করোনা রুখতে রাজ্যে লকডাউনের ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার নবান্নে ১১ দলকে ডাকা হয়েছিল সর্বদলীয় বৈঠকে। বৈঠকে করোনা রুখতে রাজনৈতিক রং ভুলে সবাই একযোগে কাজ করবে সেই বার্তাই দেওয়া হয়েছে এদিনের বৈঠক থেকে।
বৈঠকে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র, বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী, কংগ্রেসের তরফে আব্দুল মান্নান, প্রদীপ ভট্টাচার্য, বিজেপি’র পক্ষে জয়প্রকাশ মজুমদার, সায়ন্তন বসু, আরএসপি’র মনোজ বন্দ্যোপাধ্যায়, অশোক ঘোষের মতো নেতারাও উপস্থিত ছিলেন।
এদিনের বৈঠকে কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যের কাছ থেকে ঋণের জন্য যে টাকা প্রতি মাসে নেয়, সেই টাকা তিনমাসের জন্য বন্ধ রাখা হয় সেবিষয়ে কেন্দ্রের কাছে আর্জি জানানো হবে বলে এদিনের সর্বদলীয় বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
লকডাউন অবস্থায় কেউ আইন অমান্য করলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য এদিন বিজেপি’র পক্ষ থেকে দাবি করা হয়। এছাড়াও কালোবাজারি রোখা নিয়েও বৈঠকে বিশদ আলোচনা হয়েছে।
এদিনই কলকাতায় এক করোনা আক্রান্তের মৃত্যু হয়েছে। সেই ব্যক্তির বিদেশ যাত্রার কোনও ইতিহাস ছিল না। এই কথা বাম প্রতিনিধিরা বলার চেষ্টা করলে এর বিরোধিতা করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, এ তথ্য সঠিক নয়। ওই প্রৌঢ় বিদেশে গিয়েছিলেন। বৈঠকে সুজন চক্রবর্তী বলার পর সূর্যকান্ত মিশ্র বলতে যাওয়ার আগে একটা এসএমএস আসে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে। সেই সময় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এইমাত্র আমার কাছে খবর এলো সল্টলেকে দমদমের যে ভদ্রলোক ভর্তি ছিলেন তিনি মারা গিয়েছে।
সুজন চক্রবর্তী মুখ্যমন্ত্রীকে প্রশ্ন করেন, কে মারা গিয়েছেন? তখন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, দমদমের যে পরিবারটা কয়েকদিন আগে ইতালি থেকে ফিরেছিল, ওই পরিবারের যিনি ভর্তি ছিলেন তিনি মারা গিয়েছে।
ইতিমধ্যে প্রশাসনের একাংশের মধ্যে গুঞ্জন ছড়িয়েছে পরিবারের সদস্য ইতালি থেকে ফিরলেও সেকথা স্বীকার করা হয়নি।
এছাড়াও এদিনের বৈঠকে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে আসে। মুখ্যমন্ত্রী এদিন অভিযোগ করেন, কেন্দ্রের তরফে আর্থিক কোনও সাহায্য পাওয়া যায়নি। এই একই সুর শোনা গিয়েছে বিজেপি ছাড়া অন্য রাজনৈতিক দলগুলির নেতাদের বক্তব্যে। খাবারের মজুত ও বিক্রি নিয়ে কালোবাজারি রুখতে সরকারকে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানানো হয়েছে বিরোধী দলগুলির পক্ষ থেকে। সেই সঙ্গে লকডাউনের কারণে যাতে কোনও কর্মীকে কাজ হারাতে না হয়, সেদিকে নজর রাখার জন্য আর্জি জানানো হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে।
এছাড়া দিন আনা দিন খাওয়া মানুষজনের জন্য আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণার দাবি জানানো হয়েছে।
এদিন বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, কিটের অভাব রয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের উচিত পর্যাপ্ত কিট সরাহ করা। বিজেপি নেতা সায়ন্তন বসু সাংবাদিকদের বৈঠকে বলেন, করোনা মোকাবিলায় সবাইকে এক হয়ে কাজ করতে হবে। পশ্চিম মেদিনীপুরে গিয়েছিলাম। সেখানে বেশ কিছু জায়গায় পরিকাঠামোর অভাব রয়েছে। রাজ্য সরকারের কাছে বলা হয়েছে দ্রুত এবিষয়ে পদক্ষেপ নিতে।
এদিনের বৈঠকে জনগণনা প্রসঙ্গও উঠে আসে। এবিষয়ে বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তীকে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন এই কাজ অনেক আগেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।