করোনা আক্রান্তের সংখ্যাতত্ত্বের হিসেব নিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে বিতর্ক অব্যাহত। করোনায় মৃতের সংখ্যা নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক এবং রাজ্য প্রকারের দেওয়া পরিসংখ্যানে কোনও ফারাক নেই। তবে আন্তের সংখ্যা নিয়ে প্রতিদিনই ফারাকটা বেড়ে যাচ্ছে। ওয়েবসাইটে স্বাস্থ্য মন্ত্রকের দেওয়া বুলেটিন অনুযায়ী বুধবার সন্ধে পর্যন্ত যেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ১৬৯, সেখানে রাজ্য সরকার বলছে ১৩২।
বিরোধী শিবির তথা বিজেপি থেকে অভিযোগ করা হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা এবং মৃত্যুর ঘটনা গোপন করা হচ্ছে। যা রাজ্যকে বিপজ্জনক পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। করোনা আক্রান্তের সংখ্যা কম দেখানোয় বহু লোক লকডাউন অমান্য করে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ছে।
এইসব অভিযোগের প্রত্যুত্তরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, করোনায় মৃতের সংখ্যা আমরা বলছি না। এই বিষয়ে একটা অডিট কমিটি গঠন করা হয়েছে। কারও মৃত্যুর সময় কিংবা মৃত্যুর পর করোনা পজেটিভ-এর রিপোর্ট আসছে। আমরা সেগুলো অডিট কমিটির কাছে পাঠাচ্ছি। সেই রিপোর্ট অনুযায়ী মৃতের সংখ্যা বলা আর আক্রান্তের সংখ্যা কেউ কেউ বাড়িয়ে বলছে। ভাবছে এতে বাংলাকে ‘গ্লোরিফাই’ করা যাবে। তবে এটা রাজনীতি করার সময় নয়, সাহায্য করার সময়।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, করোনা আক্রান্ত হলে অনেকেই সুস্থ হয়ে উঠছেন। ওষুধ বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রে কাজ করছে। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে ভেন্টিলেটরেরও প্রয়োজন হচ্ছে না। কিন্তু যাদের ব্রঙ্কো নিউমোনিয়া, টিউবারকিউলোসিস, কিডনির সমস্যা, ডায়াবেটিস বা এই ধরনের কোনও অ্যাকিউট এবং ক্রনিক রোগ আগে থেকে রয়েছে। তারা যদি করোনা আক্রান্ত হয়ে শেষ মুহুর্তে আসেন, তাদের বাঁচানো যাবে কী করে?
তবে করোনা রুখতে লকডাউন নীতি মেনে চলা, সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং বজায় রাখার জন্য ফের আবেদন জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, কিছু কিছু বাজারে অনেক লোককে জড়ো হতে দেখছি। সেই সঙ্গে মমতার কঠোর নির্দেশ ‘মাস্ক ইজ মাস্ট’। এমনকী মাস্ক না পরে রাস্তায় বেরোলে পুলিশ বাড়ি পাঠিয়ে দিতে পারে। মাস্ক না পরলে ব্যবস্থা গ্রহণও করা হবে বলে বার্তা দেন মুখ্যমন্ত্রী।
বুধবার নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে ব্যবসায়িকভাবে তৈরি মাস্ক ছাড়াও, তোয়ালে, গামছা, ওড়না, শাড়ির আঁচলকে কীভাবে মাস্ক হিসেবে কাজে লাগানো যায়, তাও হাতে কলমে দেখিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী।
এদিনের সাংবাদিক সম্মেলনে রাজ্যের মুখ্যসচিব রাজীব সিনহা জানান, রাজ্যে গত ২৪ ঘন্টায় নতুন করে আক্রান্ত ১৭ জন। এই মুহুর্তে রাজ্যে অ্যাক্টিভ করোনা রোগির সংখ্যা ১৩২ জন। রাজ্যে নতুন করে অ্যাক্টিভ করোনায় আক্রান্ত হয়ে কারও মৃত্যু হয়নি, মৃতের সংখ্যা ৭ জনই। করোনা চিকিৎসায় রাজ্যে এখনও পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৪২ জন।
অন্যদিকে কেন্দ্রীয় সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রক বুধবার বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত যে তথ্য দিয়েছে, তাতে বলা হয়েছে পশ্চিমবঙ্গে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ২১৩ জন। সুস্থ হয়েছেন ৩৭ জন। করোনায় মৃত ৭ জন। অর্থাৎ এই মুহুর্তে অ্যাক্টিভ করোনা আক্রান্ত ১৬৯ জন। রাজ্য সরকারের তরফ থেকে অবশ্য বুধবারও সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে করোনা নিয়ে কোনও তথ্য গোপন করা হচ্ছে না।
এখনও পর্যন্ত সরকারি কোয়ারেন্টাইন সেন্টার থেকে ৭৭২৯ জনকে ছাড়া হয়েছে। হোম কোয়ারেন্টাইনে ৫৬,৭৮৩ জনকে রাখা হয়েছিল। তার মধ্যে এখনও ৩৭,৬৯১ জন বাড়িতেই রয়েছেন। মোট টেস্ট হয়েছে ৩৪৭০ জনের।
মুখ্যমন্ত্রী এদিন জানান, আগামী ২০ এপ্রিলের পর সরকারি কোয়ারেন্টাইনে থাকা কিছু কিছু জনকে বাড়িতে ছাড়া হবে। করোনার টেস্ট করার জন্য চার পাঁচটি সংস্থা অনুমতি পেলেও এখনও মালদহ হাসপাতাল কোভিড ১৯ টেস্টের জন্য তৈরি হয়ে উঠতে পারেনি। সেজন্য প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ চলছে। তার মধ্যেও যে পাঁচটি কোভিড ১৯ টেস্টের কেন্দ্র রয়েছে সেখানে কাজ চলছে।