বিধানচন্দ্র রায় মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীনই রাজ্যে বামপন্থীদের উত্থান। তবে বিধানচন্দ্র রায়ের প্রতি কোনওদিনই শ্রদ্ধা তো দুরস্তান, শালীন আচরণও করেনি বামেরা। ১৯৫৯ সালে খাদ্য আন্দোলনের সময় মিছিলের ওপর পুলিশের গুলি চালানাোর ঘটনায় ‘খুনি বিধান নিপাত যাক’ স্লোগান তুলেছিল বামেরা।
তবে ২০১১ সালে রাজ্যে ক্ষমতা হারানোর পর মনোভাবে পরিবর্তন আসে আলিমুদ্দিনের। ২০১৬ সালে কংগ্রেসের সঙ্গে নির্বাচনী জোট করেছে বামেরা। আসতে চলেছে ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে এই প্রথম বিধানচন্দ্র রায়’এর স্মরণ উপলক্ষে রাজ্য কংগ্রেসের দফতরে গেল বামনেতারা। এর আগে কখনও কংগ্রেসের দফতরের কোনও অনুষ্ঠানে যেয়ে দেখা যায়নি তাদের।
এদিন বিধান স্মরণের মঞ্চে বামেদের জন্য ভূয়সী প্রশংসা শোনা গেল কংগ্রেস নেতা সোমেন মিত্রের গলায়। তিনি বললেন, চিরকাল গণতন্ত্রের জন্য লড়েছেন বামপন্থীরা। এদিকে একুশের বিধানসভা নির্বাচনে বাঙালির সেন্টিমেন্টকে কাজে লাগাতে এবং নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে বিধানচন্দ্র রায়কে হাতিয়ার করল রাজ্য বিজেপি। সাড়ম্বরে পালন করল পশ্চিমবঙ্গের রূপকার বিধানচন্দ্র রায়ের জন্ম ও মৃত্যুদিনটিকে।
তবে বিধানচন্দ্র রায়ের স্মরণ অনুষ্ঠানকে ঘিরে বাম কংগ্রেসের পরস্পরের পিঠ চাপড়ানো ছিল উল্লেখযোগ্য। এর আগে জাতীয় নাগরিকপঞ্জীর প্রতিবাদে বেং রাজ্যের তিন বিধানসভা উপনির্বাচনের প্রচারে বাম কংগ্রেসকে একসঙ্গে প্রচার অভিযানে দেখা গিয়েছিল। কয়েক মাস বিরতির পরে আবার তারা একসঙ্গে।
সম্প্রতি পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে কলকাতা এবং জেলায় যৌথভাবে অভিযানে নেমেছিল বাম কংগ্রেস নেতা ও সমর্থকরা। সূত্রের খবর জোট শিবিরের পরবর্তী কর্মসুচিও চূড়ান্ত করা হয়েছে। এরপর পশ্চিমবঙ্গের রূপকার এবং প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়ের স্মরণে আবার তারা প্রকাশ্যে একমঞ্চে এলেন।
এদিন বিধানচন্দ্র রায়ের প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র বলেন, কেন্দ্র ও রাজ্যে দুই অশুভ শক্তি যতদিন থাকবে, ততদিন বাম কংগ্রেসের যৌথ সংগ্রাম চলবে। দুই দলের জোট প্রসঙ্গে সোমেনবাবু বলেন, পরিস্থিতি আজ আমাদের বাধ্য করছে বামেদের সঙ্গে একসঙ্গে বিধানচন্দ্র রায়কে স্মরণ করতে। বামেরা গণতন্ত্র এবং ধর্ম নিরপেক্ষতার বিরুদ্ধে লড়াই করেছে বলেও সাফাই দেন সোমেন মিত্র।
এই দিনটিকে যৌথভাবে পালন করার জন্য বাম নেতাদের চিঠি পাঠিয়েছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি। সেই আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে সিপিএম-এর সুজন চক্রবর্তী, আরএসপি’র মনোজ ভট্টাচার্য এবং ফরওয়ার্ড ব্লকের নরেন চট্টোপাধ্যায়ের মতো নেতারা বিধান ভবনে পৌছে যান।
আজ দুই জুলাই প্রয়াত বাম নেতা অশোক ঘোষের জন্মদিন পালন করা হবে হেমন্ত বসু ভবনে। বামেদের আমন্ত্রণ গ্রহণ করে সেখানেও যাবেন কংগ্রেস নেতা সোমেন মিত্র, প্রদীপ ভট্টাচার্যরা। জোট রাজনীতির বাধ্যবাধকতার কারণে অতীতের তিক্ততা ভুলে একজোট হতে চাইছে বাম-কংগ্রেস নেতারা।