করোনা’র গ্রাস আর পেটের টান– এই দু’য়ের মধ্যে সামঞ্জস্য রেখে চতুর্থ দফা লকডাউনে নিয়ম মেনে বেশ কিছু দোকানপাট খোলার সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য সরকার। সোমবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করলেন, কনটেইনমেন্ট জোনকে আরও ছোট করতে ‘এ’ (অ্যাফেক্টেড), ‘বি’ (বাফার) এবং ‘সি’ (ক্লিন)- এই তিন ভাগে বিভক্ত করা হল।
বুথভিত্তিক কিংবা ওয়ার্ডভিত্তিকভাবে এই ভাগ করা হল। কনটেইনমেন্ট ‘এ’ জোন হল যেখানে সংক্রমণ হতে পারে বা হয়েছে। যেখানে কোনও দোকানপাট খোলা হবে না, জরুরি পরিষেবা ছাড়া কিছু মিলবে না। কনটেইনমেন্ট ‘বি’ জোনে বেশ কিছু দোকানপাট খোলা হবে, সেইসঙ্গে নজরদারিও চলবে। কনটেইনমেন্ট ‘সি’ জোনে বিধিনিষেধ অনেকটাই ছাড় থাকবে।
মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার নাইট কার্ফু-এর কথা বললেও সরকারিভাবে এই রাজ্যে কার্ফু ঘোষণা করা হচ্ছে না। তবে সন্ধে সাতটার পর থেকে সকাল সাতটা পর্যন্ত জরুরি কারণ ছাড়া বাড়ির বাইরে না থাকতে জনসাধারণের কাছে আবেদন জানালেন মুখ্যমন্ত্রী।
করোনার কথা মাথায় রেখেই সাধারণ মানুষের রুজি রোজগার যাতে থমকে না যায়, সেজন্য চতুর্থ দফার লকডাউনে বেশ কিছু ছাড়ের কথা ঘোষণা করলেন মমতা।
• ২১ মে থেকে কনটেইনমেন্ট ‘এ’ জোন ছাড়া সর্বত্র বড় এবং ছোট দোকান খুলবে সামাজিক দূরত্ব ও অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে।
• হকার্স মার্কেট খোলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব, ডিজি, পুলিশ কমিশনার, পুর দফতরের সচিব ও কমিশনার, পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে নিয়ে একটি কমিটি গঠন। এই কমিটির দেওয়া পাসের নম্বর অনুযায়ী ২৭ মে থেকে জোড় ও বিজোড়নীতি মেনে খুলবে হকার্স মার্কেট।
• ২৭ মে থেকে দু’জন করে যাত্রী নিয়ে অটো চলবে। বেসরকারি বাস মালিকদেরও জনসাধারণের দুরবস্থার কথা ভেবে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বাস চালানোর অনুরোধ মমতার।
• বিভিন্ন জেলার মধ্যে বাস চলবে অচিরেই।
• সেলুন বা চুল কাটার দোকান এবং বিউটি পার্লার খোলার অনুমতি। তবে যে সামগ্রী চুল দাড়ি কাটার জন্য ব্যবহার করা হবে, তা প্রতিবার ব্যবহারের পর স্যানিটাইজ করতে হবে।
• ছোট এবং বড় শিল্প সংস্থা এবং বেসরকারি অফিস (এমনকী মলের ভেতরে থাকলেও) একদিন অন্তর খোলায় ছাড়পত্র।
• আনন্দ বা শোকের আচার অনুষ্ঠানে ১৫ জনের পরিবর্তে ৫০ জনের জমায়েত হওয়ার অনুমোদন।
• খেলা চলবে কিন্তু কোনও জমায়েত করা যাবেনা।
• সামাজিক দূরত্ব মেনে হোটেল খুলবে কিন্তু মল, সিনেমা হল, রেস্তরা নয়।
• মাস্ক ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক। সব দোকানে গ্লাভস, স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে হবে।
মুখ্যমন্ত্রী এদিন জনসাধারণকে বলেন, রুজি রোজগারের কথা চিন্তা করে লকডাউনে বেশ কিছু ছাড় দেওয়া হল। কিন্তু জনসাধারণ যেন নিজেরাই নিজেদের যত্ন নেন।
কেন্দ্র নয়, করোনার সংক্রমণের নিরিখে এবার থেকে যে কোনও জায়গাকে রেড, অরেঞ্জ বা গ্রিন জোন হিসেবে চিহ্নিত করতে পারবে রাজ্যই। তবে কোন মাপকাঠির নিরিখে রাজ্যগুলি সেই পদক্ষেপ নেবে, সেজন্য সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন বেঁধে দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। সেইসঙ্গে দেওয়া হয়েছে নির্দিষ্ট অ্যাকশন প্ল্যানও। এই নিয়ে রাজ্যের মুখ্যসচিবকে চিঠি পাঠিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব প্রীতি সুদান। করোনা সংক্রমণ রুখতে কেন্দ্রের পরিকল্পনার বিস্তারিত ব্যাখ্যা করা হয়েছে এই চিঠিতে।
করোনা সংক্রমণের নিরিখে কোনও এলাকাকে রেড, অরেঞ্জ বা গ্রিন জোনে ভাগ করার দায়িত্ব থাকুক রাজ্যের হাতেই। এই দাবি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে রেখেছিলেন একাধিক রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। তা মেনে নিয়ে বিষয়টি রাজ্যগুলির হাতে ছেড়ে দিল কেন্দ্রীয় সরকার। রবিবার এই মর্মে রাজ্যগুলিকে চিঠি পাঠিয়েছি প্রীতি সুদান।
ওই চিঠিতে বলা হয়েছে রাজ্যগুলিই জেলা ও পুরসভাগুলিকে রেড, অরেঞ্জ ও গ্রিন জোন হিসেবে চিহ্নিত করতে পারে। কোথায় রোগ কতটা ছড়িয়েছে, কতজন সংস্পর্শে এসেছেন, তাদের এলাকা এগুলি বিস্তারিত বিশ্লেষণের পরে মহকুমা, ওয়ার্ড বা কোনও এলাকা চিহ্নিত কার হতে পারে।
এক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি মাপকাঠির দিকেও নজর দিতে বলা হয়েছে। কোন এলাকায় পরিস্থিতির উন্নতি বা অনতি ঘটেছে, তা নিয়মিতভাবে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রককে জানাতে বলা হয়েছে। কোন কোন দিকে থেকে বিচার করে কনটেইনমেন্ট জোন চিহ্নিত করা হবে, তা-ও বলা হয়েছে চিঠিতে।
কোনও এলাকাকে কনটেইনমেন্ট জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হলে কী কী বিধিনিষেধ প্রয়োগ করা হবে তার স্পষ্ট গাইডলাইন দেওয়া হয়েছে রাজ্যকে। সেইসঙ্গে কনটেইনমেন্ট জোনের ভিতরে কড়া নজরদারি চালাতে বলা হয়েছে। কীভাবে তা চলবে সেই বিষয়েও নির্দেশিকা জারি করেছে কেন্দ্র। কনটেইনমেন্ট জোনের বাইরে থাকা বাফার জোনেও কীভাবে নজরদারি চালাতে হবে, সেকথা বলা রয়েছে।