ঘরে আগুন লাগলে প্রতিবেশি শত্রুরাও মিত্র হয়ে ওঠে। করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে রাজনৈতিক দ্বন্দ্বকে দূরে সরিয়ে রাখল তৃণমূল এবং বিজেপি উভয়েই। তাই করোনা মোকাবিলায় পশ্চিমবঙ্গের ভূমিকা সন্তোষজনক বলে প্রশস্তি করল কেন্দ্রীয় সরকার।
করোনা পরিস্থিতি নিয়ে খোঁজখবর নিতে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে শুক্রবার ফোন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। শুধুই তিনিই নয় মুখ্যমন্ত্রীকে ফোন করেছিলেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকর এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও। মমতা চাইলে লকডাউন বিধি অমান্যকারীদের সামলাতে আধাসেনা বাহিনী পাঠানো হবে বলেও আশ্বাস দিয়েছেন শাহ।
করোনা মোকাবিলায় সারা দেশে লকডাউন ঘোষণা করেছে ভারত। করোনা লড়াইয়ে প্রস্তুতি নিয়েছে দেশের অন্যান্য রাজ্যের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গও। এই রাজ্যের লড়াইয়ে মাঠে নেমে নেতৃত্ব দিচ্ছেন মুখমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কখনও হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসার সরঞ্জাম বিলি করছেন। কখনও বাজারে গিয়ে সোস্যাল ডিসট্যান্স বজায় রাখার কৌশল শেখাচ্ছেন। কখনও আবার দুস্থদের কাছে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করছেন নিজের হাতে। মুখ্যমন্ত্রীর এই ভূমিকা নিয়ে রাজ্যের বিজেপি নেতৃত্ব কটাক্ষ করলেও প্রশংসায় পঞ্চমুখ কেন্দ্রীয় সরকারের শীর্ষ নেতৃত্ব।
করোনা মোকাবিলায় প্রত্যেক রাজ্যের জন্য দায়িত্বে রয়েছেন একজন করে ক্যাবিনেট মন্ত্রী। পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বে রয়েছেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকর। করোনা মোকাবিলায় বিভিন্ন রাজ্যের তরফে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, তা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে রিপোর্ট জমা দিচ্ছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা। মূলত কোয়ারেন্টাইনে থাকা জনগণকে রাজ্যের তরফে কী স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে, নিত্য প্রয়োজনীয় জিসিপত্রের যোগান ঠিকমতো দেওয়া হচ্ছে কিনা, সোস্যাল ডিসট্যান্সিং মেনে চলা হচ্ছে কিনা তা নিয়ে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।
করোনা রুখতে পশ্চিমবঙ্গের নেপাল, ভুটান এবং বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলিতে সতর্কতা নিয়ে চিন্তার কারণ রয়েছে কেন্দ্র এবং রাজ্য উভয়েরই। বিশেষ করে প্রতিবেশি বাংলাদেশে লকডাউন ঘোষিত না হওয়ায় এই সময়ে অনুপ্রবেশ আটকানো নিয়ে কেন্দ্রকে যথেষ্ট সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে। বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকর তা নিয়ে আলোচনা করেছেন রাজ্যের সঙ্গেও।
করোনা আবহে কেন্দ্র এবং রাজ্যের মধ্যে রাজনৈতিক দূরত্ব কমে যাওয়ায় ইতিমধ্যেই বুলবুলের ক্ষতিপূরণ বাবদ ১১০০ কোটি টাকা এসে পৌছল কেন্দ্রীয় প্রকারের জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বিল থেকে। এই টাকা দীর্ঘদিন ধরেই কেন্দ্রের কাছে চেয়ে আসছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বর্তমানে করোনা মোকাবিলায় রাজ্যের তরফে কেন্দ্রের কাছে ১৫০০ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে।
তবে কেন্দ্রের তরফে রাজ্যকে কত টাকা সাহায্য করা হবে, তা নিয়ে কিছু জানা যায়নি। তবে রাজ্যের হাসপাতালগুলিতে করোনা কিট পাঠানোর জন্য কেন্দ্রের কাছে দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছে রাজ্য সরকার। প্রধানমন্ত্রী এবং বিদেশমন্ত্রীকে ফোন করলে তাদের কাছে সরাসরি এই আর্জি জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
করোনা নিয়ে আর্থিক সাহায্যের প্রতিশ্রুতি না মিললেও লকডাউন অমান্যকারীদের সামলাতে রাজ্যে আধাসেনা বাহিনী পাঠাতে প্রস্তুত কেন্দ্রীয় সরকারের। অপেক্ষা শুধু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সবুজ সংকেতের।
করোনা মোকাবিলায় গোটা দেশে লকডাউন চললেও সাধারণ মানুষের একাংশ সেই বিধি মানছেন না। পুলিশ প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞাকে বুড়ো আঙুল দেখাচ্ছে। বিভিন্ন রাজ্য থেকেই এই মর্মে রিপোর্ট গিয়েছে স্বরাষ্ট্র দফতরে। যদিও লকডাউনে কলকাতায় গ্রেফতারির সংখ্যা আগের চেয়ে কমেছে কলকাতায়।
তবুও পশ্চিমবঙ্গে লকডাউন সুনিশ্চিত করতে আধাসেনা বাহিনী মোতায়েন করার বিষয়ে শুক্রবার সুপারিশ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফোন করে বলেন মানুষ নিয়ম না মানলে সেনা নামাতে হবে। প্রয়োজন হলে বলবেন, আধাসেনা মোতায়েন করা হবে। দ্বিধা করবেন না।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক হুঁশিয়ারি দিয়েছে, একশো শতাংশ লকডাউন সফল না হলে করোনা তৃতীয় ধাপ তথা গোষ্ঠী সংক্রমণ ঠেকানো যাবে না। মানুষ লকডাউন না মানলে সরকান্ত্রের প্রচেষ্টা বিফলে যাবে। তাই এই সময়ে লকডাউন পুরোপুরি নিশ্চিত করতে প্রয়োজনে সেনা নামিয়ে কারফিউ’এর মতো পরিস্থিতি তৈরি করতে হবে বলে কেন্দ্রীয় সরকারের অভিমত।
এখনও পর্যন্ত এই রাজ্যে ৩১ মার্চ পর্যন্ত লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। এই সময়সীমা আরও বাড়াতে হলে রাজ্যের রফে আরও কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। এই পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী কি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সুপারিশ মেনে নেবেন? আধা সেনা বাহিনী মোতায়েন নিয়ে রাজ্যের ভাবনার কথা জানাবেন মুখ্যমন্ত্রী তথা রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতরের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই।