করোনাভাইরাস দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে তিক্ত করেছে, যা একটা বিপর্যয় ও আন্তর্জাতিক খেলার মধ্যে যোগসুত্রকে প্রতিষ্ঠিত করছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই সপ্তাহে গণ প্রজাতন্ত্রী চিনের ওপর চাপ বাড়িয়েছে। এর ফলে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও শি জিনপিং এখন বিতর্কে মুখ্য ভূমিকা নিয়েছে। ২০২০-এর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ৬ মাস আগে এই প্রথম ট্রাম্প নভেম্বরের নির্বাচনে তাঁর জয়লাভের সম্ভানার সঙ্গে বেজিংকে যুক্ত করলেন।
তিনি বলেছেন, এই নির্বাচনে তাঁকে হারানোর জন্য চিন যা ইচ্ছা করবে। তার পরেই তিনি বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন আমেরিকা-চিন বাণিজ্য সম্পর্কের ওপর চাপ কমাতে তাঁর বিরোধী ডেমোক্রেট প্রার্থী জো বিডেন জিতুক চিন এটাই চাইছে। আসলে ট্রাম্প খুব ভালো করেই জানেন যে, আমেরিকায় ব্যাপক হারে করোনাভাইরাস সংক্রমণের জন্য দিনের শেষে দায়টা তারই।
রয়টারের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে তিনি নিজের কিছু ধারণা ব্যক্ত করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, এই ভাইরাসের ব্যাপারে তিনি নানা পথ সন্ধান করছেন, যা চিনের ওপর ছাপ ফেলবে। কোনও ব্যাখ্যা না করলেও তিনি বলেছেন, ‘আমি অনেক কিছুই করতে পারি।’ একথা বলে তিনি নিশ্চয় বুঝতে পারছেন যে, তিনি নিজের পায়েই গুলি করেছেন।
সম্প্রতি করোনার ব্যাপাবে সংক্রমণরোধক ইঞ্জেকশন ব্যবহারের কথা বলেও তিনি বিতর্কে জড়িয়েছেন। এই ব্যাপারে ট্রাম্প সারের কাজকর্ম মার্কিন জনগণের জোরালো পর্যালোচনাধীন রয়েছে। ট্রাম্প সংক্রমণরোধক অ্যান্টিডোটের কথা বলার পর ২৭-২৮ এপ্রিল নেওয়া এক জনমত সমীক্ষার ফলাফলে দেখা গিয়েছে ৪০ শতাংশ মার্কিন জনগণ করোনা মোকাবিলায় প্রেসিডেন্টের কাজকর্মকে সমর্থন করেছেন।
করোনা সংক্রমণে আমেরিকায় মৃতের সংখ্যা ৬৫ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এই বিপর্যয়ের জন্য ট্রাম্প চিনকেই দায়ী করেছে। বুধবারই তিনি বলেছেন, করোনাভাইরাস সম্পর্কে অনেক আগেই চিনের বিশ্বকে জানানো উচিত ছিল। চিন কোভিড ১৯ থামাতে পারত এবং আমেরিকা চিনের কাছে ক্ষতিপূরণ চাইবে বলে মন্তব্য করে ট্রাম্প বদলা নেওয়ার একটা জল্পনা কল্পনাও ছড়িয়ে দিয়েছেন।
পরিষ্কার বোঝাই যাচ্ছে আদর্শগত কারণেই চিন তথ্য দেওয়ার ব্যাপারে কার্পণ্য করেছে। চিন প্রথম যে হিসেব দিয়েছিল, পরে তা ৫০ শতাংশ বাড়িয়ে নতুন হিসাব প্রকাশ করা হয়েছে, যা একটি কমিউনিস্ট দেশের গোপনীয়তা রক্ষার রাষ্ট্রীয় নীতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।
আরেকটি ঘটনা হল কোভিড ১৯ সম্পর্কে প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টের হোঁচট খাওয়া। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, তিনি চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং’য়ের সঙ্গে যে বাণিজ্য চুক্তি করেছিলেন তার লক্ষ্য ছিল চিনের সঙ্গে আমেরিকার দীর্ঘদিনের বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনা। কিন্তু করোনার অর্থনৈতিক জেরে এটা ভীষণভাবেই ধাক্কা খাবে।
চিনের প্রতি চোরাগোপ্তা আক্রমণ রিপাবলিকান পার্টির পরিকল্পনাকে ফাঁস করে দিয়েছে। সেই পরিকল্পনায় দলীয় প্রার্থীদের মহামারি নিয়ে বক্তব্য রাখার সময় বেজিংকে আক্রমণের নিশানা করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। দল পুনরায় ক্ষমতায় ফেরার জন্য প্রচারাভিযানের যে কৌশল স্থির করেছে, এটা তারই অঙ্গ।
মোদ্দা কথা হল বিশ্ব এখন একটা বড় বিপদের মধ্যে রয়েছে। ফলে এখন দরকার একটা আন্তর্জাতিক সহযোগিতা যার অভাব প্রতি মুহুর্তে অনুভূত হচ্ছে। করোনার প্রেক্ষিতে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রচারেও এবারে একটা বড় পরিবর্তন আসবে। এই পরিপ্রেক্ষিতে ডেমোক্রেটিক প্রার্থী জো বিডনের মুখে একটা মুচকি হাসি দেখা দেওয়া অস্বাভাবিক নয়।