রক্তের নমুনা পরীক্ষা করে দেখা যাচ্ছে কেভিড পজিটিভ। কিন্তু ভাইরাসের উপসর্গের সঙ্গে মিল নেই। শিশুদের মধ্যেই দেখা যাচ্ছে এমন রােগ, জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
করােনার সংক্রমণে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে যে ধরনের উপসর্গ দেখা গেছে, শিশুদের ক্ষেত্রে তা অনেকটাই আলাদা। লন্ডনের ২৫ থেকে ৩০ জন শিশুর মধ্যে এমন রােগ দেখা গেছে বলে জানিয়েছে ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস (এনএইচএস)।
ইংল্যান্ডের পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার সােসাইটির তরফে বিবৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, গত তিন সপ্তাহ ধরে ব্রিটেনের নানা জায়গায় শিশুদের মধ্যে এমন সংক্রামক রােগ দেখা যাচ্ছে। রক্তের নমুনায় কোভিড ১৯ পজিটিভ এলেও সংক্রমণের ধরন ও রােগের উপসর্গ অনেকটাই আলাদা। সারা শরীরে প্রদাহজনিত রােগ হচ্ছে শিশুদের। আইসিইউতে দ্রুত ভর্তি করার প্রয়ােজন পড়ছে।
কী ধরনের উপসর্গ দেখা যাচ্ছে? লন্ডনের শিশুরােগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রবল পেটে ব্যথা শুরু হচ্ছে শিশুদের। অ্যাপেনডিক্স হলে যেমন উপসর্গ দেখা যায় অনেকটা তেমনই দেখা যাচ্ছে। এরপরে পরীক্ষা করিয়ে দেখা যাচ্ছে সারা শরীরে প্রদাহজনিত রােগ হচ্ছে শিশুদের। হার্টে ও অন্যান্য অঙ্গে প্রদাহ হচ্ছে এবং এই জাতীয় সংক্রমণ খুব তাড়াতাড়ি শরীরে ছড়িয়ে পড়ছে।
ব্রিটিশ অ্যাসােসিয়েশন অব ফিজিসিয়ান অব ইন্ডিয়ান অরিজিন (BAPIO)-এর প্রেসিডেন্ট ও ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের সিনিয়র কনসালটান্ট ডাক্তার রমেশ মেহতা বলেছেন, শিশুদের মধ্যে এমন উপসর্গ দেখা যাচ্ছে যাতে প্রথমেই মনে হবে না তারা করােনায় আক্রান্ত। এমন কয়েকটি শিশুকে পর্যবেক্ষণে রেখে দেখা গেছে তাদের রক্তের নমুনায় কোভিড পজিটিভ। অথচ সংক্রমণের ধরন অনেকটাই আলাদা। বড়দের সঙ্গে মিল নেই।
ডাক্তার রমেশের কথায়, এমনও অনুমান করা হচ্ছে শিশুরা যে করােনায় আক্রান্ত হচ্ছে তার ধরুন কিছুটা হলেও আলাদা। অথবা এমনও হতে পারে সার্সকভ-২ এর সঙ্গে অন্য কোনও সংক্রামক জীবাণু মিশে গিয়ে রােগ ছড়াচ্ছে শিশুদের মধ্যে। তবে এইসবই ডাক্তারদের অনুমান, আতঙ্কের এখনই কোনও কারণ নেই বলেই জানিয়েছেন ডাক্তার রমেশ মেহতা।
সার্সকভ-২ ভাইরাসের সংক্রমণে মূলত অ্যাকিউট রেসপিরেটারি সিন্ড্রেমে আক্রান্ত হন রােগী। শুরুতে গবেষকরা বলেছিলেন এই ভাইরাসজনিত রােগের প্রাথমিক উপসর্গ হল তীব্র শ্বাসের সমস্যা, হাঁচি-কাশি, জ্বর, শরীরে তাপমাত্রা হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়া। সংক্রমণ গভীরে ছড়িয়ে পড়লে ফুসফুসের রােগ, সেখান থেকে শরীরের অন্যান্য অঙ্গের কার্যক্ষমতা কমে গিয়ে মৃত্যু।
তবে সম্প্রতি মার্কিন সেন্টার ফর ড্রাগ কন্ট্রোল (সিডিসি) জানিয়েছে, করােনার নতুন কিছু উপসর্গও দেখা যাচ্ছে। যেমন সারা শরীরে কাঁপুনি, পেশীর ব্যথা, মাথাযন্ত্রণা, হঠাৎ করেই মানসিক অবসাদ, ভুল বকা, স্বাদ ও গন্ধ বুঝতে না পারা। সেই সঙ্গেই ত্বকের সমস্যাও দেখা দিচ্ছে।
মার্কিন গবেষকদের একটি রিপাের্ট বলেছে, কেভিড সংক্রমণ হলে শুরুর দিকে পায়ের আঙুল বা গােড়ালিতে লালচে বেগুনি র্যাশ বা জ্বালাপােড়া ঘা দেখা দিতে পারে। শিশু ও কম বয়সীদের মধ্যেই এমন উপসর্গ বেশি দেখা গেছে। এই ঘা এসপ্তাহ মতাে থাকে, তারপরে মিলিয়ে যায়। এমন লক্ষণ দেখা গেলেও সতর্ক হওয়া উচিত বলে মনে করছেন ডাক্তাররা।