করোনা লকডাউনে দূরবিধি বজায় রাখতে বুধবার সরকারি কর্মচারীদের দু’শিফ্টে কাজের জন্য নয়া বিধি ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একই সঙ্গে জুলাই মাসেও রাজ্যের স্কুলগুলি খোলা নিয়ে অনিশ্চয়তার কথা শোনালেন মমতা। সত্তর শতাংশ কর্মচারীর উপস্থিতিতে রাজ্য সরকারি অফিসগুলি খুলে গিয়েছে ৮ জুন থেকে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত গণপরিবহণের সমস্যা মেটেনি। লোকাল ট্রেন এবং মেট্রো চালু হচ্ছে না এই মাসে।
এই পরিস্থিতিতে সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে যতটুকু বাস পরিষেবা চালু হয়েছে, সেখানে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হচ্ছে না। এর কারণে বুধবার নবান্নে দুই শিফ্টে সরকারি অফিসে কাজ হওয়ার কথা ঘোষণা করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এখন থেকে প্রথম শিফ্ট হবে সকাল সাড়ে ন’টা থেকে দুপুর আড়াইটে পর্যন্ত। দ্বিতীয় শিফ্ট-এর সময়সীমা বেলা সাড়ে বারোটা থেকে সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত। এখন এমনিতেই সরকারি অফিসে একদিন ছাড়া অফিসে আসতে হচ্ছে। এরপর দু’শিফ্টে কাজের সময় বেঁধে দেওয়ায় কাজের সময়ও কমে গেল। অফিসে থাকতে হবে মোট পাঁচ ঘন্টা।
এদিন মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পরেই বিজ্ঞপ্তি জারি করে নবান্ন জানিয়ে দেয়, এবার থেকে এই শিফ্ট মেনেই কর্মীদের রোস্টার তৈরি করা হবে। তবে যেসব অফিসাররা অফিসের গাড়িতে যাতায়াত করেন, তাদের জন্য কোনও শিফ্ট ভাগ করা থাকবে না।
মুখ্যমন্ত্রী এদিন বেসকারি অফিসেও এইরকম শিফ্টে ডিউটি চালু করার কথা বিবেচনা করতে বলেছেন। তিনি বলেন, যতটা সম্ভব ওয়ার্ক ফ্রম হোম ব্যবস্থার ওপর জোর দেন। সরকারি অফিসের বাসযাত্রীদের এদিন সিটে বসেই যাতায়াত করতে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। আশ্বস্ত করেছেন এক ঘন্টা পর্যন্ত দেরি হলেও লাল কালির দাগ পড়বে না।
মমতা বলেন, রাজ্যে এই মুহুর্তে পাঁচ হাজারেরও বেশি বাস চলছে। তা সত্ত্বেও মানুষের সমস্যা হচ্ছে। এখনও সবাই কর্মস্থলে আসতে পারছেন না। তা দুই শিফ্টে অফিসের সুযোগ করে দেওয়া হল। অন্যদিকে জুলাই মাসেও রাজ্যের স্কুলগুলি খোলা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করলেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে উচ্চ মাধ্যমিকের বাকি পরীক্ষাগুলি জুলাইয়ের মধ্যে সেরে ফেলা হবে বলে জানিয়ে দেন। একই সঙ্গে প্রাইভেট স্কুলগুলিকে অনুরোধ করেন, এই সময়ে স্কুলের ফি না বাড়ানোর জন্য।
প্রসঙ্গত বুধবারই অন্যায্যভাবে স্কুলের ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদে ইন্দিরা গান্ধি মেমোরিয়াল স্কুলের সামনে যশোর রোজ ৩৪ ও ৩৫ নম্বর সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখায় ওই স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের অভিভাকরা। ফলে সকাল এগারোটা থেকে সাড়ে বারোটা পর্যন্ত যানজটের সৃষ্টি হয় জাতীয় সড়কে। ভোগান্তিতে পড়ে পথে বেরনো মানুষজন। এরপরেই বিকেলে নবান্নে প্রাইভেট স্কুলে ফি না বাড়ানোর জন্য অনুরোধ জানান মমতা।
করোনা সতর্কতার জন্য মার্চের মাঝামাঝি সময় থেকেই রাজ্যের স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পঠনপাঠন বন্ধ হয়ে যায়। তারপর ধাপে ধাপে একের পর এক সিদ্ধান্ত বদল করতে থাকে শিক্ষা দফতর। সর্বশেষ কেন্দ্রীয় সরকার ৩০ জুন পর্যন্ত লকডাউন ঘোষণার পর শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন ওই সময় পর্যন্ত রাজ্যের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি খুলবেনা। তবে উচ্চ মাধ্যমিকের বাকি পরীক্ষাগুলি ২, ৬ এবং ৮ জুলাই হবে বলে জানিয়েছিলেন পার্থবাবু।
মুখ্যমন্ত্রীও বুধবার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার দিনগুলি অপরিবর্তিত থাকবে বলে জানিয়ে দেন। তবে একই সঙ্গে বলেন, মনে হচ্ছে না, জুলাই মাসেও স্কুল খুলবে। যদিও এই বিষয়ে ঘোষণা শিক্ষামন্ত্রীই করবেন। তবে স্কুল খোলা নিয়ে খোদ মুখ্যমন্ত্রীর সংশয় প্রকাশের পর জুলাই মাসে রাজ্যের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার অনিশ্চয়তাই নিশ্চিত হল।