মানুষের স্বাস্থ্যের চেয়ে আর্থিক বিষয় কখনও বড় হতে পারে না। মোরাটোরিয়ামের ওপর থেকে সুদ মুকুবের মামলায় এই ভাষাতেই রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার নিন্দা করল সুপ্রিম কোর্ট। এদিকে, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক হলফনামা দিয়ে জানিয়েছে, মোরাটোরিয়ামের ওপর সুদ মুকুব করা হলে ব্যাঙ্ক সহ ঋণদাতা সংস্থাগুলির ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ২ লক্ষ কোটি টাকা।
লকডাউনের মধ্যে টার্ম লোনে ৬ মাসের জন্য মোরাটোরিয়ামে যোগ দিয়েছে আরবিআই। এর অর্থ এখন ঋণের ইএমআই দিতে না হলেও সুদ সমেত পরে দিতে হবে বলে সব ব্যাঙ্ক গ্রাহকদের জানিয়েছে আরবিআই। অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন ইএমআই এখন দিতে হবে না বলেও জানিয়েছিলেন। সবাই ভেবেছিলেন লকডাউন পরিস্থিতিতে কেন্দ্রের এই ঘোষণা অনেকখানি স্বস্তি দেবে গ্রাহকদের।
কিন্তু পরে আরবিআই ব্যাঙ্কগুলিকে যে নির্দেশনামা পাঠায় তা দেখে রীতিমত বিরক্ত গ্রাহকরা। সুদ দিতে হবে কেন এই প্রশ্ন তুলে মামলা হয় সুপ্রিম কোর্টে। আর এই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টের বক্তব্য, আর্থিক বিষয় কখনও মানুষের স্বাস্থ্যের থেকে বড় হতে পারে না।
রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অবশ্য তাদের মতো করে যুক্তি দিয়েছে। মোরাটোরিয়াম দেওয়া হচ্ছে এই মুহূর্তের আর্থিক দায় থেকে মুক্তির জন্য। তার মানে ঋণ বা সুদ মুকুব করা নয়। উল্লেখ্য, ২৫ মার্চ লকডাউন ঘোষণার পরই রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া তিনমাসের জন্য টার্ম লোনের জন্য মোরাটোরিয়াম ঘোষণা করে।
অন্যদিকে, ২৭ মার্চ রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর শশীকান্ত দাস ঘোষণা করেন, সমস্ত টার্ম লোনের ওপর তিনমাস মোরাটোরিয়াম থাকবে। অর্থাৎ তিনমাস ইনস্টলমেন্ট পেমেন্ট বন্ধ থাকবে। এপ্রিল, মে ও জুন মাসে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে কোনও ইএমআই কাটা হবে না। যারা এর সুযোগ নেবেন তাদের ঋণ শোদ দেওয়ার মেয়াদ পিছিয়ে যাবে।
২৩ মে অবশ্য ফের তিন মাসের জন্য টার্ম লোনের ক্ষেত্রে মোরাটোরিয়াম ঘোষণা করে আরবিআই। এরপর প্রথমবার যে মোরাটোরিয়াম ঘোষণা হয়েছিল তাতে বাড়তি সুদ দিতে হওয়ায় আদালতের দ্বারস্থ হয় আগ্রার গজেন্দ্র শর্মা। সেই মামলার শুনানিতে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ওপর চাপ বাড়ায় সুপ্রিম কোর্ট। আরবিআই সংবাদমাধ্যমকে জানায় কেন সুদ মুকুব সম্ভব নয়।
সুপ্রিম কোর্ট এই নিয়ে আরবিআইয়ের নিন্দা করেছে। এবিষয় নিয়ে কেন চাঞ্চল্য হল সংবাদমাধ্যমে সেই প্রশ্নও রেখেছে আদালত। গজেন্দ্র শর্মা অভিযোগ করেছিলেন, আইসিআইসিআই ব্যাঙ্কে তার ৩৭ লক্ষ টাকা ঋণ রয়েছে। লকডাউনের কারণে তার আয় না হওয়ায় তিনি কোনও ইএমআই দিতে পারছে না।
কিন্তু তার জন্য যদি বাড়তি সুদ দিতে হয়, তাহলে মোরাটোরিয়াম যে উদ্দেশে ঘোষণা করা হয়েছিল তার স্বার্থইনষ্ট হয়ে যাবে। তার আবেদন ছিল, সুপ্রিম কোর্ট এবিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকার এবং রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিক। সেই মামলার শুনানিতে এমনটাই বলল দেশের শীর্ষ আদালত। এই মামলার প্রবর্তী শুনানি রয়েছে ১২ জুন।