছে। আইসিএমআর ভ্যাক্সিন বাজারে আনার সময়সীমা ঘোষণা পরবর্তী সমালোচনার মুখে পড়ে তার বক্তব্যের ভিন্ন পর্যায়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেছে।

আইসিএমআরের পক্ষে এক চিঠিতে শনিবার জানানো হয়েছে, ভ্যাক্সিন বাজারে আনার আগে পরীক্ষার জন্য আগ্রহীদের রাজি করানোর ব্যাপারে অযথা লালফিতের ফঁস এড়ানোর কথা বলেছি, কিন্তু প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া এড়িয়ে যাওয়ার কোনও কথা বলা হয়নি।

ভ্যাক্সিন বের করার বিষয়ে আইসিএমআর আন্তর্জাতিক নীতিই পালন করে থাকে। হায়দরাবাদের ভারত বায়োটক সংস্থার কোভ্যাক্সিন ও জিডাস ক্যাডিলা সংস্থার জিকভ-ডি ভ্যাক্সিন দুটি এক ও দুই পর্যায়ে পরীক্ষার জন্য অনুমোদিত হয়েছে। আইসিএমআর’এর সহযোগিতায় তৈরি কোভ্যাক্সিনটি প্রথম পর্যায়ের পরীক্ষার জন্য আঠাশ দিন সময় লাগবে। ফলে তা পনেরো আগস্টের মধ্যে বাজারে ছাড়া যাবে বলে তারা জানায়।

কিন্তু দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষা ছাড়াই তা কিভাবে বাজারে ছাড়া যায় তার কোনও সদুত্তর দেয়নি আইসিএমআর। অন্যদিকে ভারত বায়োটেক উদ্ভাবিত কোভ্যাক্সিন পরীক্ষার জন্য পনেরো মাসের সময় চাওয়া হয়েছে তাদের আবেদনে। এখবর এক সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। ফলে তা যে ২০২১ আগে বাজারে আনা সম্ভব নয় সেটা পরিষ্কার।

সেই মতো বিজ্ঞানমন্ত্রকও তার নোটিশে উল্লেখ করেছে। সারা বিশ্বে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় বিভিন্ন দেশে ভ্যাক্সিন তৈরিতে নিযুক্ত বিজ্ঞানীরা। তবে ভারত ভ্যাক্সিন বা জেনেটিক ওষুধ তৈরিতে বিশেষজ্ঞ দেশ হিসেবে প্রথম সারিতে রয়েছে। বিশ্বে করোনাভাইরাস সংক্রমণে চুতুর্থ দেশ হিসেবে ভারতে সংক্রমণের সংখ্যা সাড়ে ছয় লাখের বেশি।

অন্যদিকে বিশ্বে সংক্রমণের সংখ্যা এক কোটি বারো লাখ এবং মৃত্যুর সংখ্যা পাঁচ লাখ ত্রিশ হাজার। এদিকে কেরল এক বছরের জন্য করোনাভাইরাস নিরাপত্তা নীতি চালু করল এক বছরের জন্য। প্রাথমিকভাবে দেশে প্রথম কেরলেই করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়ে। কিন্তু সংক্রমণ প্রতিরোধে কেরলই অন্যদের পিছনে ফেলে সাফল্য অর্জনে সমর্থ হয়েছে।