• facebook
  • twitter
Saturday, 23 November, 2024

বিদেশ নীতিতে সরকারি ব্যর্থতার কারণেই এতগুলি জওয়ানকে আত্মবলিদান দিতে হল: কমল হাসান

গত সপ্তাহে লাদাখে উভয় দেশের সেনাদের মধ্যে সংঘর্ষই প্রমাণ করে গত অক্টোবর মাসে উভয় দেশের প্রধানমন্ত্রীর দ্বিপাক্ষিক কূটনৈতিক বৈঠক নিস্ফল হয়েছে ধরে নিতে হবে।

অভিনেতা তথা রাজনীতিক কমল হাসান। (File Photo: IANS)

লাদাখ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার দেশের মানুষের ভাবাবেগকে সুড়সুড়ি দিতে চাইছে। অভিনেতা তথা রাজনীতিক কমল হাসান লাদাখে চিন ভারত সেনার মধ্যে সংঘর্ষে নিহত কুড়ি ভারতীয় জওয়ান ও বেশ কয়েক জন সেনার আহত হওয়ার ঘটনা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার দেশের মানুষের ভাবাবেগে সুড়সুড়ি দিতে চাইছে বলে কঠোর সমালোচনা করেছেন।

তিনি বলেন, লাদাখ নিয়ে সর্বদলীয় বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর, ‘কেউ আমাদের ভূখণ্ডে নেই বা কোনও সামরিক চৌকি কেউ দখলও করেনি’- মন্তব্যের সাফাই দিতে পরবর্তীতে সরকারিভাবে ন্যক্কারজনক ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার লাদাখ পরিস্থিতি পর্যালোচনা নিয়ে তাদের দুষ্কর্ম ঢাকার চেষ্টা করে যাচ্ছে এবং মানুষের দেশের প্রতি ভাবাবেগকে একইভাবে নিজেদের স্বপক্ষে কাজে লাগাতে চাইছে। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও আঁর অনুগামীদের এমন ন্যক্কারজনক অপকর্ম থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করছি। কমল হাসান তাঁর মাক্কাল নিধি মায়াম দলের প্যাডে এই চিঠি লিখেছেন প্রধানমন্ত্রীকে।

যেকোনও বৈঠকে প্রশ্ন করাকে দেশ বিরোধী আখ্যা যায় না। মনে রাখতে হবে, ঘটনার সত্যাসত্য জানতে প্রশ্ন করাই গণতন্ত্রের অন্যতম মূল ভিত্তি তিনি জানান, বিশেষত সর্বদলীয় বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সঙ্গে বিদেশমন্ত্রকের বয়ানের বিস্তর ফারাক দেখা যায়।

শুক্রবারের সর্বদলীয় বৈঠকের পর সরকার প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় চরম সংঘর্ষে ভারতীয় সেনার ওপর বর্বরোচিত আক্রমণের পরিস্থিতি নিয়ে তথ্য গোপন করছে বলে বিরোধীরা সমালোচনায় মুখর। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধি বলতে শুরু করেছেন, প্রধানমন্ত্রী চিনা সেনার আগ্রাসনের মুখে ভারতীয় ভূখণ্ডের অংশ ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন।

এরপরই সরকার তড়িঘড়ি প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সমর্থনে সাফাই দেয় প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা অতিক্রম করে চিনা সেনা তাবু খাটাতে চেষ্টা করলে ভারতীয় সেনা বাধা দেয় এবং ফলে সংঘর্ষ বেধে যায়। চিনের সেনা প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা পার করে যে অংশে তাদের তাবু খাটাতে চাইছিল সেখান থেকে সরে যেতে অস্বীকার করে।

এরপরই প্রধানমন্ত্রী চিনা সেনার কাছে ভারতীয় ভূখণ্ডের অংশ সমর্পন করতে বাধ্য হয়েছেন। কারণ সংশ্লিষ্ট জমি যদি চিনের সীমার মধ্যেই পড়ে তবে আমাদের জওয়ানদের হত্যা করার কারণ কি? কোথায় তাদের হত্যা করা হয়েছে?

তিনি আরও ক্ষোভের সঙ্গে বলেছেন, দলীয় স্বার্থ সিদ্ধির জন্য সরকার জাতীয় বিপর্যয়ে সেনাবাহিনী সাহসিকতার সঙ্গে লড়াই করেছে ভূখণ্ড রক্ষায়- বলে বিবৃতি দেওয়া চলিয়ে যাছে। কমল হাসান জানান, দেশের স্বার্থেই সকল তথ্য প্রকাশ করা অনুচিত।

কিন্তু দেশের এমন এক সময়ে দেশবাসীকে প্রকৃত তথ্য জানানোও তো সরকারের কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। অন্য দিকে প্রশ্ন করলেই তাদের ‘দেশদ্রোহী’, ‘সেনাদের কাজে সন্দেহ করা উচিত নয়’- ইত্যাদি মন্তব্য করা সরকারের শোভা পায় না। এখন সময় এসেছে অবস্থা বদলের এবং স্বচ্ছতা কায়েমের।

গত সপ্তাহে লাদাখে উভয় দেশের সেনাদের মধ্যে সংঘর্ষই প্রমাণ করে গত অক্টোবর মাসে উভয় দেশের প্রধানমন্ত্রীর দ্বিপাক্ষিক কূটনৈতিক বৈঠক নিস্ফল হয়েছে ধরে নিতে হবে। বৈঠকের ঠিক আট মাস পরে চিনা সেনা ভারতীয় নিরস্ত্র সেনাদের পিঠে ছুরি মেরে হত্যা করেছে। এটা যদি সরকারের কূটনৈতিক বৈঠকের ফল হয় তবে, কৌশল একেবারেই মাঠে মারা গিয়েছে বা চিনের মনোভাব বুঝতে ব্যর্থ হয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।

দুটি ক্ষেত্রেই সরকারকে আরও কয়েকটি প্রশ্নের জবাবদিহি করতে হবে বলে কমল হাসান দাবি করেছেন। ভারতীয় সেনা জওয়ানদের আত্মবলিদান এত সস্তা ভাবার কোনও কারণ আছে কি? যখন ভারতীয় সেনানী বিশ্বের যেকোনও সেনানীর দক্ষতার চেয়ে কোনও অংশে কম নয়। কিন্তু আমাদের সরকারই তাদের আত্মবলিদানকেই শেষ কথা হিসেবে ধরে নিচ্ছে।

আমরা জানতে চাই চিনের আগ্রাসন নিয়ে সরকার কি কৌশল নিয়েছিল। তা কিন্তু সামরিক বাহিনীর কাজ নয়। কূটনীতিক আলোচনা বিফল হলেই সামরিক বাহিনীর ডাক পড়ে। সঠিক কূটনৈতিক কৌশল হল- জওয়ানদের আত্মবলিদানের আগেই কূটনৈতিক স্তরে পারস্পরিক শুভবুদ্ধি ও শান্তিপূর্ণভাবে সমস্যা মিটিয়ে নেওয়া।