সংবাদমাধ্যমের প্রকাশিত খবরের ওপর অযথা মামলা করে প্রকৃতপক্ষে মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকেই বিনষ্ট করা হচ্ছে। সুপ্রিম কোর্টে দায়ের করা মামলার শুনানির সময় বিচারপতি চন্দ্রচূড় এবং বিচারপতি এম আর শাহ তাদের নির্দেশে বলেন, সংবাদমাধ্যমের ওপর অযথা আইনি প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে তা সামগ্রিকভাবে জনগণের মত প্রকাশের স্বাধীনতাকেই খর্ব করা হয়।
বিচারপতিরা তাঁদের রায়ে জানান, একই মামলা নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে রাজনৈতিক মদতপুষ্ট ব্যক্তিরা মামলা করছেন। এতে সংবাদ প্রতিনিধিদের হয়রানি করাই যে মূল উদ্দেশ্য তা পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে। মনে রাখতে হবে সাংবাদমাধ্যমই সকল সময় বিশেষত আপতকালীন অবস্থায় নানা ঝুঁকি নিয়েও প্রকৃত ঘটনা তুলে ধরার বিষয়ে বিশেষ নজর দেয়।
সংবিধানের ধারা ১৯ (১) (এ) অনুযায়ী মানুষ তখনই তার মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ভোগ করতে পারেন যখন সংবাদমাধ্যম স্বাধীনভাবে পক্ষপাতহীন হয়ে প্রকৃত ঘটনা প্রকাশ করতে পারে। বিচারপতিরা আরও বলেন, ততদিনই ভারতে মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে যতদিন সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরা কোনওভাবে প্রভাবিত বা ভীত না হয়ে প্রকৃত সংবাদ পরিবেশন করতে পারবেন।
তবে কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। সংবিধানের ধারা ১৯ (২) অনুযায়ী সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের সত্যাসত্য নিয়ে যদি কোনও অভিযোগ থাকে তবে তা আদালতের বিচারাধীন হতেই পারে। কিন্তু একই বিষয়ে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে মামলা করে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব করার চেষ্টা হলে সামগ্রিকভাবে বাক স্বাধীনতার ওপরই আঘাত হানা হয়।
এর ফলে দেশের সরকারি কর্ম পরিচালনায় কোনও অভাব অভিযোগ বা দুর্নীতির বিষয়ে মানুষ জানতেই পারবেন না। আর মানুষও তার অধিকারগুলি সঠিকভাবে পূরণ করার বিষয়ে কোনও মাধ্যমেই আর সরকারের কাছে আর্জি জানাতে পারবেন না। কারণ সকলেরই তো আর আদালতে যাওয়ার ক্ষমতা নেই আমাদের মতো দরিদ্র দেশে।
মনে রাখতে হবে সংবিধানের মত প্রকাশের অধিকার একজন স্বাধীন নাগরিকের চেয়ে একজন সাংবাদিকের অনেক বেশি। কারণ সংবাদ প্রতিনিধি হিসেবে তিনি সমাজের বৃহত্তর অংশের কাছে মতপ্রকাশের অধিকারকে সঠিকভাবে উপভোগ করার বিষয়গুলি জানাতে পারেন। তাই মানুষকে বুঝতে হবে সাংবাদমাধ্যমগুলির ওপর অযথা আইনি প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে তাদের কাজে বাধা সৃষ্টি করা সামগ্রিকভাবে প্রকাশের অধিকারকেই ক্ষুণ্ণ করা।