শরীরের রােগ প্রতিরােধ ক্ষমতা ভেঙে তছনছ করে দিচ্ছে। আক্রান্ত হচ্ছে ফুসফুস, কিডনি। কাজ করছে না অ্যান্টিবায়ােটিক। সেই সঙ্গে তীব্র শ্বাসকষ্ট। উপসর্গে মিল, রােগের লক্ষণেও। করােনা ভাইরাসের সংক্রমণে মৃত্যু হয়েছে যাঁদের, সেই সব রােগীকে পরীক্ষা করে দেখা গেছে অনেকেই সেপসিসের শিকার হয়েছিলেন।
বিশ্বজুড়ে বিজ্ঞানী ও গবেষকদের ধারণা, করােনার ছােবলের আরও একটা ভয়ঙ্কর দিক হল এই সংক্রামক ব্যধি বা সেপসিস। যদিও নিশ্চিত করে এখনও কিছু বলা যায়নি, কারণ সার্স-সিওভি-এখনও বিজ্ঞানীদের ধরাছোঁয়ার বাইরে। তবে করােনার এই স্ট্রেনের আক্রমণের ধরন দেখে গবেষকরা বলছেন, সিওভিডি সংক্রমণের প্রভাবে সেপসিসে আক্রান্ত হচ্ছেন রােগীরা।
সেপসিস কী? সাধারণত ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, মারণ জীবাণুর সংক্রমণে দেহের একাধিক অঙ্গ তার কাজ করার ক্ষমতা হারায়। রক্ত সঞ্চালণ কমে যায়। রক্তের শ্বেতকণিকা মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হয়, ফলে রােগ প্রতিরােধ ক্ষমতা তলানিতে এসে ঠেকে। ফলে একে একে বিকল হতে শুরু করে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। ফুসফুস আক্রান্ত হয়ে শ্বাসের সমস্যা দেখা দেয়, ধীরে ধীরে ঘায়েল হাতে থাকে কিডনি, অন্ত্র, লিভার, এমনকি এর ছাপ পড়তে পারে ত্বকেও। নিউমােনিয়ার উপসর্গ দেখা দেয়, মুত্রনালীতে সংক্রমণ হয়। রক্তচাপ কমে যায়, হার্টরেট বেড়ে যায়। সেপটিক শকের অন্তিম পরিণতি মৃত্যু।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে কোনওভাবে যদি সেপসিসের উপসর্গ দেখা দেয়, তাহলে সেই রোগীকে বাচানাে অসম্ভব হয়ে পড়ে। করোনার ক্ষেত্রে এমন রােগীর সংখ্যা নেহাত কম ছিল না।
ডেঙ্গি, হলুদ জ্বর, ইবােলা, বার্ড ফ্লু, সােয়াইন ফ্লু’এর ক্ষেত্রেও সেপসিসে আক্রান্ত হয়ে রােগী মৃত্যুর সংখ্যা ছিল অনেক। হেমারেজিক ডেঙ্গির ক্ষেত্রে শরীরের নানা স্থান থেকে রক্ত বেরনাে, লিভারের উৎসচক ও শ্বেতকণিকা কমে যাওয়া, মাথায়-গায়ে-হাত-পায়ে প্রচণ্ড ব্যথা, গলা শুকিয়ে আসা, সারা পেটে জল জমে যাওয়া ইত্যাদির উপসর্গও দেখা গিয়েছিল।
করােনার উপসর্গের সঙ্গে কি সেপসিসের মিল আছে? ‘দ্য ল্যানসেট’ নামে একটি জার্নালে সেপসিস নিয়ে একটি প্রতিবেদন বার করেছিলেন বিজ্ঞানীরা। বলা হয়েছিল, ভাইরাসের সংক্রমণে সেপসিস হচ্ছে কিনা সেটা বােঝা যাবে যদি দেখা যায় রক্তচাপ একধাক্কায় নেমে গেছে আনেকটা। সেই সঙ্গে আক্রাসফুস। তীব্র শ্বাসকষ্ট, তলপেটে ভয়ানক ব্যথা। এমনকি রােগীর মানসিক স্থিতিও টলে যেতে পারে।
মূত্রনালীতে সংক্রমণ ধরা পড়ে সেপসিস হলে, বেড়ে যায় হার্টরেট। কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে, বাড়তে থাকে শরীরের তাপমাত্রা। অনেকসময় নিউমােনিয়া ধরা পড়ে। বিকল হতে থাকে কিডনি। করােনা আক্রান্ত রােগীদের বেশিরভাগের মধ্যেই এমন উপসর্গ দেখা গেছে বলে জানিয়েছে গবেষকরা।