অব্যাহত পত্ৰযুদ্ধ। ফের চিঠির আদানপ্রদান নবান্ন আর রাজভবনের। এপ্রিলের শেষের দিকে রাজ্যপালের চোদ্দ পাতার চিঠির উত্তর শনিবার তেরো পাতার জবাবি চিঠি লিখছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাতে রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ের ব্যবহৃত ভাষা নিয়ে ঘোর আপত্তি তুলেছেন।
মমতা লিখেছেন, সংবিধান তৈরির পর থেকে একজন সাংবিধানিক প্রধান হিসেবে এই ধরনের ভাষা মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে কেউ ব্যবহার করেননি। তবে এসব দেখে আর রাগ হয় না, দুঃখ হয়। গত ২৩ এবং ২৪ এপ্রিল মুখ্যমন্ত্রীকে দু’টি চিঠি পাঠিয়েছেন রাজ্যপাল।
প্রথম চিঠিটি সংক্ষিপ্ত হলেও দ্বিতীয় চিঠিটি ছিল চোদ্দ পাতার। সেখানে ৩৭’টি পয়েন্টে মুখ্যমন্ত্রীকে সরাসরি আক্রমণ ছিল। বলা হয়েছিল করোনা ঠেকাতে রাজ্য সরকার পুরোপুরি ব্যর্থ। মুখ্যমন্ত্রীর সংখ্যালঘু তোষণের কথারও উল্লেখ ছিল সেই চিঠিতে।
রাজ্যপারে সেই দ্বৈত চিঠির পরে শনিবারের জবাবি চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, মাথার ওপর নানান কাজের বোঝা থাকায় সেই চিঠির উত্তর দিতে দেরি হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী পাল্টা চিঠির চোদ্দটি পয়েন্টের চিঠির ছত্রে ছত্রে ধরা পড়েছে ক্ষোভ।
চিঠিতে কড়া ভাষায় রাজ্যপালের সমালোচনা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেছেন রাজ্যপাল যে ভাষায় তার মন্ত্রীদের এবং প্রশাসনকে আক্রমণ করেছেন, তা কার্যত নজিরবিহীন। রাজ্যপালের ভাষা প্রয়োগ নিয়েও তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন তিনি। এই ভাষা যে অন্যান্য মন্ত্রীর কাছেও অপমানজনক সেকথা চিঠিতে লিখেছেন মমতা।
মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, রাজ্যপালের এই ভাষা ব্যবহার একেবারেই কাম্য নয়। তার কাছে সহযোগিতাই কামনা করি। তবে রাজ্যপালের চিঠি পেয়ে রাগের চেয়েও তার কষ্টই বেশি হয়েছে। কখনও কখনও মজাও পেয়েছি। সেইসঙ্গে মমতা রাজ্যপালকে উদ্দেশ করে লিখেছেন, আপনি দ্বৈত শাসনের স্বপ্ন দেখবেন না। কারণ বাংলার ইতিহাসের ছাত্ররা জানে, ঔপনিবেশিক মানসিকতা নিয়ে ১৭৭০ সালে যে দ্বৈত শাসনব্যবস্থা বাংলায় হয়েছিল তা কতবড় ক্ষতিসাধন করেছিল।
মুখ্যমন্ত্রী চিঠিতে সেই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি না হওয়ার প্রসঙ্গ তুলে রাজ্যপালকে লেখেন, আপনার আচরণ ও বিবৃতি এবং চিঠিপত্র মানুষকে অষ্টাদশ শতাব্দীর দ্বৈত শাসনব্যবস্থাকেই মনে করিয়ে দিচ্ছে।
সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ ও অন্যান্য দৃষ্টান্ত তুলে ধরে এই চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, রাজ্যে প্রশাসনিক ক্ষমতা তাঁর এবং তাঁর সরকারেরই রয়েছে। সেই প্রশাসনিক কাঠামোকে যেন ধ্বংস করার চেষ্ট না করেন রাজ্যপাল।
অন্যদিকে মুখ্যমন্ত্রীর পত্রাঘাত রাজভবনে পৌঁছনোমাত্রই ফের টুইট করে মমতাকে প্রত্যুত্তর দেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। মুখ্যমন্ত্রীর চিঠির কোনও সারবত্তা নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি। পাশাপাশি রাজ্যপাল একথাও জানিয়েছেন আবারও রাজভবন থেকে চিঠি যাবে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে।
যদিও শনিবারের চিঠিতেই মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট করে দিয়েছে, এরপর রাজ্যপালের আর কোনও চিঠিরই উত্তর দেবেন না তিনি। কারণ এটা চিঠি চালাচারি সময় নয়, পরিস্থিতি মোকাবিলার সময়।
তবে এরপরেও শনিবার সন্ধেয় রাজ্যপাল টুইটে হুঁশিয়ারি দিয়ে লিখেছেন, আমি অনেককিছু চেপে রেখেছি। এবার দেখছি সেসব ফাঁস করা অনিবার্য হয়ে উঠছে। রাজ্যপাল ও মুখ্যমন্ত্রীর এই পত্ৰযুদ্ধ করোনা পরিস্থিতি একেবারেই নজিরবিহীন বলে মনে করছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল।