• facebook
  • twitter
Saturday, 23 November, 2024

আজ থেকে পরিযায়ী শ্রমিকরা কাজে যোগ দিতে পারবেন : কেন্দ্র

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রদফতর আটকেপড়া পরিযায়ী শ্রমিকদের সংশ্লিষ্ট রাজ্যেই কাজে যোগ দেওয়ার জন্য ছাড় দিয়েছে।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রদফতর আটকেপড়া পরিযায়ী শ্রমিক'দের সংশ্লিষ্ট রাজ্যেই কাজে যোগ দেওয়ার জন্য ছাড় দিয়েছে। (Photo by Arun SANKAR / AFP)

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রদফতর আটকেপড়া পরিযায়ী শ্রমিক’দের সংশ্লিষ্ট রাজ্যেই কাজে যোগ দেওয়ার জন্য ছাড় দিয়েছে। কিন্তু লকডাউন চলাকালীন কোনও অবস্থাতেই আন্তঃরাজ্য গমনাগমনের অনুমতি দেওয়া হবে না। সোমবার থেকেই চালু হচ্ছে কয়েকটি ম্যানুফ্যাকচারিং এবং শিল্প সংস্থা। সেকারণে আটকে পড়া পরিযায়ী শ্রমিক’রা সংশ্লিষ্ট রাজ্যের মধ্যেই যাতায়াত করতে পারবেন।

শ্রমিকদের ভ্রমণের সময় সোশ্যাল ডিসটান্সিং বজায় রেখে যাতায়াতের জন্য বাস ও আহারের বন্দোবস্ত করতে হবে স্থানীয় প্রশাসনকেই বলে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে ৩ মে পর্যন্ত লকডাউনের সময় আন্তঃরাজ্য গমনাগমনের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি থাকছে।

তবে কাজে যোগ দেওয়ার আগে শ্রমিকদের পরীক্ষা করার পরই তাদের সংশ্লিষ্ট কাজের জায়গায় নিয়ে যাওয়া হবে। বাসে ভ্রমণের সময় সোশ্যাল ডিসটান্সিং বজায় রাখতে হবে এবং বাসটিকে স্বাস্থ্যদফতন্ত্রে নির্ধারিত নির্দিষ্ট মান অনুযায়ী জীবাণুমুক্ত করতে হবে।

দেশের বিভিন্ন স্থানে এই মুহূর্তে কুড়ি লাখ পরিযায়ী শ্রমিক আটকে রয়েছেন। পরিযায়ী শ্রমিক’দের কাজে যোগ দেওয়ার আগে তাদের স্থানীয় প্রশাসনের কাছে নথিভুক্তি করাতে হবে এবং তাদের কারিগরী দক্ষতাও যাচাই করা হবে কাজের উপযুক্ততার জন্য।

স্বরাষ্ট্র দফতরের জারি করা ১৫ এপ্রিল তারিখের করোনা মোকাবিলায় নির্দেশাবলি কঠোরভাবে পালন করার কথা বলা হয়েছে। পরিযায়ী শ্রমিকদের নির্মাণ, উৎপাদন, কৃষি এবং এমএনআরইজিএ ক্ষেত্রে কাজে যোগ দিতে অনুমতি দেওয়া হয়েছে ২০ এপ্রিলের পরিবর্তিত নির্দেশাবলি অনুযায়ী। স্থানীয় প্রশাসনকে শ্রমিকদের খাদ্য, পানীয় জল সরবরাহের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বাসে ভ্রমণের সময়ে।

সোমবার থেকে যে সকল ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হচ্ছে সেগুলি হল :
বাণিজ্যিক এবং বেসরকারি সংস্থা, সম্প্রচার, ডিটিএইচ এবং কেবল পরিষেবা সহ মুদ্রণ ও বৈদ্যুতিন মাধ্যম, তথ্য প্রযুক্তি ও তথ্য প্রযুক্তি মাধ্যমে পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থার ৫০ শতাংশ কর্মী, সরকারি কাজের সঙ্গে যুক্ত পরিসংখ্যান এবং কল সেন্টারগুলি, কুরিয়ার পরিষেবা, কোল্ড স্টোরেজ এবং ওয়্যারহাউসিং পরিষেবা বন্দর, বিমানবন্দর, রেলওয়ে স্টেশন, বেসরকারি নিরপত্তা পরিষেবা এবং নাগরিক সুবিধা প্রদানকারী পরিষেবা সংস্থা- অফিস ও বসবাসের এলাকায় পরিচ্ছন্নতা রক্ষণাবেক্ষণের জন্য, হোটেল, হোমস্টে, লজ, মোটেলে থাকার ব্যবস্থা পর্যটকদের যারা লকডাউনে আটকে পড়েছেন, মেডিক্যাল ও জরুরি পরিষেবা প্রদানকারী কর্মী, বিমান ও জাহাজের কর্মী, স্বনিযুক্ত বিদ্যুৎকর্মী, প্লাম্বার, আইটি মেরামত কর্মী, মোটর মেকানিক এবং ছুতোর মিস্ত্রিদের ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হবে।

