দুই শর্তে ছয় মাসের জন্য মুক্তি পেয়ে বিএনপি’র চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া আজ বুধবার বিকে সোয়া পাঁটার গুলশানে নিজ বাড়ি ফিরোজায় ফিরেছেন। বিকেল সোয়া চারটায় তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হন। ২৫ মাস পর তিনি আজ মুক্তি পেলেন। দুই শর্ত হচ্ছে তিনি ঢাকায় নিজ বাড়িতে থেকে চিকিৎসা গ্রহন করবেন এবং বিদেশ যেতে পারবেন না।
এটর্নি জেনারেল বলেছেন, যে দুই শর্তে সরকার খালেদা জিয়ার সাজা ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেছে সেই শর্ত ভঙ্গ করলে তা বাতিল হয়ে যাবে।
ছোট ভাই শামীম এস্কান্দর খালেদা জিয়াকে পৌছে দেন বাসভন ফিরোজায়। এ সময় নেতা কর্মীদের বহর ছিল তাঁদের সঙ্গে। খালেদার পরনে ছিল গোলাপি রঙের পোশাক, কালো চশমা। আজ বিকেল সোয়া চারটায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (এিসএমএমইউ) হাসপাতালের প্রিজন সেল থেকে ছাড়া পান খালেদা জিয়া। বেলা দুইটার কিছু পর কারা কর্তৃপক্ষ মুক্তির ছাড়পত্র নিয়ে বিএসএমএমইউতে যায়।
খালেদা জিয়াকে তাঁর ভাই শামীম এস্কান্দার ও তাঁর স্ত্রী কানিজ ফাতেমা এবং ছেলে তারেক রহমানের স্ত্রী জোবাইদা রহমানের বড় বোন শাহিনা জামান খান আনতে যান। বেলা আড়াইটার দিকে তাদের গাড়ি হাসপাতাল চত্বরে ঢোকার পরই কয়েকশ নেতা কর্মী সেখানে জড়ো হন। স্বজনেরা সেখানে পৌছানোর মিনিট দশেক আগে আসেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
গোলাপী রঙের শাড়ি পরিহিত বিএনপি’র চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া বিএসএমএমইউর কেবিল ব্লক থেকে বের হন বিকেল সোয়া চারটায়। তিনি বেরিয়ে আসার পরপরই হাসপাতালের ভেতরেই তাঁর গাড়িকে কেন্দ্র করে নেতা কর্মীদের প্রচন্ড ভিড় জমে করেনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখার যে নির্দেশনা, সে কথা কারও মাথায় ছিল না বলে মনে হয়নি।
খালেদা জিয়া বিএসএমএমইউ থেকে বের হওয়ার পর গাড়ির সঙ্গে নেতা কর্মীদের কেউ কেউ মোটরসাইকেলে এবং একটি বড় অংশ হেঁটে এগোতে থাকে। কারও কারও হাতে ছিল হাতে লেখা প্ল্যাকার্ড। নেতা কর্মীদের ভিড়ের কারণে খালেদা জিয়াকে বহনকারী গাড়ি অত্যন্ত ধীরগতিতে এগোচ্ছিল। এ পরিস্থিতিতে এক পর্যায়ে পুলিশ বিএনপি’র নেতা কর্মীদের লাঠিপেটা শুরু করে।
গতকাল মঙ্গলবার খালেদা জিয়া’কে মুক্তি দেওয়া হবে বলে সরকারের তরফ থেকে ঘোষণা দেওয়ার পরপরই দলে নেতা কর্মীরা বিএসএমএমইউর সামনে যান। আজ দুপুর বারোটায় প্রথম বিএনপিপন্থী চিকিৎসক সংগঠনের সদস্য ও অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের নেতা কর্মীরা আসতে শুরু করেন।
খালেদা জিয়া ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট ও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের দুর্নীতির মামলায় সাজা ভোগ করছেন। শারীরিক নানা সমস্যা নিয়ে তিনি প্রিজন সেলে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তবে বিএসএমএমইউর উপাচার্য কনক কান্তি বড়ুয়া বলেছেন, খালেদা জিয়া তাঁর চিকিৎসার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শ শুনছেন না।
শারীরিক অসুস্থতার কথা তুলে ধরে আইনজীবীরা একাধিকবার খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন করেন। প্রতিবারই তা নাকচ হয়ে যায়। গতকাল আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সংবাদ সম্মেলন করে ছয় মাসের জন্য দন্ড স্থগিত করে খালেদা জিয়া’কে মুক্তির ঘোষণা দেন।
