• facebook
  • twitter
Saturday, 23 November, 2024

নেপাল নতুন মানচিত্র বদল করতে নারাজ

সম্প্রতি লিপুলেখ গিরিপথ থেকে কৈলাশ-মানস সরোবর যাওয়ার পথ পর্যন্ত একটি সড়কের উদ্বোধন করেন রাজনাত সিং। তার পরেই নেপাল বিতর্কিত মানচিত্র প্রকাশ করে।

নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি (Photo by PRAKASH MATHEMA / AFP)

শুক্রবার সকালে নেপাল ভারত সীমান্ত সংলগ্ন নেপাল ভূখন্ডে নেপাল সীমান্তরক্ষী পুলিশের গুলিতে এক ভারতীয় প্রাণ হারান। সশস্ত্র সীমা বল ডিরেক্টর জেনারেল কুমার রাজেশ চন্দ্র সংবাদ সংস্থাকে জানান, সকাল সাড়ে আটটার কিছু পরে সীতামারি সীমান্ত থেকে বেশ কিছুটা নেপালের ভিতরে এই ঘটনা ঘটে। নেপাল সীমান্ত পুলিশের গুলিতে বিকেশ যাদব (২২) নামে এক ব্যক্তি নিহত হন। আরও দু’জন আহত হন।

লরগন যাদব নামে একজনকে নেপাল পুলিশের পক্ষে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে সূত্রের খবর। নেপাল ভারত সীমান্ত সীতামারিতে কোনও বেড়া নেই। দুই দেশের মানুষ অবাধেই সীমান্ত দিয়ে উভয় দেশের আত্মীয় স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে যান।

এসএসবি’র পক্ষে জানানো হয়েছে, বিকেশ যাদবের পেটে গুলি লাগে। গুলিতে আহত উদয় ঠাকুর ও উমেশ রামকে সীতামারিতে এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, সকালে নেপাল ভূখন্ডের মধ্যে এক গৃহবধুকে তার ভারতীয় আত্মীয়ের সঙ্গে কথা বলতে দেখে পুলিশের পক্ষে আপত্তি জানানো হয়। উভয়ের মধ্যে বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। বেশ কয়েকজন ভারতীয় এসময় সেখানে হাজির হয়ে যায়। নেপাল পুলিশ ভিড় ফাকা করতে প্রথমে শুন্যে গুলি ছেড়ে বলে দাবি করেছে। পরে তিন জনকে তাক করে গুলি চালায়। নেপালের সারলাহিতে এই ঘটনা ঘটে। ভারত-নেপাল সীমান্তের ১৭৫১ কিলোমিটার পাহারায় রয়েছে ভারতীয় সীমা সুরক্ষা বল।

লিপুলেখ গিরিপথ, লিম্পিয়াধুরা এবং কালাপানিকে নিজেদের অংশ হিসেবে দেখিয়ে নেপাল সম্প্রতি যে মানচিত্র প্রকাশ করেছে তা পরিবর্তন করা হবে না বলে এদিন আবার জানিয়ে দিল নেপাল। এনিয়ে ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক টানাপোড়েন শুরু হওয়া সত্ত্বেও নেপাল তার সিদ্ধান্ত বদল করবে না বলে জানিয়েছে।

নেপালের বিদেশমন্ত্রী প্রদীপ গয়ালি সংবাদমাধ্যমে জানান, ‘জম্মু-কাশ্মীরে গত ২ নভেম্বর মানচিত্রে বদল ঘটিয়েছে ভারত। এরপরই নেপাল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে, এবং এটা স্থায়ী সিদ্ধান্ত, কারণ সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলি নেপালের মধ্যেই পড়ে বলে তিনি দাবি করেছেন। তবে কোন এলাকা নেপালের মধ্যে পড়েছে তা নিয়ে আলোচনা হওয়া দরকার।’

সম্প্রতি লিপুলেখ গিরিপথ থেকে কৈলাশ-মানস সরোবর যাওয়ার পথ পর্যন্ত একটি সড়কের উদ্বোধন করেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাত সিং। তাতে প্রতিবাদ জানায় কেপি শর্মা ওলির সরকার। তার পরেই নেপাল বিতর্কিত মানচিত্র প্রকাশ করে। ভারতের পক্ষে তীব্র আপত্তি জানানো হয়েছে। এর পিছনে চিনের উস্কানি থাকতে পারে বলে ভারতের ইঙ্গিতে দু’দেশের মধ্যে উত্তাপ আরও বাড়ে। সুর কিছুটা নরম করে বিদেশ সচিব স্তরে আলোচনার প্রস্তাব দেয় নেপাল। কিন্তু দিল্লির তরফে এবিষয়ে কোনও সাড়া দেওয়া হয়নি।

এনিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন নেপালের বিদেশমন্ত্রী প্রদীপ গয়ালি। তিনি বলেন, বিদেশ সচিব স্তরে আলোচনা চালাতে ভারতকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু তার জবাব পাইনি আমরা। কূটনৈতিক স্তরে আলোচনা চালাতে দু’দেশের দূতাবাসের পক্ষ থেকে চেষ্ট করা হচ্ছে। তবে নেপাল আলোচনার জন্য প্রস্তুত বলে তিনি জানিয়েছেন।

করোনা সঙ্কটের মধ্যে গত একমাস ধরে লাদাখ সীমান্তে চিনা বাহিনী ও ভারতীয় সেনা মধ্যে সংঘাতের পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সীমান্তে উত্তেজনা কমাতে সেনা স্তরে আলোচনা শুরু হয়েছে। চিনের সঙ্গে সেনান্তরে আলোচনা করছে ভারত, তবে নেপালের সঙ্গে আলোচনা চালাতে বাধা কোথায় -প্রশ্ন করেন নেপালের বিদেশমন্ত্রী।

তিনি জানান, ভারত ও চিনের সঙ্গে নেপালের সুসম্পর্ক রয়েছে। দিল্লির তরফে এবিষয়ে কোনও সরকারি প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। কিন্তু এক সাংবাদিক সম্মেলনে বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র অনুরাগ শ্রীবাস্তব জানান, বিষয়টি নিয়ে আগেই নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে ভারত। নেপালের সঙ্গে ভারতের ঐতিহ্যপূর্ণ সহাবস্থানের বিষয়টি দীর্ঘদিনের। নেপালের উন্নয়নমূলক কাজে ভারতের সহায়তা আরও প্রসারিত হয়েছে।