গ্রামীণ এলাকায় শিল্প, সেজ এবং রফতানিকারী সংস্থা, ওষুধ সহ জরুরি দ্রব্যাদি প্রস্তুতকারী সংস্থা, খাদ্যপ্রক্রিয়াকরণ সংস্থা, আইটি হার্ডওয়্যার নির্মাণকারী সংস্থা, কয়লা ও খনিজ দ্রব্য উৎপাদনকারী সংস্থা, চটকল, তৈল ও গ্যাস সংশোধনকারী সংস্থা, গ্রামাঞ্চলে ইটভাটা, অঙ্গনওয়ারি, জুভেনাইল হোম, প্রতিবন্ধীদের, বৃদ্ধাবাস, মহিলা আবাস, ভবঘুরেদের আবাস প্রভৃতি ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হয়েছে।

এদিকে কেবল কলকাতা শহরেই লকডাউনের ফলে ফুটপাথে হকারদের ব্যবসা বন্ধ থাকার ফলে প্রতিদিন আট হাজার কোটি টাকা করে ক্ষতি হচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞ মহলের পক্ষে মদ্ধ্য করা হয়েছে।

ভারতে এপর্যন্ত ৫০৭ জনের করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে বলে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যদফতরের পক্ষে জানানো হয়েছে। গত চব্বিশ ঘন্টায় নতুন করে আক্রান্তের সংখ্যা ১৩৩৪ এবং মৃত্যু হয়েছে ২৭ জনের। স্বাস্থ্যদফতরের যুগ্মসচিব লব আগরওয়াল জানিয়েছেন, ভারতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে পনেরো হাজারেরও বেশি এবং মৃত্যু হয়েছে ৫০৭ জনের।

তিনি জানান, হটস্পট এলাকাগুলিতে লকডাউন কোনওভাবেই শিথিল করা হবে না। উল্টে নিয়ম আরও কঠোর করার কথা ভাবা হচ্ছে। লকডাউনের ২৬ দিন পেরিয়ে যাওয়ার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক পরিযায়ী শ্রমিকদের সংশ্লিষ্ট রাজ্যেই বাসে ভ্রমণের অনুমতি দিয়েছে শর্ত সাপেক্ষে।

এদিকে দিল্লিতে দেড় বছরের এক শিশুর করোনা সংক্রমণে মৃত্যু হয়েছে এবং ছয় স্বাস্থ্যকর্মীর দেহে সংক্রমণ ধরা পড়েছে। গুজরাত, মধ্যপ্রদেশ, কর্নাটকে নতুন করে সংক্রমণের খবর পাওয়া যাচ্ছে। লকডাউনের সময়ে অনলাইনে লেনদেনকারী সংস্থাগুলিকে ব্যবসা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে। কারণ এগুলি কোনও জরুরি পরিষেবা না দিয়ে কেবল মোবাইল ফোন, রেফ্রিজারেটর, তৈরি জামাপ্যান্ট বিক্রি করছিল। চারদিন তাদের ছাড় দেওয়ার পরই পূর্বের নির্দেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে।

যখন পরিযায়ী শ্রমিকরা খাদ্যের জন্য হাহাকার করছে তখন বিভিন্ন রাজ্য বিগত সাত বছরেও ন্যাশনাল ফুড সিকিউরিটি আইন অনুযায়ী ৪০ লাখ সুবিধাভোগীর নাম নথিভুক্ত করতে পারেনি। এই নথিভুক্তির মাধ্যমেই সমাজের দুস্থ শ্রেণিভুক্ত এবং গরিবদের খাদ্যশস্য ভর্তুকি বা বিনামূল্যে সরবরাহ করা কথা।

পশ্চিমবঙ্গ, অন্ধ্রপ্রদেশ, এবং দিল্লি এখনও প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ আন্না যোজনায় প্রত্যেক এমন ব্যক্তির জন্য বরাদ্দ অতিরিক্ত ৫ কেজি করে খাদ্যশস্য তুলতেই পারেনি। এনএফএসএ অনুযায়ী দেশে ৮১.৩৫ কোটি মানুষের এই সুবিধা পাওয়ার কথা। সেখানে ১৫ এপ্রিল ২০২০ পর্যন্ত সময়ে সকল রাজ্য ও কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলের পক্ষে ৮০.৯৫ কোটি সুবিধাভোগীর নাম নথিভুক্ত করার তথ্য পাঠানো হয়েছে। ৩৯.৭৯ লাখ সুবিধাভোগীকে তালিকাভুক্তই করা হয়নি।

বিপুল সংখ্যাক সম্ভাব্য সুবিধাভোগী তিন টাকা কেজি চাল, দুই টাকা কেজি গম ও এক টাকা কেজি অন্যান্য খাদ্যশস্য সংগ্রহের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন রাজ্যগুলির প্রশাসনিক ব্যর্থতার ফলেই। এর মধ্যে বিহারেই ১৪.৪০ লাখ এমন সম্ভাব্য সুবিধাভোগীকে তালিকার অন্তর্ভুক্তই করা হয়নি।

যে পনেরোটি রাজ্য সুবিধাভোগীদের সংখ্যা যথাযথভাবে নথিভুক্ত করতে পেরেছে সেগুলি হল, পশ্চিমবঙ্গ, অন্ধ্রপ্রদেশ, পাঞ্জাব, ছত্তিশগড়, গোয়া, হরিয়াণা, কর্ণাটক, কেরল, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, মেঘালয়, রাজস্থান, উত্তরাখণ্ড, লাক্ষাদ্বীপ ও লাদাখ।